ইমরান খান
নিয়ম অনুযায়ী আপনি বলেই সম্বোধন করা উচিত। কিন্তু আমরা তো তুমিতে নেমে এসেছিলাম, নাকি তুমিতে উত্তরণ হয়েছিল আমাদের। সে সম্বোধন মনে রেখেই এই চিঠি ঠিকানাহীন গন্তব্যের দিকে...
প্রিয় ফাহির,
কেমন আছ? হয়তো ভালোই আছ। ভালো থাকার এত তাড়া যার, সে তো ভালোই থাকবে। কিন্তু আমি ভালো নেই, আমরা ভালো নেই। তোমার অভাব যে কতটা মর্মান্তিক, তা তোমাকে লিখে বোঝাতে পারব না। তোমার পরিবার, সহকর্মী, বন্ধুমহল অসম্ভব তুমিহীনতায় ভুগছে। সবার মুখে তোমার স্মৃতিচারণ, আক্ষেপ, অভিমানের ডালি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক জানাচ্ছে, হচ্ছে কোরআন খতম-দোয়া মাহফিল। কিন্তু এত কিছু যাকে নিয়ে, সেই তুমি আজ বহু দূরে।
সহকর্মী ফাহির, অফিসের প্রতি ইঞ্চিতে তোমার অভাববোধ। দুদিন হলো অফিসের পাঞ্চ মেশিনে তোমার আঙুলের ছাপ পড়ে না। শেষ ১১ ডিসেম্বরের পর অনলাইন ডেস্কের কম্পিউটারে ব্যক্তিগত নম্বর দিয়ে লগ ইন-লগ আউট করছ না; বাদামি দরজাটা খুলে ঢুকে পড়ছ না। ডেস্কে তোমার চেয়ারটি ফাঁকা পড়ে আছে। পার্কিংয়ে তোমার মোটরসাইকেলটা দেখি না, ক্যানটিনে তোমায় খুঁজে পাই না; লিফট-সিঁড়ি কোথাও তুমি নেই। অফিসে না পেয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা, মুরাদনগরের বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও তোমার দেখা পাচ্ছি না। সেখানেও বন্ধু-স্বজন-এলাকাবাসী তোমার অভাবে ডুকরে কাঁদছেন; শুধু তোমারই সাড়া নেই। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে, ই-মেইলেও তুমি উত্তর দিচ্ছ না। এত এত লোক তোমাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে; ট্যাগ এক্সেপ্ট পর্যন্ত করছ না। কী হলো তোমার; তুমি কি সত্যিই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলে ভাই!
বন্ধু ফাহির, শেষ বিদায়বেলা তোমার এলাকা, কর্মস্থল, বন্ধুদের অনেকেই ছিলেন। মসজিদের ইমাম, চেয়ারম্যানসহ সবার মুখে তোমার সে কী প্রশংসা! তোমার বাবাও বললেন। বললেন, তোমার বাবা-মা দুজনই তোমার ওপর খুশি; কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। এমন মন্তব্য পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কী আরেকবার ঘরে ফেরা যায় না? পড়াশোনার জন্য ছোটবেলা থেকে বাইরে থাকা মানুষ তুমি। প্রতিদিন সকালে-রাতে বাড়িতে ফোন দেওয়ার অভ্যাসটাও দুদিনের মাঝেই দিব্যি থামিয়ে দিলে, এও মানা যায়? এত লোকের সামনের দিকে এক কোনে অপলক তাকিয়ে থাকা তোমার একমাত্র ভাই কিছুই বললেন না। একেই হয়তো বলে 'ভাষা হারিয়ে ফেলা'। শুনেছি, সবাই চলে যাওয়ার পর তোমার বাবাও তেমন কথা বলছেন না, কাঁদতেও পারছেন না। অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার উদাহরণ দেখতে চাইলে একবার তাঁকে দেখে এসো। তোমার মায়ের অশ্রুতে বান ডেকেছে। আরেকটি মেয়ের (বাগ্দত্তা) আর্তনাদ সবাইকে নির্বাক করে দিলেও শুনেছি তোমার প্রতি তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তবে তোমার রুমমেটের আফসোস-আক্ষেপ: হাসপাতালে নেওয়ার টাইমটা পর্যন্ত দিলে না। অফিসের জন্য ঘুম থেকে তুলে দেওয়া বন্ধুরা এত ডাকাডাকি করলেও তুমি সাড়া দিলে না। এটা কি ঠিক হলো?
চোখের জলের ফাহির, শো মাস্ট গো অন রীতিতে সবই চলছে; অবশ্য চালাতে হচ্ছে। তবে আগের মতো চলছে না। যখন ছিলে তখন যেমন চলত, তেমন চলছে না; থমকে থমকে চলছে। এসবের মাঝেই কোনো এক পাশে হুটহাট কেউ না কেউ হুহু করে কেঁদে উঠছেন-অশ্রু ঝরছে; তোমাকে নিয়ে লিখছেন। কী-বোর্ড থমকে গেলেও চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তোমার হাসিমুখের অভাব চলছে। ও আচ্ছা, তোমার এডিট করা শেষ প্রতিবেদনটি কিন্তু আজকের পত্রিকার অনলাইনে উঠে গেছে। তোমার স্মরণে লেখাগুলোও ধুম করে সর্বোচ্চ পঠিততে উঠে যাচ্ছে। অফিসের ছাদে আজ তোমার স্মরণসভা, তোমার উদ্দেশ্যে দোয়া হয়েছে। সম্পাদক থেকে-দ্বাররক্ষী সবার উপস্থিতিতে। তোমার বন্ধুরাও এসেছিলেন। তোমার বিশ্ববিদ্যালয়, বাড়িতেও দোয়া-মিলাদের আয়োজন হচ্ছে। এসবের উদ্দেশ্য একটাই—তোমার পরকালীন শান্তি। শান্তিতে থেকো ভাই।
দ্রুত চিঠির উত্তর দিও। ও আচ্ছা, উত্তর কি দিতে পারবে? দেবে? হয়তো দেবে না। অবশ্য এ কথা নিশ্চিতই যে দেবে না, দিতে পারবে না। তাও ভুলে যাই যে, তুমি নাই। আর আসবে না। তবে কথা রেখো, ভালো থেকো।
নিয়ম অনুযায়ী আপনি বলেই সম্বোধন করা উচিত। কিন্তু আমরা তো তুমিতে নেমে এসেছিলাম, নাকি তুমিতে উত্তরণ হয়েছিল আমাদের। সে সম্বোধন মনে রেখেই এই চিঠি ঠিকানাহীন গন্তব্যের দিকে...
প্রিয় ফাহির,
কেমন আছ? হয়তো ভালোই আছ। ভালো থাকার এত তাড়া যার, সে তো ভালোই থাকবে। কিন্তু আমি ভালো নেই, আমরা ভালো নেই। তোমার অভাব যে কতটা মর্মান্তিক, তা তোমাকে লিখে বোঝাতে পারব না। তোমার পরিবার, সহকর্মী, বন্ধুমহল অসম্ভব তুমিহীনতায় ভুগছে। সবার মুখে তোমার স্মৃতিচারণ, আক্ষেপ, অভিমানের ডালি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক জানাচ্ছে, হচ্ছে কোরআন খতম-দোয়া মাহফিল। কিন্তু এত কিছু যাকে নিয়ে, সেই তুমি আজ বহু দূরে।
সহকর্মী ফাহির, অফিসের প্রতি ইঞ্চিতে তোমার অভাববোধ। দুদিন হলো অফিসের পাঞ্চ মেশিনে তোমার আঙুলের ছাপ পড়ে না। শেষ ১১ ডিসেম্বরের পর অনলাইন ডেস্কের কম্পিউটারে ব্যক্তিগত নম্বর দিয়ে লগ ইন-লগ আউট করছ না; বাদামি দরজাটা খুলে ঢুকে পড়ছ না। ডেস্কে তোমার চেয়ারটি ফাঁকা পড়ে আছে। পার্কিংয়ে তোমার মোটরসাইকেলটা দেখি না, ক্যানটিনে তোমায় খুঁজে পাই না; লিফট-সিঁড়ি কোথাও তুমি নেই। অফিসে না পেয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা, মুরাদনগরের বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও তোমার দেখা পাচ্ছি না। সেখানেও বন্ধু-স্বজন-এলাকাবাসী তোমার অভাবে ডুকরে কাঁদছেন; শুধু তোমারই সাড়া নেই। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে, ই-মেইলেও তুমি উত্তর দিচ্ছ না। এত এত লোক তোমাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে; ট্যাগ এক্সেপ্ট পর্যন্ত করছ না। কী হলো তোমার; তুমি কি সত্যিই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলে ভাই!
বন্ধু ফাহির, শেষ বিদায়বেলা তোমার এলাকা, কর্মস্থল, বন্ধুদের অনেকেই ছিলেন। মসজিদের ইমাম, চেয়ারম্যানসহ সবার মুখে তোমার সে কী প্রশংসা! তোমার বাবাও বললেন। বললেন, তোমার বাবা-মা দুজনই তোমার ওপর খুশি; কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। এমন মন্তব্য পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কী আরেকবার ঘরে ফেরা যায় না? পড়াশোনার জন্য ছোটবেলা থেকে বাইরে থাকা মানুষ তুমি। প্রতিদিন সকালে-রাতে বাড়িতে ফোন দেওয়ার অভ্যাসটাও দুদিনের মাঝেই দিব্যি থামিয়ে দিলে, এও মানা যায়? এত লোকের সামনের দিকে এক কোনে অপলক তাকিয়ে থাকা তোমার একমাত্র ভাই কিছুই বললেন না। একেই হয়তো বলে 'ভাষা হারিয়ে ফেলা'। শুনেছি, সবাই চলে যাওয়ার পর তোমার বাবাও তেমন কথা বলছেন না, কাঁদতেও পারছেন না। অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার উদাহরণ দেখতে চাইলে একবার তাঁকে দেখে এসো। তোমার মায়ের অশ্রুতে বান ডেকেছে। আরেকটি মেয়ের (বাগ্দত্তা) আর্তনাদ সবাইকে নির্বাক করে দিলেও শুনেছি তোমার প্রতি তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তবে তোমার রুমমেটের আফসোস-আক্ষেপ: হাসপাতালে নেওয়ার টাইমটা পর্যন্ত দিলে না। অফিসের জন্য ঘুম থেকে তুলে দেওয়া বন্ধুরা এত ডাকাডাকি করলেও তুমি সাড়া দিলে না। এটা কি ঠিক হলো?
চোখের জলের ফাহির, শো মাস্ট গো অন রীতিতে সবই চলছে; অবশ্য চালাতে হচ্ছে। তবে আগের মতো চলছে না। যখন ছিলে তখন যেমন চলত, তেমন চলছে না; থমকে থমকে চলছে। এসবের মাঝেই কোনো এক পাশে হুটহাট কেউ না কেউ হুহু করে কেঁদে উঠছেন-অশ্রু ঝরছে; তোমাকে নিয়ে লিখছেন। কী-বোর্ড থমকে গেলেও চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তোমার হাসিমুখের অভাব চলছে। ও আচ্ছা, তোমার এডিট করা শেষ প্রতিবেদনটি কিন্তু আজকের পত্রিকার অনলাইনে উঠে গেছে। তোমার স্মরণে লেখাগুলোও ধুম করে সর্বোচ্চ পঠিততে উঠে যাচ্ছে। অফিসের ছাদে আজ তোমার স্মরণসভা, তোমার উদ্দেশ্যে দোয়া হয়েছে। সম্পাদক থেকে-দ্বাররক্ষী সবার উপস্থিতিতে। তোমার বন্ধুরাও এসেছিলেন। তোমার বিশ্ববিদ্যালয়, বাড়িতেও দোয়া-মিলাদের আয়োজন হচ্ছে। এসবের উদ্দেশ্য একটাই—তোমার পরকালীন শান্তি। শান্তিতে থেকো ভাই।
দ্রুত চিঠির উত্তর দিও। ও আচ্ছা, উত্তর কি দিতে পারবে? দেবে? হয়তো দেবে না। অবশ্য এ কথা নিশ্চিতই যে দেবে না, দিতে পারবে না। তাও ভুলে যাই যে, তুমি নাই। আর আসবে না। তবে কথা রেখো, ভালো থেকো।
ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
৮ ঘণ্টা আগেত্রিশের দশকের রবীন্দ্রকাব্যধারাবিরোধী পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে অন্যতম একজন কবি ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁর জন্ম ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে। তাঁর পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন দার্শনিক। আর স্ত্রী ছিলেন প্রসিদ্ধ গায়িকা রাজেশ্বরী বাসুদেব।
১ দিন আগেসিলভিয়া প্লাথ ছিলেন একজন মার্কিন কবি, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি নারীবাদী কবি হিসেবেও পরিচিত। পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এবং নারীর পরিচয়-সংকট নিয়ে তিনি তাঁর কবিতায় সাজিয়েছেন স্পষ্টভাবে।
৪ দিন আগেবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি কৌতুকমিশ্রিত গল্পের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। নামের মিল থাকলেও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর তিনি কিন্তু আলাদা ব্যক্তি।
৭ দিন আগে