আলমগীর মোহাম্মদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।
গ্রাম থেকে এলেও সরকারি কলেজের পরিবেশ ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিক ছিলেন। দর্শন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন কবির একদিন আমাকে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি ফিলোসোফি নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে।’
যুক্তিবিদ্যা আমি ভালো বুঝতাম। সাথে তো মুখস্থ বিদ্যার জোর ছিলই। স্যারের সেদিনের উৎসাহ মনে আরও সাহস জুগিয়েছিল। পরে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম নিজামী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। অবশ্য পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই।
আমি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। জারুলতলার বুদ্ধিজীবী চত্বরে একদল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে খাদির শাল নিয়ে অধ্যাপককে দেখলাম। তাঁরা বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেই দৃশ্য। ভর্তি শেষে আমাদের প্রথম ক্লাস হয় ১২০ নম্বর কক্ষে, যাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয় আরকি। শিক্ষকেরা কথা বললেন একে একে। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমি কথা বলেছিলাম। সেদিন সাহস সঞ্চয় করে কী কী বলেছিলাম, মনে না থাকলেও এতটুকু মনে আছে, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারার খুশি প্রকাশ করেছিলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আমার কাছে প্লেটোর কথিত রূপক গুহের মতো। কেন ভর্তি হয়েছিলাম, বিভাগের সিলেবাসে কী আছে, ইংরেজি বিভাগের ভিশন-মিশন কী—কোনো কিছুই না জেনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছিল। বিভাগ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রচলিত মিথ শুনে যখন হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই প্রথমবর্ষ ফাইনালের রুটিন পাই আমরা। দীর্ঘদিনের সেশনজট, লো সিজিপিএ, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া—এসব কথা শুনে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। স্যারের সঙ্গে দেখা করে রুটিনের কথা শুনে আর বিভাগ পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। পরে নানা রকম সরল, গরল, আনন্দ, তিক্ততার মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছর দশ মাসে পাস করে বের হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চারটি বিভাগের একটি হলো ইংরেজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের খ্যাতনামা ও মেধাবী সব শিক্ষক দিয়ে যাত্রা করা এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হয় না বিভাগে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেশনজট কমছেই না। চার বছরের কোর্স করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ। সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ অপচয় হচ্ছে। সেশনজটের সাথে আছে লো-সিজিপিএর অভিশাপ, যার কারণে বিভাগ থেকে গত দশ-বারো বছরে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি মেধাতালিকায় প্রথম-দ্বিতীয় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও একই অভিশাপের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বিভাগের স্নাতকেরা। কোথাও আবেদনের সুযোগ পেলেও প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো আপনার সিজিপিএ এত কম কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চান্ন পেরোল এবার। কিন্তু এত বছরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পেরেছে? কার্ডিনাল নিউম্যানের ‘দ্য আইডিয়া অব ইউনিভার্সিটি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা আমরা পাই, তার সঙ্গে কতটুকু মিল আছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের? ইংরেজি ও বাংলা পাশাপাশি দুটো বিভাগ। সাহিত্যের এই দুটি বিভাগ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাহিত্যে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা।
গবেষণার কথা বলবেন? সে আলাপ বরং না করাই ভালো। গত ৫৫ বছরে কতজন গবেষক তৈরি করতে পেরেছে ইংরেজি বিভাগ? অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গবেষণাকে খুব পরিষ্কার ভাষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। মাস্টার্সে থিসিস করানো হয় না। পিএইচডি এমফিলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো বিভাগের প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও আবেদন করতে পারেন না। নানা সময়ে এই ব্যাপারে আগ্রহীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে এই অনীহার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকার পরও গবেষণা কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই জায়গায় চবি পুরোপুরি ব্যর্থ।
আট বছরের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি আমার। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেট সরবরাহ ত্বরান্বিত করা, উন্নত মানের ল্যাব সুবিধা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব নেই) নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের নিয়মনীতি শিথিল করা, শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন করা, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে মানসম্মত পরিবহনের ব্যবস্থা করা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা, চাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনমতো আবাসন নিশ্চিত করা প্রভৃতি কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে করছেন না। সুদূর চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করার ব্যস্ততায় দিনের অনেকটা সময় অপচয় হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আবাসন সংকট সমাধান করা গেলে, যাতায়াতের মাধ্যমগুলো মানসম্মত করতে পারলে এই অপচয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী চট্টগ্রাম তথা দেশবাসীর মেধা-মনন বিকাশে সার্থক ভূমিকা পালন করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হবে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গবেষণায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো মেধাবী মুখকে প্রাণ দিতে হচ্ছে না আর। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জন্য সুখের। পঞ্চান্নতম বর্ষপূর্তিতে আমরা আশা করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বের হবে ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে, একটা অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে, চবি প্রেস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা বই, গবেষণা প্রকাশিত হবে—এতটুকু আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় আশা—শীঘ্রই সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রসমাজ।
লেখক: শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।
গ্রাম থেকে এলেও সরকারি কলেজের পরিবেশ ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিক ছিলেন। দর্শন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন কবির একদিন আমাকে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি ফিলোসোফি নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে।’
যুক্তিবিদ্যা আমি ভালো বুঝতাম। সাথে তো মুখস্থ বিদ্যার জোর ছিলই। স্যারের সেদিনের উৎসাহ মনে আরও সাহস জুগিয়েছিল। পরে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম নিজামী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। অবশ্য পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই।
আমি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। জারুলতলার বুদ্ধিজীবী চত্বরে একদল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে খাদির শাল নিয়ে অধ্যাপককে দেখলাম। তাঁরা বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেই দৃশ্য। ভর্তি শেষে আমাদের প্রথম ক্লাস হয় ১২০ নম্বর কক্ষে, যাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয় আরকি। শিক্ষকেরা কথা বললেন একে একে। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমি কথা বলেছিলাম। সেদিন সাহস সঞ্চয় করে কী কী বলেছিলাম, মনে না থাকলেও এতটুকু মনে আছে, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারার খুশি প্রকাশ করেছিলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আমার কাছে প্লেটোর কথিত রূপক গুহের মতো। কেন ভর্তি হয়েছিলাম, বিভাগের সিলেবাসে কী আছে, ইংরেজি বিভাগের ভিশন-মিশন কী—কোনো কিছুই না জেনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছিল। বিভাগ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রচলিত মিথ শুনে যখন হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই প্রথমবর্ষ ফাইনালের রুটিন পাই আমরা। দীর্ঘদিনের সেশনজট, লো সিজিপিএ, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া—এসব কথা শুনে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। স্যারের সঙ্গে দেখা করে রুটিনের কথা শুনে আর বিভাগ পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। পরে নানা রকম সরল, গরল, আনন্দ, তিক্ততার মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছর দশ মাসে পাস করে বের হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চারটি বিভাগের একটি হলো ইংরেজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের খ্যাতনামা ও মেধাবী সব শিক্ষক দিয়ে যাত্রা করা এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হয় না বিভাগে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেশনজট কমছেই না। চার বছরের কোর্স করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ। সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ অপচয় হচ্ছে। সেশনজটের সাথে আছে লো-সিজিপিএর অভিশাপ, যার কারণে বিভাগ থেকে গত দশ-বারো বছরে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি মেধাতালিকায় প্রথম-দ্বিতীয় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও একই অভিশাপের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বিভাগের স্নাতকেরা। কোথাও আবেদনের সুযোগ পেলেও প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো আপনার সিজিপিএ এত কম কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চান্ন পেরোল এবার। কিন্তু এত বছরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পেরেছে? কার্ডিনাল নিউম্যানের ‘দ্য আইডিয়া অব ইউনিভার্সিটি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা আমরা পাই, তার সঙ্গে কতটুকু মিল আছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের? ইংরেজি ও বাংলা পাশাপাশি দুটো বিভাগ। সাহিত্যের এই দুটি বিভাগ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাহিত্যে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা।
গবেষণার কথা বলবেন? সে আলাপ বরং না করাই ভালো। গত ৫৫ বছরে কতজন গবেষক তৈরি করতে পেরেছে ইংরেজি বিভাগ? অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গবেষণাকে খুব পরিষ্কার ভাষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। মাস্টার্সে থিসিস করানো হয় না। পিএইচডি এমফিলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো বিভাগের প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও আবেদন করতে পারেন না। নানা সময়ে এই ব্যাপারে আগ্রহীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে এই অনীহার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকার পরও গবেষণা কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই জায়গায় চবি পুরোপুরি ব্যর্থ।
আট বছরের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি আমার। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেট সরবরাহ ত্বরান্বিত করা, উন্নত মানের ল্যাব সুবিধা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব নেই) নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের নিয়মনীতি শিথিল করা, শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন করা, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে মানসম্মত পরিবহনের ব্যবস্থা করা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা, চাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনমতো আবাসন নিশ্চিত করা প্রভৃতি কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে করছেন না। সুদূর চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করার ব্যস্ততায় দিনের অনেকটা সময় অপচয় হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আবাসন সংকট সমাধান করা গেলে, যাতায়াতের মাধ্যমগুলো মানসম্মত করতে পারলে এই অপচয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী চট্টগ্রাম তথা দেশবাসীর মেধা-মনন বিকাশে সার্থক ভূমিকা পালন করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হবে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গবেষণায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো মেধাবী মুখকে প্রাণ দিতে হচ্ছে না আর। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জন্য সুখের। পঞ্চান্নতম বর্ষপূর্তিতে আমরা আশা করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বের হবে ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে, একটা অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে, চবি প্রেস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা বই, গবেষণা প্রকাশিত হবে—এতটুকু আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় আশা—শীঘ্রই সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রসমাজ।
লেখক: শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা
আলমগীর মোহাম্মদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।
গ্রাম থেকে এলেও সরকারি কলেজের পরিবেশ ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিক ছিলেন। দর্শন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন কবির একদিন আমাকে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি ফিলোসোফি নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে।’
যুক্তিবিদ্যা আমি ভালো বুঝতাম। সাথে তো মুখস্থ বিদ্যার জোর ছিলই। স্যারের সেদিনের উৎসাহ মনে আরও সাহস জুগিয়েছিল। পরে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম নিজামী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। অবশ্য পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই।
আমি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। জারুলতলার বুদ্ধিজীবী চত্বরে একদল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে খাদির শাল নিয়ে অধ্যাপককে দেখলাম। তাঁরা বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেই দৃশ্য। ভর্তি শেষে আমাদের প্রথম ক্লাস হয় ১২০ নম্বর কক্ষে, যাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয় আরকি। শিক্ষকেরা কথা বললেন একে একে। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমি কথা বলেছিলাম। সেদিন সাহস সঞ্চয় করে কী কী বলেছিলাম, মনে না থাকলেও এতটুকু মনে আছে, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারার খুশি প্রকাশ করেছিলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আমার কাছে প্লেটোর কথিত রূপক গুহের মতো। কেন ভর্তি হয়েছিলাম, বিভাগের সিলেবাসে কী আছে, ইংরেজি বিভাগের ভিশন-মিশন কী—কোনো কিছুই না জেনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছিল। বিভাগ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রচলিত মিথ শুনে যখন হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই প্রথমবর্ষ ফাইনালের রুটিন পাই আমরা। দীর্ঘদিনের সেশনজট, লো সিজিপিএ, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া—এসব কথা শুনে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। স্যারের সঙ্গে দেখা করে রুটিনের কথা শুনে আর বিভাগ পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। পরে নানা রকম সরল, গরল, আনন্দ, তিক্ততার মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছর দশ মাসে পাস করে বের হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চারটি বিভাগের একটি হলো ইংরেজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের খ্যাতনামা ও মেধাবী সব শিক্ষক দিয়ে যাত্রা করা এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হয় না বিভাগে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেশনজট কমছেই না। চার বছরের কোর্স করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ। সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ অপচয় হচ্ছে। সেশনজটের সাথে আছে লো-সিজিপিএর অভিশাপ, যার কারণে বিভাগ থেকে গত দশ-বারো বছরে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি মেধাতালিকায় প্রথম-দ্বিতীয় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও একই অভিশাপের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বিভাগের স্নাতকেরা। কোথাও আবেদনের সুযোগ পেলেও প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো আপনার সিজিপিএ এত কম কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চান্ন পেরোল এবার। কিন্তু এত বছরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পেরেছে? কার্ডিনাল নিউম্যানের ‘দ্য আইডিয়া অব ইউনিভার্সিটি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা আমরা পাই, তার সঙ্গে কতটুকু মিল আছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের? ইংরেজি ও বাংলা পাশাপাশি দুটো বিভাগ। সাহিত্যের এই দুটি বিভাগ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাহিত্যে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা।
গবেষণার কথা বলবেন? সে আলাপ বরং না করাই ভালো। গত ৫৫ বছরে কতজন গবেষক তৈরি করতে পেরেছে ইংরেজি বিভাগ? অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গবেষণাকে খুব পরিষ্কার ভাষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। মাস্টার্সে থিসিস করানো হয় না। পিএইচডি এমফিলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো বিভাগের প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও আবেদন করতে পারেন না। নানা সময়ে এই ব্যাপারে আগ্রহীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে এই অনীহার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকার পরও গবেষণা কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই জায়গায় চবি পুরোপুরি ব্যর্থ।
আট বছরের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি আমার। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেট সরবরাহ ত্বরান্বিত করা, উন্নত মানের ল্যাব সুবিধা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব নেই) নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের নিয়মনীতি শিথিল করা, শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন করা, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে মানসম্মত পরিবহনের ব্যবস্থা করা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা, চাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনমতো আবাসন নিশ্চিত করা প্রভৃতি কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে করছেন না। সুদূর চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করার ব্যস্ততায় দিনের অনেকটা সময় অপচয় হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আবাসন সংকট সমাধান করা গেলে, যাতায়াতের মাধ্যমগুলো মানসম্মত করতে পারলে এই অপচয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী চট্টগ্রাম তথা দেশবাসীর মেধা-মনন বিকাশে সার্থক ভূমিকা পালন করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হবে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গবেষণায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো মেধাবী মুখকে প্রাণ দিতে হচ্ছে না আর। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জন্য সুখের। পঞ্চান্নতম বর্ষপূর্তিতে আমরা আশা করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বের হবে ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে, একটা অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে, চবি প্রেস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা বই, গবেষণা প্রকাশিত হবে—এতটুকু আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় আশা—শীঘ্রই সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রসমাজ।
লেখক: শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।
গ্রাম থেকে এলেও সরকারি কলেজের পরিবেশ ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিক ছিলেন। দর্শন বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন কবির একদিন আমাকে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি ফিলোসোফি নিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে।’
যুক্তিবিদ্যা আমি ভালো বুঝতাম। সাথে তো মুখস্থ বিদ্যার জোর ছিলই। স্যারের সেদিনের উৎসাহ মনে আরও সাহস জুগিয়েছিল। পরে আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম নিজামী আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। অবশ্য পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই।
আমি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। জারুলতলার বুদ্ধিজীবী চত্বরে একদল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে খাদির শাল নিয়ে অধ্যাপককে দেখলাম। তাঁরা বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জড়ো হয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেই দৃশ্য। ভর্তি শেষে আমাদের প্রথম ক্লাস হয় ১২০ নম্বর কক্ষে, যাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস বলা হয় আরকি। শিক্ষকেরা কথা বললেন একে একে। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমি কথা বলেছিলাম। সেদিন সাহস সঞ্চয় করে কী কী বলেছিলাম, মনে না থাকলেও এতটুকু মনে আছে, ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারার খুশি প্রকাশ করেছিলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আমার কাছে প্লেটোর কথিত রূপক গুহের মতো। কেন ভর্তি হয়েছিলাম, বিভাগের সিলেবাসে কী আছে, ইংরেজি বিভাগের ভিশন-মিশন কী—কোনো কিছুই না জেনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছিল। বিভাগ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রচলিত মিথ শুনে যখন হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই প্রথমবর্ষ ফাইনালের রুটিন পাই আমরা। দীর্ঘদিনের সেশনজট, লো সিজিপিএ, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া—এসব কথা শুনে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। স্যারের সঙ্গে দেখা করে রুটিনের কথা শুনে আর বিভাগ পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। পরে নানা রকম সরল, গরল, আনন্দ, তিক্ততার মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছর দশ মাসে পাস করে বের হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চারটি বিভাগের একটি হলো ইংরেজি বিভাগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের খ্যাতনামা ও মেধাবী সব শিক্ষক দিয়ে যাত্রা করা এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হয় না বিভাগে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেশনজট কমছেই না। চার বছরের কোর্স করতে ছয় বছর লেগে যাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ। সাথে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ অপচয় হচ্ছে। সেশনজটের সাথে আছে লো-সিজিপিএর অভিশাপ, যার কারণে বিভাগ থেকে গত দশ-বারো বছরে পাস করা কোনো শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি মেধাতালিকায় প্রথম-দ্বিতীয় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও একই অভিশাপের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বিভাগের স্নাতকেরা। কোথাও আবেদনের সুযোগ পেলেও প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হলো আপনার সিজিপিএ এত কম কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স পঞ্চান্ন পেরোল এবার। কিন্তু এত বছরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পেরেছে? কার্ডিনাল নিউম্যানের ‘দ্য আইডিয়া অব ইউনিভার্সিটি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা আমরা পাই, তার সঙ্গে কতটুকু মিল আছে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের? ইংরেজি ও বাংলা পাশাপাশি দুটো বিভাগ। সাহিত্যের এই দুটি বিভাগ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাহিত্যে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা।
গবেষণার কথা বলবেন? সে আলাপ বরং না করাই ভালো। গত ৫৫ বছরে কতজন গবেষক তৈরি করতে পেরেছে ইংরেজি বিভাগ? অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে গবেষণাকে খুব পরিষ্কার ভাষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। মাস্টার্সে থিসিস করানো হয় না। পিএইচডি এমফিলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে কোনো কোনো বিভাগের প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরাও আবেদন করতে পারেন না। নানা সময়ে এই ব্যাপারে আগ্রহীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে এই অনীহার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকার পরও গবেষণা কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই জায়গায় চবি পুরোপুরি ব্যর্থ।
আট বছরের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি আমার। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেট সরবরাহ ত্বরান্বিত করা, উন্নত মানের ল্যাব সুবিধা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব নেই) নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের নিয়মনীতি শিথিল করা, শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন করা, শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে মানসম্মত পরিবহনের ব্যবস্থা করা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা, চাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনমতো আবাসন নিশ্চিত করা প্রভৃতি কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে করছেন না। সুদূর চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করার ব্যস্ততায় দিনের অনেকটা সময় অপচয় হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আবাসন সংকট সমাধান করা গেলে, যাতায়াতের মাধ্যমগুলো মানসম্মত করতে পারলে এই অপচয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী চট্টগ্রাম তথা দেশবাসীর মেধা-মনন বিকাশে সার্থক ভূমিকা পালন করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হবে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গবেষণায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারত, যদি সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোনো মেধাবী মুখকে প্রাণ দিতে হচ্ছে না আর। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন চবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জন্য সুখের। পঞ্চান্নতম বর্ষপূর্তিতে আমরা আশা করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণা জার্নাল বের হবে ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ উদ্যোগে, একটা অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে, চবি প্রেস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা বই, গবেষণা প্রকাশিত হবে—এতটুকু আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় আশা—শীঘ্রই সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রসমাজ।
লেখক: শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ
১৯ নভেম্বর ২০২১
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ
১৯ নভেম্বর ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ
১৯ নভেম্বর ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। বাঁশখালী থেকে এসে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। ছাত্র-শিক্ষক পরিচয় পর্বে শিক্ষকেরা তাঁদের সাবেক ‘আলমা ম্যাটারের’ কথা বলায় মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকি আমিও একদিন বিশ্ববিদ
১৯ নভেম্বর ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে