শিপ্ত বড়ুয়া

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাক নাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি বুদ্ধত্ব ও বোধি জ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
‘বুদ্ধ’ শব্দের অর্থ জ্ঞানী বা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সাধারণত ‘তথাগত’ বলে আখ্যায়িত করতেন এবং শ্রদ্ধা করে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ‘ভগবা’ বলে সম্বোধন করতেন। অন্যদের কাছে গৌতম কিংবা শাক্যমুনি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন বুদ্ধ।
গৌতম বুদ্ধ যদিও রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার পরও রাজদরবারের বাইরের দুঃখময় পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহ জন্মেছিল। গৌতমকে ছোটকাল থেকে রাজকীয়ভাবে লালন-পালন করেছিল তাঁর পরিবার। তা ছাড়া তাঁর পরিবার সব দিক থেকেই ছিল পরিমিত ও অমলিন। তাঁর উপস্থিতি ছিল সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠ উপহার।
আর গৌতম সেই রাজপরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার ছিলেন। উপযুক্ত, উদ্দীপক, বিশ্বাসী ও মহিমান্বিত ছিলেন তিনি। গৌতম ১৬ বছর বয়সে তাঁর মামাতো বোন যশোধারাকে বিয়ে করেছিলেন। পরে রাহুল নামে তাঁদের এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। যশোধারা ছিলেন ঐশ্বর্যশালী, সব সময় প্রফুল্ল, লাবণ্যময়ী ও মর্যাদাপূর্ণ। রাজপরিবার, সুন্দর স্ত্রী-পুত্র থাকা সত্ত্বেও গৌতমের মনে হয় তাঁর অন্তর বিলাসিতার কাছে আটকা পড়েছে। মনে হলো তিনি যেন সোনার খাঁচায় বন্দী এক পাখি।
হঠাৎ একদিন রাজ্য ভ্রমণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গৌতম। রাজ্য ভ্রমণে বের হয়ে চার দিনে চারটি ভিন্ন দৃশ্য দেখেন তিনি। প্রথম দিনের ভ্রমণে তিনি একজন বৃদ্ধকে দেখেন, দ্বিতীয় দিনে এক রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, তৃতীয় দিন মরদেহ এবং শেষ দিনে একজন নির্জনবাসী সন্ন্যাসীকে দেখেন। দিনের পর দিন এসব দৃশ্য দেখার পর গৌতমের চিন্তা আসে, ‘জীবন কি তাহলে জন্ম থেকে মৃত্যুর মাঝে একটি ছোট অধ্যায় মাত্র?’ নিজেকে প্রশ্ন করলেন গৌতম—জীবনের শেষ গন্তব্য কোথায়; যেখানে জন্ম কিংবা মৃত্যু নেই?
সিদ্ধার্থ ভবজীবনের তৃষ্ণা ত্যাগ করেছিলেন। স্থির হয়েছিলেন রাজ্য ভ্রমণের শেষ দিনে দেখা সন্ন্যাসীজীবনে। তিনি গভীরভাবে চিন্তা করলেন। সেই সময়ের ভাবনা ছিল গৌতমের গৃহত্যাগের প্রথম অধ্যায়ের সূত্রপাত।
সর্বজনীন দুঃখমুক্তির উপায় জানতে গৌতম দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন এবং অবশেষে গৃহত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ২৯ বছর বয়সে এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থার স্ত্রী যশোধারা ও পুত্র রাহুলকে নীরব বিদায় জানিয়ে ব্যক্তিগত ঘোড়া অশ্বকন্থকের পিঠে চড়ে গভীর জঙ্গলের দিকে রওনা হলেন। ইতিহাসের পাতায় গৌতমের গৃহত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। এক রাজপরিবারের সন্তান ক্ষমতা, আনন্দ, রাজকীয় জীবন, ধন-সম্পদের মালিকানা ছেড়ে নানা অসুবিধা, অনিশ্চয়তা নিয়ে সন্ন্যাসী হিসেবে বিচরণ শুরু করলেন। গৃহত্যাগের সময় শুধু গেরুয়া রঙের একটি পোশাক ছিল গৌতমের শরীরে, যা দিয়ে প্রবল রোদ, বৃষ্টি, শীত ও বাতাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতেন তিনি। বাস করতে শুরু করলেন পাহাড়ের গুহায় ও জঙ্গলে।
গৌতম তাঁর পূর্ব অবস্থান, সম্পদ, নাম-যশ এবং ক্ষমতা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করলেন। আর নিজের জীবনকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করলেন। এসব তাঁকে দুঃখমুক্তির পথ অনুসন্ধানে পরিচালিত করে, যা আগে কেউ খোঁজ করেও পায়নি। দীর্ঘ ছয় বছরের কঠোর সাধনা তাঁর জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গৌতম সেই সময়ের উচ্চতর লেখাপড়া করেছিলেন। এই সময়ে মুক্তির পথের আশায় বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষকের কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষাও তিনি নিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন এভাবে অধ্যয়নের পরও তিনি কোনো মুক্তির পথ না দেখে একদিন সন্ন্যাসীদের একটি দলে যোগ দেন। তাঁদের ধ্যানরীতি অনুসরণ করেন তিনি। গৌতম প্রায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে, এভাবে বুদ্ধত্ব লাভ বা দুঃখমুক্তি হতে পারে। গৌতম প্রচুর ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। এমনকি তপস্যাতেও অন্যান্য তপস্বীকে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ উপবাস করতে গিয়ে তিনি যখন দেখলেন, তাঁর শরীরের চামড়া শুকিয়ে গেছে, পেট ও শিরদাঁড়া এক হয়ে গেছে, তখন থেকে অল্প অল্প খেয়ে ধ্যান-সাধনা শুরু করেন তিনি।
গৌতম এমন কঠোরভাবে ধ্যান করেছিলেন, যা এর আগে কেউ করেনি। একসময় এমন ধ্যান-সাধনা করতে থাকলে মারা যেতে পারেন বলে উপলব্ধি এল তাঁর। এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে গৌতম গয়ার বোধীবৃক্ষ বা অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে ধ্যানে বসলেন এবং কঠোর ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়লেন। সে সময় তিনি মহাবিশ্বের নানা প্রশ্ন এবং মানবজীবন ও প্রকৃতির দুঃখমুক্তির সন্ধানে তাঁর মন ব্রতী হলো।
অবশেষে ৩৫ বছর বয়সে গৌতম একজন আলোকিত মানবরূপে বুদ্ধত্ব লাভ করেন এবং হয়ে ওঠেন বুদ্ধ। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতের অনির্দিষ্ট পথে হেঁটেছেন এবং তাঁর সাধনায় প্রাপ্ত জ্ঞান ও ধর্ম মানুষের মাঝে বিলি করেছেন, যাতে সাধারণ মানুষও চর্চার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে দুঃখহীন ও উন্নত করতে পারে। পরবর্তী সময়ে যাঁরা বুদ্ধের দেখানো পথ ধরে সন্ন্যাসী হয়েছেন, তাঁদের জন্য তিনি কিছু বিধি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখনকার বর্ণপ্রথা, নারীর অধিকার, ধর্মীয় চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার প্রসারের দ্বার উন্মোচন করার জন্য এবং সমস্ত মানবজাতিকে দুঃখ থেকে মুক্তির পথ দেখাতে তিনি বিচরণ করেছেন নানা জায়গায়। জীবনের সবটুকু সময় ধনী-গরিব উভয়ের কাছেই ব্যয় করেছেন।
এমনকি গৌতম বুদ্ধ আঙুলিমালের মতো পাপী থেকে শুরু করে সেই সময়ে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত আম্রপালীর জীবনেও এনে দিয়েছিলেন নতুন সম্ভাবনা; তাঁদের জীবনকে করেছেন উন্নত। মহামতি গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান ও বুদ্ধিদীপ্ততার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রতিটি সমস্যার বিষয় নিয়ে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবং এসব সমস্যার উৎপত্তি, কারণ ও পুনরায় ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রশ্ন-উত্তরে গৌতম বুদ্ধকে কেউ পরাস্ত করতে পারেননি আজ অবধি। গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রথম মনোজগৎ ও জীবনের নানা দিকের সর্বাধিক বিশ্লেষণ হাজির করেন। তিনি একজন অতুলনীয় শিক্ষক, যিনি বর্তমানেও অনন্য। ইতিহাসের পাতায় প্রথম মানবজাতিকে নিজের জীবন নিয়ে, দুঃখ নিয়ে আলোচনার উপায় বের করে দিয়েছিলেন, মানবজাতির মূল্য উত্থাপন করেছিলেন এবং নিজের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ দেখিয়েছিলেন যে, মানুষ নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টায় জ্ঞান ও মুক্তির সর্বোচ্চ স্তরে পোঁছাতে পারে।
এত জ্ঞান এবং একজন রাজবংশের উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করেননি। শ্রেণি ও বর্ণের পার্থক্যকে তিনি কোনো পাত্তা দিতেন না। তাঁর মতে, সবাই সমান। ধনী-গরিব কোনো পরিচয়ই তাঁর কাছে মুখ্য ছিল না। অনায়াসে সবাইকে তিনি দীক্ষিত করেছিলেন।
এমনকি গৌতম বুদ্ধের কাছে যখন ভিন্ন বর্ণের কিংবা গরিব কেউ আসতেন, তাঁদের অনেক বেশি সম্মান করা হতো। তাঁরা মহৎ সত্তার জীবনে উন্নীত হওয়ার পরামর্শ পেতেন। মহামতি গৌতম বুদ্ধ সবার প্রতি ছিলেন খুবই সহানুভূতিশীল (করুণা) এবং জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, আলাদাভাবে একেক ব্যক্তির জ্ঞানের স্তর তিনি বুঝতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী কাকে কীভাবে দুঃখমুক্তির পথ দেখানো যায়, তা তিনি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছিলেন।
শুধু একজন আলাদা ব্যক্তিকে জ্ঞানের পথ এবং দীক্ষা দেওয়ার জন্য বুদ্ধ অনেক দূরের পথ হেঁটে যেতেন। তাঁর শিষ্যদের প্রতি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন স্নেহশীল। সব সময় তাঁদের পরিবর্তন ও উন্নতির অবস্থানবিষয়ক খোঁজ-খবর নিতেন। যখন তিনি বিহারে থাকতেন, প্রতিদিন অসুস্থ শিষ্যদের দেখতে যেতেন। অসুস্থ শিষ্যদের প্রতি মমত্ববোধ ও পরামর্শ হিসেবে তিনি বলতেন, ‘তোমরা যে অসুস্থ হয়েছ, তার মানে তোমরা আমার খুব কাছাকাছি এসেছ।’
শিষ্যদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধ সব সময় তাঁদের মধ্যে নিয়ম ও আদেশ জারি রাখতেন। সেই সময়ের প্রাসন্ধি নামে এক রাজা বুঝতে পারতেন না, বুদ্ধ তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যদের কীভাবে সহজেই একসঙ্গে রাখতেন, মানিয়ে রাখতেন এবং সুন্দরভাবে নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখতেন। প্রাসন্ধি যখন রাজা ছিলেন, তাঁর ক্ষমতা ছিল এবং তখন প্রজাদের নানা শাস্তি দেওয়ার পরও তিনি তাঁদের মানিয়ে রাখতে পারতেন না। এ নিয়ে তিনি অবাক হয়ে পড়েছিলেন।
অনেক অলৌকিক ক্ষমতা বুদ্ধের ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে তিনি কখনোই তেমন ভাবেননি। তাঁর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক ক্ষমতা ছিল সত্যকে এবং মানবজীবনের দুঃখকে ব্যাখ্যা করার এবং একজন সাধারণ মানুষকে তা উপলব্ধি করানোর। নানা চিন্তা ও জীবনের দুঃখমুক্তির শেকল থেকে মানবজাতিকে কীভাবে মুক্ত করা যায়, তা নিয়ে তিনি যুক্তিগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।
মানবজাতির দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় বলেছেন গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধ কখনোই দাবি করেননি যে তিনি বৈশ্বিক পরিস্থিতি, সর্বজনীন নানা ঘটনা, জীবনবিধি আমাদের দিয়েছেন, যাকে আমরা ধর্ম বলে দাবি করি। তিনি নিজেকে শুধু ‘লোকাবিধো’ অথবা ‘বিশ্বজগতের জ্ঞানী’ হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন। সর্বজনীন বিশ্বাস ও ধর্মীয় ব্যবস্থার কাছে তখন থেকে মহামতি গৌতম বুদ্ধ কখনোই অনুগত বন্দী হিসেবে থাকেননি।
তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, ধর্ম সৃষ্টি থেকে শুরু করে বিশ্বজগতের নানা কাজ কখনোই সময় মেনে হতে পারে না। বরং এসব নিরবধি এবং এসবের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। এই সবকিছুর গতিবিধি পরম অর্থে স্বাধীন। মহাবিশ্বের বিদ্যমান প্রতিটি শর্তযুক্ত ক্রিয়া তার নিজস্ব ধর্মের ক্রিয়ার সপক্ষে কাজ করে। বুদ্ধ যা করেছিলেন (তার পূর্বোক্ত বুদ্ধদের ন্যায়), তা হলো নিশ্চিত জ্ঞানকে অনুধাবন করা এবং মানব মুক্তির পথ পুনরুদ্ধার করে মানবজাতির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
এসব জ্ঞান অর্জনের পর অন্তহীন জন্মচক্রে আবর্তনের প্রক্রিয়া থেকে কীভাবে চূড়ান্তভাবে নিজেকে মুক্ত করা যায়, সে উপায়গুলো খুঁজে পেয়েছিলেন বুদ্ধ। তাঁর ধর্ম প্রসারের ৪৫ বছর পর, গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশিনারাতে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু, অনুসারী এবং মানবমুক্তির অমূল্য সব নির্দেশনা রেখে যান তিনি, যা বুদ্ধের ত্যাগ এবং অসীম ভালোবাসার শক্তি এখনো বিরাজমান।
ইংরেজ লেখক এইচ জি ওয়েলস বলেছেন, ‘আপনি বুদ্ধকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ, সহজ, ধর্মপ্রাণ, একাকী হিসেবে দেখতে পাবেন, যিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য লড়েছেন একজন মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে। আর এসব শুধু শ্রুতি বা শোনা কথা নয়। তিনি মানবজাতির আচার-আচরণ নিয়ে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। বেশির ভাগ আধুনিক উন্নত চিন্তা ও ধারণা বুদ্ধের সেই সময়ের ধারণার সঙ্গে এখনো সংগতিপূর্ণ। স্বার্থপরতাই মানবজীবনের সব দুর্দশা-কষ্ট এবং অতৃপ্তি ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়। কোনো মানুষ নির্মল হয়ে ওঠার আগে তাকে নিজের ইন্দ্রিয় বা নিজের জন্য বেঁচে থাকতে হবে। তারপর তিনি বিশালতায় মিশে যেতে পারেন। বুদ্ধদর্শন ভিন্ন এক অধ্যায়। কিছু কিছু মাধ্যমে তিনি আমাদের খুব কাছে ছিলেন; আমাদের প্রয়োজনীয়তার কাছে। আমাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তায় গৌতম বুদ্ধের যথেষ্ট রসদ ছিল এবং তা খ্রিষ্টধর্ম আসার পরও এবং ব্যক্তিগত অনৈতিকতার প্রশ্নেও।
‘হোয়াট বুড্ডিস্ট বিলিভ’ বইয়ে ভেন কে শ্রী ধম্মানন্দের লেখা ‘লাইফ অ্যান্ড নেচার অব বুদ্ধ’ প্রবন্ধের ইংরেজি থেকে অনুবাদ

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাক নাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি বুদ্ধত্ব ও বোধি জ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
‘বুদ্ধ’ শব্দের অর্থ জ্ঞানী বা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সাধারণত ‘তথাগত’ বলে আখ্যায়িত করতেন এবং শ্রদ্ধা করে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ‘ভগবা’ বলে সম্বোধন করতেন। অন্যদের কাছে গৌতম কিংবা শাক্যমুনি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন বুদ্ধ।
গৌতম বুদ্ধ যদিও রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার পরও রাজদরবারের বাইরের দুঃখময় পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহ জন্মেছিল। গৌতমকে ছোটকাল থেকে রাজকীয়ভাবে লালন-পালন করেছিল তাঁর পরিবার। তা ছাড়া তাঁর পরিবার সব দিক থেকেই ছিল পরিমিত ও অমলিন। তাঁর উপস্থিতি ছিল সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠ উপহার।
আর গৌতম সেই রাজপরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার ছিলেন। উপযুক্ত, উদ্দীপক, বিশ্বাসী ও মহিমান্বিত ছিলেন তিনি। গৌতম ১৬ বছর বয়সে তাঁর মামাতো বোন যশোধারাকে বিয়ে করেছিলেন। পরে রাহুল নামে তাঁদের এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। যশোধারা ছিলেন ঐশ্বর্যশালী, সব সময় প্রফুল্ল, লাবণ্যময়ী ও মর্যাদাপূর্ণ। রাজপরিবার, সুন্দর স্ত্রী-পুত্র থাকা সত্ত্বেও গৌতমের মনে হয় তাঁর অন্তর বিলাসিতার কাছে আটকা পড়েছে। মনে হলো তিনি যেন সোনার খাঁচায় বন্দী এক পাখি।
হঠাৎ একদিন রাজ্য ভ্রমণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গৌতম। রাজ্য ভ্রমণে বের হয়ে চার দিনে চারটি ভিন্ন দৃশ্য দেখেন তিনি। প্রথম দিনের ভ্রমণে তিনি একজন বৃদ্ধকে দেখেন, দ্বিতীয় দিনে এক রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, তৃতীয় দিন মরদেহ এবং শেষ দিনে একজন নির্জনবাসী সন্ন্যাসীকে দেখেন। দিনের পর দিন এসব দৃশ্য দেখার পর গৌতমের চিন্তা আসে, ‘জীবন কি তাহলে জন্ম থেকে মৃত্যুর মাঝে একটি ছোট অধ্যায় মাত্র?’ নিজেকে প্রশ্ন করলেন গৌতম—জীবনের শেষ গন্তব্য কোথায়; যেখানে জন্ম কিংবা মৃত্যু নেই?
সিদ্ধার্থ ভবজীবনের তৃষ্ণা ত্যাগ করেছিলেন। স্থির হয়েছিলেন রাজ্য ভ্রমণের শেষ দিনে দেখা সন্ন্যাসীজীবনে। তিনি গভীরভাবে চিন্তা করলেন। সেই সময়ের ভাবনা ছিল গৌতমের গৃহত্যাগের প্রথম অধ্যায়ের সূত্রপাত।
সর্বজনীন দুঃখমুক্তির উপায় জানতে গৌতম দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন এবং অবশেষে গৃহত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ২৯ বছর বয়সে এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থার স্ত্রী যশোধারা ও পুত্র রাহুলকে নীরব বিদায় জানিয়ে ব্যক্তিগত ঘোড়া অশ্বকন্থকের পিঠে চড়ে গভীর জঙ্গলের দিকে রওনা হলেন। ইতিহাসের পাতায় গৌতমের গৃহত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। এক রাজপরিবারের সন্তান ক্ষমতা, আনন্দ, রাজকীয় জীবন, ধন-সম্পদের মালিকানা ছেড়ে নানা অসুবিধা, অনিশ্চয়তা নিয়ে সন্ন্যাসী হিসেবে বিচরণ শুরু করলেন। গৃহত্যাগের সময় শুধু গেরুয়া রঙের একটি পোশাক ছিল গৌতমের শরীরে, যা দিয়ে প্রবল রোদ, বৃষ্টি, শীত ও বাতাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতেন তিনি। বাস করতে শুরু করলেন পাহাড়ের গুহায় ও জঙ্গলে।
গৌতম তাঁর পূর্ব অবস্থান, সম্পদ, নাম-যশ এবং ক্ষমতা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করলেন। আর নিজের জীবনকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করলেন। এসব তাঁকে দুঃখমুক্তির পথ অনুসন্ধানে পরিচালিত করে, যা আগে কেউ খোঁজ করেও পায়নি। দীর্ঘ ছয় বছরের কঠোর সাধনা তাঁর জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গৌতম সেই সময়ের উচ্চতর লেখাপড়া করেছিলেন। এই সময়ে মুক্তির পথের আশায় বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষকের কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষাও তিনি নিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন এভাবে অধ্যয়নের পরও তিনি কোনো মুক্তির পথ না দেখে একদিন সন্ন্যাসীদের একটি দলে যোগ দেন। তাঁদের ধ্যানরীতি অনুসরণ করেন তিনি। গৌতম প্রায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে, এভাবে বুদ্ধত্ব লাভ বা দুঃখমুক্তি হতে পারে। গৌতম প্রচুর ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। এমনকি তপস্যাতেও অন্যান্য তপস্বীকে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ উপবাস করতে গিয়ে তিনি যখন দেখলেন, তাঁর শরীরের চামড়া শুকিয়ে গেছে, পেট ও শিরদাঁড়া এক হয়ে গেছে, তখন থেকে অল্প অল্প খেয়ে ধ্যান-সাধনা শুরু করেন তিনি।
গৌতম এমন কঠোরভাবে ধ্যান করেছিলেন, যা এর আগে কেউ করেনি। একসময় এমন ধ্যান-সাধনা করতে থাকলে মারা যেতে পারেন বলে উপলব্ধি এল তাঁর। এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে গৌতম গয়ার বোধীবৃক্ষ বা অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে ধ্যানে বসলেন এবং কঠোর ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়লেন। সে সময় তিনি মহাবিশ্বের নানা প্রশ্ন এবং মানবজীবন ও প্রকৃতির দুঃখমুক্তির সন্ধানে তাঁর মন ব্রতী হলো।
অবশেষে ৩৫ বছর বয়সে গৌতম একজন আলোকিত মানবরূপে বুদ্ধত্ব লাভ করেন এবং হয়ে ওঠেন বুদ্ধ। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতের অনির্দিষ্ট পথে হেঁটেছেন এবং তাঁর সাধনায় প্রাপ্ত জ্ঞান ও ধর্ম মানুষের মাঝে বিলি করেছেন, যাতে সাধারণ মানুষও চর্চার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে দুঃখহীন ও উন্নত করতে পারে। পরবর্তী সময়ে যাঁরা বুদ্ধের দেখানো পথ ধরে সন্ন্যাসী হয়েছেন, তাঁদের জন্য তিনি কিছু বিধি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখনকার বর্ণপ্রথা, নারীর অধিকার, ধর্মীয় চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার প্রসারের দ্বার উন্মোচন করার জন্য এবং সমস্ত মানবজাতিকে দুঃখ থেকে মুক্তির পথ দেখাতে তিনি বিচরণ করেছেন নানা জায়গায়। জীবনের সবটুকু সময় ধনী-গরিব উভয়ের কাছেই ব্যয় করেছেন।
এমনকি গৌতম বুদ্ধ আঙুলিমালের মতো পাপী থেকে শুরু করে সেই সময়ে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত আম্রপালীর জীবনেও এনে দিয়েছিলেন নতুন সম্ভাবনা; তাঁদের জীবনকে করেছেন উন্নত। মহামতি গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান ও বুদ্ধিদীপ্ততার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রতিটি সমস্যার বিষয় নিয়ে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবং এসব সমস্যার উৎপত্তি, কারণ ও পুনরায় ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রশ্ন-উত্তরে গৌতম বুদ্ধকে কেউ পরাস্ত করতে পারেননি আজ অবধি। গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রথম মনোজগৎ ও জীবনের নানা দিকের সর্বাধিক বিশ্লেষণ হাজির করেন। তিনি একজন অতুলনীয় শিক্ষক, যিনি বর্তমানেও অনন্য। ইতিহাসের পাতায় প্রথম মানবজাতিকে নিজের জীবন নিয়ে, দুঃখ নিয়ে আলোচনার উপায় বের করে দিয়েছিলেন, মানবজাতির মূল্য উত্থাপন করেছিলেন এবং নিজের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ দেখিয়েছিলেন যে, মানুষ নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টায় জ্ঞান ও মুক্তির সর্বোচ্চ স্তরে পোঁছাতে পারে।
এত জ্ঞান এবং একজন রাজবংশের উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করেননি। শ্রেণি ও বর্ণের পার্থক্যকে তিনি কোনো পাত্তা দিতেন না। তাঁর মতে, সবাই সমান। ধনী-গরিব কোনো পরিচয়ই তাঁর কাছে মুখ্য ছিল না। অনায়াসে সবাইকে তিনি দীক্ষিত করেছিলেন।
এমনকি গৌতম বুদ্ধের কাছে যখন ভিন্ন বর্ণের কিংবা গরিব কেউ আসতেন, তাঁদের অনেক বেশি সম্মান করা হতো। তাঁরা মহৎ সত্তার জীবনে উন্নীত হওয়ার পরামর্শ পেতেন। মহামতি গৌতম বুদ্ধ সবার প্রতি ছিলেন খুবই সহানুভূতিশীল (করুণা) এবং জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, আলাদাভাবে একেক ব্যক্তির জ্ঞানের স্তর তিনি বুঝতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী কাকে কীভাবে দুঃখমুক্তির পথ দেখানো যায়, তা তিনি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছিলেন।
শুধু একজন আলাদা ব্যক্তিকে জ্ঞানের পথ এবং দীক্ষা দেওয়ার জন্য বুদ্ধ অনেক দূরের পথ হেঁটে যেতেন। তাঁর শিষ্যদের প্রতি গৌতম বুদ্ধ ছিলেন স্নেহশীল। সব সময় তাঁদের পরিবর্তন ও উন্নতির অবস্থানবিষয়ক খোঁজ-খবর নিতেন। যখন তিনি বিহারে থাকতেন, প্রতিদিন অসুস্থ শিষ্যদের দেখতে যেতেন। অসুস্থ শিষ্যদের প্রতি মমত্ববোধ ও পরামর্শ হিসেবে তিনি বলতেন, ‘তোমরা যে অসুস্থ হয়েছ, তার মানে তোমরা আমার খুব কাছাকাছি এসেছ।’
শিষ্যদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধ সব সময় তাঁদের মধ্যে নিয়ম ও আদেশ জারি রাখতেন। সেই সময়ের প্রাসন্ধি নামে এক রাজা বুঝতে পারতেন না, বুদ্ধ তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যদের কীভাবে সহজেই একসঙ্গে রাখতেন, মানিয়ে রাখতেন এবং সুন্দরভাবে নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখতেন। প্রাসন্ধি যখন রাজা ছিলেন, তাঁর ক্ষমতা ছিল এবং তখন প্রজাদের নানা শাস্তি দেওয়ার পরও তিনি তাঁদের মানিয়ে রাখতে পারতেন না। এ নিয়ে তিনি অবাক হয়ে পড়েছিলেন।
অনেক অলৌকিক ক্ষমতা বুদ্ধের ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে তিনি কখনোই তেমন ভাবেননি। তাঁর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক ক্ষমতা ছিল সত্যকে এবং মানবজীবনের দুঃখকে ব্যাখ্যা করার এবং একজন সাধারণ মানুষকে তা উপলব্ধি করানোর। নানা চিন্তা ও জীবনের দুঃখমুক্তির শেকল থেকে মানবজাতিকে কীভাবে মুক্ত করা যায়, তা নিয়ে তিনি যুক্তিগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।
মানবজাতির দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় বলেছেন গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধ কখনোই দাবি করেননি যে তিনি বৈশ্বিক পরিস্থিতি, সর্বজনীন নানা ঘটনা, জীবনবিধি আমাদের দিয়েছেন, যাকে আমরা ধর্ম বলে দাবি করি। তিনি নিজেকে শুধু ‘লোকাবিধো’ অথবা ‘বিশ্বজগতের জ্ঞানী’ হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন। সর্বজনীন বিশ্বাস ও ধর্মীয় ব্যবস্থার কাছে তখন থেকে মহামতি গৌতম বুদ্ধ কখনোই অনুগত বন্দী হিসেবে থাকেননি।
তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন যে, ধর্ম সৃষ্টি থেকে শুরু করে বিশ্বজগতের নানা কাজ কখনোই সময় মেনে হতে পারে না। বরং এসব নিরবধি এবং এসবের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। এই সবকিছুর গতিবিধি পরম অর্থে স্বাধীন। মহাবিশ্বের বিদ্যমান প্রতিটি শর্তযুক্ত ক্রিয়া তার নিজস্ব ধর্মের ক্রিয়ার সপক্ষে কাজ করে। বুদ্ধ যা করেছিলেন (তার পূর্বোক্ত বুদ্ধদের ন্যায়), তা হলো নিশ্চিত জ্ঞানকে অনুধাবন করা এবং মানব মুক্তির পথ পুনরুদ্ধার করে মানবজাতির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
এসব জ্ঞান অর্জনের পর অন্তহীন জন্মচক্রে আবর্তনের প্রক্রিয়া থেকে কীভাবে চূড়ান্তভাবে নিজেকে মুক্ত করা যায়, সে উপায়গুলো খুঁজে পেয়েছিলেন বুদ্ধ। তাঁর ধর্ম প্রসারের ৪৫ বছর পর, গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশিনারাতে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু, অনুসারী এবং মানবমুক্তির অমূল্য সব নির্দেশনা রেখে যান তিনি, যা বুদ্ধের ত্যাগ এবং অসীম ভালোবাসার শক্তি এখনো বিরাজমান।
ইংরেজ লেখক এইচ জি ওয়েলস বলেছেন, ‘আপনি বুদ্ধকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ, সহজ, ধর্মপ্রাণ, একাকী হিসেবে দেখতে পাবেন, যিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য লড়েছেন একজন মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে। আর এসব শুধু শ্রুতি বা শোনা কথা নয়। তিনি মানবজাতির আচার-আচরণ নিয়ে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। বেশির ভাগ আধুনিক উন্নত চিন্তা ও ধারণা বুদ্ধের সেই সময়ের ধারণার সঙ্গে এখনো সংগতিপূর্ণ। স্বার্থপরতাই মানবজীবনের সব দুর্দশা-কষ্ট এবং অতৃপ্তি ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়। কোনো মানুষ নির্মল হয়ে ওঠার আগে তাকে নিজের ইন্দ্রিয় বা নিজের জন্য বেঁচে থাকতে হবে। তারপর তিনি বিশালতায় মিশে যেতে পারেন। বুদ্ধদর্শন ভিন্ন এক অধ্যায়। কিছু কিছু মাধ্যমে তিনি আমাদের খুব কাছে ছিলেন; আমাদের প্রয়োজনীয়তার কাছে। আমাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তায় গৌতম বুদ্ধের যথেষ্ট রসদ ছিল এবং তা খ্রিষ্টধর্ম আসার পরও এবং ব্যক্তিগত অনৈতিকতার প্রশ্নেও।
‘হোয়াট বুড্ডিস্ট বিলিভ’ বইয়ে ভেন কে শ্রী ধম্মানন্দের লেখা ‘লাইফ অ্যান্ড নেচার অব বুদ্ধ’ প্রবন্ধের ইংরেজি থেকে অনুবাদ

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বুদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাকনাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি যখন বুদ্ধত্ব এবং বোধি জ্ঞান লাভের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
১৫ মে ২০২২
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বুদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাকনাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি যখন বুদ্ধত্ব এবং বোধি জ্ঞান লাভের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
১৫ মে ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বুদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাকনাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি যখন বুদ্ধত্ব এবং বোধি জ্ঞান লাভের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
১৫ মে ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে বসবাস করতেন গৌতম বুদ্ধ, যিনি বুদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। বুদ্ধের ডাকনাম ছিল সিদ্ধার্থ; কিন্তু পারিবারিক নাম ছিল গৌতম। তিনি যখন বুদ্ধত্ব এবং বোধি জ্ঞান লাভের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান।
১৫ মে ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে