ঢাকা ত্যাগের আগে

আলাউদ্দিন আল আজাদ
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ০০

অন্য অনেক প্রগতিশীল সাহিত্যিকের মতো ১৯৭১ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদও ছিলেন সোচ্চার। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের পর দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে সৃষ্টি হলো ধূম্রজাল। মানুষ হত্যা করে ইয়াহিয়া বাহিনী এই ভূখণ্ডের মালিকানা নিতে চেয়েছিল। প্রাথমিকভাবে অনেকেই ভাবলেন, গ্রামের দিকে গেলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।

৩০ মার্চ ছিল মঙ্গলবার। বাংলা সন অনুযায়ী ১৬ চৈত্র। আলাউদ্দিন আল আজাদ অন্য অনেকের মতো চুপিসারে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র খোঁজেন রেডিওর নবে। সেখান থেকে জানা যাবে, হচ্ছেটা কী? পড়াশোনা থেকে জানেন তিনি, প্রথম পর্যায়ের এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়। শুদ্ধি অভিযান। বেয়নেট উঁচিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তারা খুঁজবে শিক্ষক, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতা আর কর্মীদের। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে।

এরই মধ্যে এক আত্মীয় এসে জানিয়ে গেছেন, লক্ষ্মীবাজারে হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আলাউদ্দিন আল আজাদ ভেবে দেখলেন, দৈনিক পাকিস্তানে তাঁর দুটি প্রবন্ধ বের হয়েছে, যার প্রথমটির নাম ‘আজকের আন্দোলন ও লেখক’।

দ্বিতীয়টির নাম ‘শব্দের মধ্যে ও শব্দকে ছাড়িয়ে’। টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি, যার বিষয় ছিল বৈষম্য। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আবৃত্তি করেছিলেন, ‘জনসমুদ্রে ওঠে কল্লোল দুর্বার’। পাকিস্তানিদের চোখে এ অপরাধ কম নয়। তাই সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা ছাড়ার। ঢাকা ছাড়ার আগে ভাবলেন চুল কাটিয়ে যাবেন। সেলুনে বিহারি নাপিত। তাদের একজন থুতু ফেলে বলল, ‘শালা বাঙাল লোগ হুজ্জত পাকাকে গাঁও মে ভাগিস, আর হামো শাহের কি আদমি মারতে।’

আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘ফাইন ছাঁটবার দরকার নেহি। অমনি সামান্য ছোটা কারকে দাও।’ ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে কেটে দেওয়া হলো কবির চুল। তিনি বিদায় নিলেন অবরুদ্ধ নগরী থেকে। 
 
সূত্র: আলাউদ্দিন আল আজাদ, ফেরারী ডায়েরি, পৃষ্ঠা ১৭-১৮

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত