তারামন বিবি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭: ৫৪

তারামন বিবি আমাদের কাছে বেশি পরিচিত স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নারী হিসেবে। তাঁর প্রকৃত নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। এই কিশোরী বয়সেই তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে।

কুড়িগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকা ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন। ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মুহিব হাওলাদার একটি ক্যাম্পে তাঁকে ধর্মকন্যা বানিয়ে রান্নার কাজে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে শুধু তিনি রান্নার কাজেই যুক্ত ছিলেন না, দেশকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে ক্যাম্পের অন্যান্য পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখাসহ পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করতে ভূমিকা পালন করেন। সে জন্য তিনি কখনো শরীরে কাদামাটি,  কালি,  ময়লা-আবর্জনা লাগিয়ে পাগল সেজেছেন, আবার কখনো মানসিক-শারীরিক প্রতিবন্ধী, অন্ধ ও বোবা সেজে পাকিস্তানি সেনাদের সামনে দীর্ঘ হাসি কিংবা কান্নার অভিনয় করে শত্রুসেনাদের খবর নিয়ে এসেছেন। যুদ্ধের প্রয়োজনে কখনো সাঁতরে নদী পার হয়েছেন।  শুধু এসব করেই তিনি তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। দেশের জন্য তাঁর আরও কিছু ভূমিকা পালন করা দরকার মনে করলেন। সেই ভাবনা থেকে তিনি সম্মুখযুদ্ধে 

হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ওই এলাকার কোদালকাঠির এক সম্মুখযুদ্ধে একাই প্রায় পাঁচ-ছয়জন পাকিস্তানি সেনাকে খতম করেছিলেন।

১৯৭৩ সালে সরকার মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর অনেক বছর পর্যন্ত এই বীর নারী থেকে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। ২২ বছর পর একজন গবেষক তাঁকে আবিষ্কার করেন। এরপর তিনি আলোচনায় আসেন। ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাঁকে আবার সম্মানিত করে। 

এই সাহসী নারী ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত