জাতীয়তাবোধ

আবদুল করিম
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৩০

ধনী ছিলেন না তিনি। ছিল না পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু প্রথম জীবন থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি ছিল আকর্ষণ। এ সময় তিনি বাংলা পুঁথি সংগ্রহ করতে শুরু করেছিলেন। তাঁর সংগৃহীত পুঁথির বেশির ভাগই মুসলমান কবিদের লেখা। সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রয়েছে। হিন্দু কবিদের লেখা পুঁথিগুলো আছে বরেন্দ্র জাদুঘরে।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হলো ভাষা আন্দোলন। এর কিছুকাল পরে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হলো পূর্ব-পাক সাংস্কৃতিক সম্মেলন। সেই সম্মেলনে মূল সভাপতির অভিভাষণটি ছিল আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের। তিনি তখন অতিশয় বৃদ্ধ।

ভাষণটি পড়লে প্রথমেই মনে হবে, বিনয়ই তাঁকে বড় করেছে। নবীনদের বিদ্যা-বুদ্ধির প্রশংসা করেছেন, স্বীকার করেছেন, সে রকম বিদ্যা-বুদ্ধি তাঁর নেই। কিন্তু আছে অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাই যদি নবীনদের কাজে লাগে, তাহলে তিনি স্বস্তি বোধ করবেন।

সেই ভাষণে তিনি ইউরোপীয় চিন্তক-রাজনীতিবিদদের প্রসঙ্গ তুলে এনে বলেছিলেন, ‘মানুষ চিরকাল পুরাতনকে বর্জন করিয়া নতুন কিছু অবলম্বন করিবার জন্য ব্যগ্র থাকিবে। ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বরাবর বিবর্তিত হইতে থাকিবে।’

যৌবনকালে তিনি হিন্দু-জাগরণের ফল দেখেছেন, এর বেশ কিছুকাল পরে মুসলমান জাগরণও দেখেছেন। গভীরভাবে ভেবে বলেছেন, একদিকে ধর্মবোধ, স্বাতন্ত্র্য-সাধনা, অন্যদিকে জাতীয়তাবোধের সমন্বয়-সাধনা। এই দুই ধারায় আমাদের সাধনা চলেছে।

একটি অসাধারণ কথা বলেছিলেন তিনি। ইরানে যখন ইসলামের পত্তন হলো, তখন আরবরা সাম্রাজ্যবাদীদের মতোই ইরানের ভাষা নিয়ে টানাটানি শুরু করল। তার প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেল, ইরানের শ্রেষ্ঠ কবি ফেরদৌসী ইসলাম ধর্মের কোনো গাথা রচনা করলেন না। তিনি রচনা করলেন ইরানি নৃপতিদের গাথা, যাঁরা কেউ মুসলমান ছিলেন না। জাতীয়তাবোধের এই দৃষ্টান্ত দেওয়ার সময় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের বয়স ছিল বিরাশি। এর পরের বছর ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

সূত্র: আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, অভিভাষণ, বাংলাদেশ: বাঙালী আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, পৃষ্ঠা ৩৫-৪০ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত