চিঠি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২২, ১০: ৫৫
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ০৯: ৫৫

দেশভাগের পর যখন শুনলেন, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে পাসপোর্ট চালু হচ্ছে, তখন কলকাতার পাট চুকিয়ে দেওয়ার মনস্থ করলেন এম আর আখতার মুকুল। কমরেড সুলতান আর তিনি শুরু করলেন ‘পুঁথিপত্র’ নামে একটি বইয়ের দোকান। সে সময়ের ঢাকা ছিল একেবারে অন্য রকম। পুঁথিপত্রের পেছনের অংশ বেড়া দিয়ে কাঠের একটা চৌকি পেতে দুজন ঘুমাতেন। মসজিদ থেকে বালতিতে করে পানি এনে গোসল। কাছের একটা সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে মাসিক চুক্তিতে খাওয়ার বন্দোবস্ত।

সে সময় সংবাদে একটা চাকরি জুটলে পুঁথিপত্র কমরেড সুলতানের কাছে সমর্পণ করে চাকরিতে লেগে গেলেন। দৈনিক সংবাদের বিজ্ঞাপন বিভাগে সহকারী বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের চাকরি। উঠলেন মাসিক ‘অগত্যা’ অফিসে। মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম আর ফজলে লোহানী থাকতেন সেখানে। এটা ছিল তাঁতীবাজার-লাগোয়া, একদিকে রায়সাহেব বাজার, অন্যদিকে শাঁখারীবাজার।

এই ‘অগত্যা’ অফিসে সেকালের তরুণ সাহিত্যিকেরা আড্ডা দিতে আসতেন। আড্ডায় দেশি ও বিশ্বসাহিত্য, শিল্প, দর্শন ইত্যাদির আলাপ হতো। আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন ফজলে লোহানী।

অগত্যায় ব্যঙ্গ, রসিকতা ইত্যাদি চলত খুব জোরেশোরে। ৩ নম্বর রামাকান্ত নন্দী লেনের পাইওনিয়ার প্রিন্টিং প্রেস থেকে তা ছাপা হতো। ছাপা হতো অনিয়মিতভাবে। কারণ, সব সময় বকেয়া বিল পরিশোধ করা হতো না।

অগত্যার ‘চিঠিপত্র’ কলামটি খুব আকর্ষণীয় ছিল। চিঠিপত্র না বলে একে প্রশ্ন ও উত্তর বলা হলেই আসলে ঠিক বলা হবে। সে রকম একটি চিঠির নমুনা, ‘প্রশ্ন: আমি মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট এবং দৈনিক আজাদের মালিক মওলানা আকরম খাঁকে একটা চিঠি লিখতে চাই। কী বলে তাঁকে সম্বোধন করব?’

উত্তর: ‘আয় মেরে জান, পেয়ারে দামান, নূর-এ চামান, আসমান কি চাঁদ, আঁখো-কা-তারা, পেয়ারে মাওলানা মোহাম্মদ ফাঁকরাম খাঁ সমীপেষু।’

বলা বাহুল্য, এই চিঠিপত্রের প্রশ্ন এবং উত্তর—দুটোই অফিস থেকেই প্রস্তুতকৃত। বাইরে থেকে যে চিঠিপত্র আসত ডাকে, তা খোলাও হতো না।

সূত্র: কাজল ঘোষ সম্পাদিত ‘স্মৃতির ঢাকা’, পৃষ্ঠা ৮৬-৮৭

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত