বোকামি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ০৬: ২০
আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, ১০: ৩৩

নিজের নির্বুদ্ধিতার গল্প করে আনন্দ পান আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। জামালপুরে একদিনের একটি ঘটনা। তাঁর বয়স তখন আট। ব্রহ্মপুত্র নদের পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন তিনি। সঙ্গে ছিল বাড়িতে কাজে সাহায্য করত যে ষোলো-সতেরো বছর বয়সী ছেলে, সেই জাভেদ। আগস্ট মাসের ভরা নদীর দিকে তাকিয়ে একটা জিনিস দেখে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ খুবই অবাক হলেন। নদীর মাঝ বরাবর লাইন ধরা অনেকগুলো বাঁশের লম্বা মাথা জেগে আছে। তীব্র স্রোতের মধ্যে সেগুলো পাগলের মতো নড়াচড়া করছে। তখনো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জানতেন না, এগুলো জেলেদের কারবার। জেলেরা তা পুঁতে রেখেছেন। তাঁর মনে হলো, এগুলো কি নদীর তলেই লাইন ধরে জন্মেছে? জাভেদকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এভাবে নড়ছে, এগুলো কী?’

জাভেদ বিরক্ত হয়ে জবাব দিল, ‘ঘোড়ার ডিম।’

তখন পর্যন্ত ঘোড়ার ডিম কেমন হয়, সে-সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের (এখনো নেই)। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করে ফেললেন কথাটা। এক অলীক রহস্য নিয়ে হাজির হলো ঘোড়ার ডিমগুলো! পরের তিন-চার বছর পর্যন্ত তিনি সত্যিই বিশ্বাস করতেন, ব্রহ্মপুত্র নদে মাথা উঁচিয়ে থাকা বাঁশগুলো ঘোড়ার ডিমই ছিল।

পাবনায় আরও বড় এক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তিনি। একদিন তাঁর আব্বা পাঁচ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বাড়ির পেছনের গেটের জন্য একটা বড়সড় তালা কিনে আনো।’

বাজারে বিভিন্ন দোকানে তালা কিনতে গিয়ে তিনি লক্ষ করলেন, সবাই তালার সঙ্গে এক জোড়া চাবিও গছিয়ে দিতে চাইছে। সন্দেহ হলো, তালার সঙ্গে বেশি পয়সার লোভে চাবি গছিয়ে দিতে চাইছে দোকানিরা। চাবিও যে তালার সঙ্গে দেওয়া হয়, সেটা তাঁর জানা ছিল না। তালা না কিনে তিনি আব্বার কাছে এসে বললেন, ‘দোকানিরা তালার সঙ্গে চাবিও গছিয়ে দিতে চাইছে। সেগুলোও আনব?’

আব্বা রাগে স্তব্ধ আর বাক্যহীন হয়ে গেলেন।

সূত্র: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কিশোরসমগ্র, পৃষ্ঠা ৮০-৮১

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত