বাঁধ ভেঙে দাও

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৫৪

সিটি কলেজে পড়তেন যখন, তখন দেবব্রত বিশ্বাসের একজন বন্ধু ছিলেন সুধীন্দ্র দত্ত নামে। সুধীন একসময় তাঁর কলকাতার বন্ধুদের নিয়ে ঠিক করলেন রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’ নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন। ১৯৪৪ সালের সেই সময়টিতে ঠিক হলো নয় রাত্রি ধরে কলকাতার তিনটি প্রেক্ষাগৃহে নাটকটি মঞ্চস্থ করা হবে। সুধীন এলেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। বললেন, ‘গান গেয়ে দিতে হবে।’

রাজি না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। রাজপুত্রের কণ্ঠে যে গানগুলো আছে, সেগুলোই গাইতে হবে দেবব্রতকে।

সেই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সরোজরঞ্জন চৌধুরী, সাগরময় ঘোষ, সুধীন্দ্র দত্ত, মঞ্জুলা দত্ত, মঞ্জু সেন, বাণী বোসেরা ছিলেন। নৃত্য পরিচালনা করেছিলেন দক্ষিণের কেলু নায়ার। সংগীত পরিচালক ছিলেন শান্তিদেব ঘোষ। গান করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজশ্বরী দত্ত, সন্তোষ সেনগুপ্ত, আব্দুল আহাদ, সুধীন চ্যাটার্জি, আব্দুল লতিফ প্রমুখ।

তাসের দেশের শেষ গানটি ছিল ‘ভাঙো, বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, ভাঙো’। দু-তিন রাত অভিনয় হয়ে যাওয়ার পর পরিচালক মহাশয় এ গানটি গাইতে নির্দেশ দিলেন দেবব্রত বিশ্বাসকে। দেবব্রত জিজ্ঞেস করলেন, ‘কীভাবে গাইব? উইথ প্লেজার নাকি উইদাউট প্লেজার?’

পরিচালক বললেন, ‘উইথ প্লেজার।’
আগেকার দিনে গানটি গাওয়া হতো খুবই পেলব ভঙ্গিতে। দেবব্রত তা পাল্টে দিলেন। গণনাট্য সংঘের অনুষ্ঠানে যেভাবে গাইতেন, এবার সেভাবেই ভরাট গলায় দ্রুতলয়ে গাইলেন গানটি। দক্ষিণ ভারতীয় নৃত্যশিল্পী কেলু নায়ার প্রাণের আনন্দে স্টেজজুড়ে নেচে নেচে বেড়াচ্ছিলেন, কিন্তু অন্যরা কেউ সুবিধা করে উঠতে পারছিল না।

গান শেষ হলো। যবনিকা পড়ল। 
এবং তারপর ওইভাবে কেন গানটি গাইলেন, তা নিয়ে ভর্ৎসনা করা হলো দেবব্রত বিশ্বাসকে। 
দেবব্রত বললেন, ‘আমাকে তো উইথ প্লেজার গাইতে বলা হয়েছিল!’ 
বুঝতে অসুবিধা হয় না, এরপর আর গানটি তাঁকে দিয়ে গাওয়ানো হয়নি। 

সূত্র: দেবব্রত বিশ্বাস, ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সংগীত, পৃষ্ঠা ৬০-৬১

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত