অনলাইন ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো শপথ নেন ২০২৪ সালের জুনে। এর পরের মাসগুলোতে মোদি সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বহির্বিশ্বে ব্যাপক সফর করেছেন। তবে মোদির এত সফর ভারতকে নিরাপত্তার দিক থেকে সুরক্ষিত করতে পারেনি। ২০২৪ সাল ছিল বৈশ্বিক নিরাপত্তাহীনতা ও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য আঘাত পাওয়ার বছর। ২০২৫ সাল আরও অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা।
চলতি বছর ভারতের জন্য সবচেয়ে কঠিন আলোচনা ছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকায় চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ২০২০ সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল এলাকা ছেড়ে ভারতে ঢুকে পড়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে যে অবনতি হয়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা ছিল দীর্ঘমেয়াদি কাজের বিষয়। তবে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মোদি-সি চিন পিং বৈঠক এ বিষয়ে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে।
ভারতের জন্য ২০২৪ সালের শুরুটা হয়েছিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সফরের মাধ্যমে। মাখোঁ জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি ছিলেন। এই সফরে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা পুনর্ব্যক্ত করে। তবে মাখোঁ এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান ব্যক্তি ছিলেন না। মোদি এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রধান অতিথি করার আশা করেছিলেন এবং একই সময়ে দিল্লিতে কোয়াড সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বাইডেন তাতে সাড়া দেননি। তবে মাখোঁ এগিয়ে আসার পর মোদি প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও সামুদ্রিক সহযোগিতায় ভারত-ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলো দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করার দিকে এগিয়ে গেছেন। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের শুরুতে ভারত-ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা চুক্তি হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে বছরের শেষে তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বছরের প্রথমার্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক মুহূর্ত ছিল। বিশেষ করে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশের নেতাদের উপস্থিতি। সেই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও পরে প্রায় এক দশক পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়শংকর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে যোগ দেন। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের একাধিকবার সফর করেছেন নয়াদিল্লি। এ বছর মোদি একটি সম্মাননা গ্রহণ করতে থিম্পু সফর করেন। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনুড়া কুমারা দিসানায়েকে এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুও নয়া দিল্লি সফর করেন। এসব দেশের সঙ্গে টানাপোড়েন পাশে রেখে দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের ভারত সফর অবশ্যই নয়া দিল্লিকে স্বস্তি দিয়েছে।
তবে ২০২৪ সালে এমন কিছু ঘটনাও ঘটেছে যা সাউথ ব্লক খ্যাত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া, হাসিনার আমলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সহযোগী ছিল বাংলাদেশ। তবে আগস্টে হাসিনা ক্ষমতা হারানোর বিষয়টি ছিল নয়া দিল্লির জন্য বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং হাসিনার ভারতে অবস্থান একসময়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কানাডার তরফ থেকে দেশটির মাটিতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের গুপ্তহত্যা পরিচালনার অভিযোগ, বিশেষ করে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম জড়িয়ে যাওয়াও ভারতে বেশ চাপের মুখে ফেলেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। এমনকি নয়া দিল্লি অটোয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। নয়া দিল্লি আশা করছে, কানাডায় আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও স্বাভাবিক হবে।
একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। এ ছাড়া, ভারতীয় গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টা করেছে—এমন অভিযোগও এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং চীনের নেপাল ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে ওয়াশিংটনের সরাসরি প্রবেশের ঘটনা নয়া দিল্লির জন্য নতুন চলমান চ্যালেঞ্জ। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এবং তাঁর প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত ‘ভারত ঘেঁষা’ কর্মকর্তারা একটি স্বস্তির সুযোগ দিতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের সময় ভারত নিজের অবস্থান ‘শান্তির পক্ষে’ রেখেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মোদির রাশিয়া ও ইউক্রেন সফরের পর বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, তিনি ভবিষ্যতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। ইসরায়েল থেকে ভারতে বা ভারত থেকে ইসরায়েলে কোনো উচ্চ-স্তরের সফর হয়নি, তবে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন বিশ্লেষকেরা।
নয়া দিল্লি বারবার বেসামরিক প্রাণহানি বন্ধের আহ্বান জানালেও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হলেও—ইসরায়েলকে দায়ী করে জাতিসংঘে যে প্রস্তাবনা রেজলিউশনগুলোতে তার অবস্থান ছিল অনেকটা সংকীর্ণ। তবে বহুপক্ষীয় বিভিন্ন উদ্যোগ—যেমন: ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট ইউরোপ-ইকোনমিক করিডর এবং ইন্ডিয়া, ইসরায়েল, আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র সংকটের মধ্যে পড়েছে। ভারত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। ২০২৫ সালে ইরান এবং ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র জোটের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সাউথ ব্লকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে।
নতুন বছরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর ওয়াশিংটন সফর করবেন এবং ট্রাম্প ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ট্রাম্প ২০২৫ সালে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফর করবেন এবং তার আগেই মোদি তাঁর সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরুতে ইরানের একটি মন্ত্রী পর্যায়ের দল নয়াদিল্লি সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ক্রিটিকাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি সম্মেলনে বৈঠক করবেন।
এ ছাড়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুইবিয়ান্তো ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি হবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফর ২০২৫ সালের শুরুর দিকে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো শপথ নেন ২০২৪ সালের জুনে। এর পরের মাসগুলোতে মোদি সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বহির্বিশ্বে ব্যাপক সফর করেছেন। তবে মোদির এত সফর ভারতকে নিরাপত্তার দিক থেকে সুরক্ষিত করতে পারেনি। ২০২৪ সাল ছিল বৈশ্বিক নিরাপত্তাহীনতা ও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য আঘাত পাওয়ার বছর। ২০২৫ সাল আরও অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা।
চলতি বছর ভারতের জন্য সবচেয়ে কঠিন আলোচনা ছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকায় চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ২০২০ সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল এলাকা ছেড়ে ভারতে ঢুকে পড়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে যে অবনতি হয়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা ছিল দীর্ঘমেয়াদি কাজের বিষয়। তবে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মোদি-সি চিন পিং বৈঠক এ বিষয়ে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে।
ভারতের জন্য ২০২৪ সালের শুরুটা হয়েছিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সফরের মাধ্যমে। মাখোঁ জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি ছিলেন। এই সফরে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা পুনর্ব্যক্ত করে। তবে মাখোঁ এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান ব্যক্তি ছিলেন না। মোদি এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রধান অতিথি করার আশা করেছিলেন এবং একই সময়ে দিল্লিতে কোয়াড সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বাইডেন তাতে সাড়া দেননি। তবে মাখোঁ এগিয়ে আসার পর মোদি প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও সামুদ্রিক সহযোগিতায় ভারত-ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলো দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করার দিকে এগিয়ে গেছেন। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের শুরুতে ভারত-ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা চুক্তি হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে বছরের শেষে তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বছরের প্রথমার্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক মুহূর্ত ছিল। বিশেষ করে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশের নেতাদের উপস্থিতি। সেই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও পরে প্রায় এক দশক পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়শংকর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে যোগ দেন। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের একাধিকবার সফর করেছেন নয়াদিল্লি। এ বছর মোদি একটি সম্মাননা গ্রহণ করতে থিম্পু সফর করেন। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনুড়া কুমারা দিসানায়েকে এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুও নয়া দিল্লি সফর করেন। এসব দেশের সঙ্গে টানাপোড়েন পাশে রেখে দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের ভারত সফর অবশ্যই নয়া দিল্লিকে স্বস্তি দিয়েছে।
তবে ২০২৪ সালে এমন কিছু ঘটনাও ঘটেছে যা সাউথ ব্লক খ্যাত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া, হাসিনার আমলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সহযোগী ছিল বাংলাদেশ। তবে আগস্টে হাসিনা ক্ষমতা হারানোর বিষয়টি ছিল নয়া দিল্লির জন্য বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং হাসিনার ভারতে অবস্থান একসময়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কানাডার তরফ থেকে দেশটির মাটিতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের গুপ্তহত্যা পরিচালনার অভিযোগ, বিশেষ করে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম জড়িয়ে যাওয়াও ভারতে বেশ চাপের মুখে ফেলেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। এমনকি নয়া দিল্লি অটোয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। নয়া দিল্লি আশা করছে, কানাডায় আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও স্বাভাবিক হবে।
একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। এ ছাড়া, ভারতীয় গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টা করেছে—এমন অভিযোগও এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং চীনের নেপাল ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে ওয়াশিংটনের সরাসরি প্রবেশের ঘটনা নয়া দিল্লির জন্য নতুন চলমান চ্যালেঞ্জ। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এবং তাঁর প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত ‘ভারত ঘেঁষা’ কর্মকর্তারা একটি স্বস্তির সুযোগ দিতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের সময় ভারত নিজের অবস্থান ‘শান্তির পক্ষে’ রেখেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মোদির রাশিয়া ও ইউক্রেন সফরের পর বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, তিনি ভবিষ্যতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। ইসরায়েল থেকে ভারতে বা ভারত থেকে ইসরায়েলে কোনো উচ্চ-স্তরের সফর হয়নি, তবে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন বিশ্লেষকেরা।
নয়া দিল্লি বারবার বেসামরিক প্রাণহানি বন্ধের আহ্বান জানালেও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হলেও—ইসরায়েলকে দায়ী করে জাতিসংঘে যে প্রস্তাবনা রেজলিউশনগুলোতে তার অবস্থান ছিল অনেকটা সংকীর্ণ। তবে বহুপক্ষীয় বিভিন্ন উদ্যোগ—যেমন: ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট ইউরোপ-ইকোনমিক করিডর এবং ইন্ডিয়া, ইসরায়েল, আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র সংকটের মধ্যে পড়েছে। ভারত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। ২০২৫ সালে ইরান এবং ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র জোটের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সাউথ ব্লকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে।
নতুন বছরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর ওয়াশিংটন সফর করবেন এবং ট্রাম্প ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ট্রাম্প ২০২৫ সালে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফর করবেন এবং তার আগেই মোদি তাঁর সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরুতে ইরানের একটি মন্ত্রী পর্যায়ের দল নয়াদিল্লি সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ক্রিটিকাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি সম্মেলনে বৈঠক করবেন।
এ ছাড়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুইবিয়ান্তো ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি হবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফর ২০২৫ সালের শুরুর দিকে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চার বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার তাঁর হাতে সমর্পণ করবেন জো বাইডেন। এর আগে গুছিয়ে নিচ্ছেন তাঁর দায়িত্ব। তবে ট্রাম্পের শাসনভার গ্রহণের পর আসন্ন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বাইডেনের এশীয় মিত্ররা।
১ ঘণ্টা আগেছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশত্যাগের কয়েক মাস পর শেখ হাসিনাকে ‘বিচার প্রক্রিয়ার’ মুখোমুখি করতে তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
১ দিন আগেপ্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার জাহাজ পানামা খাল দিয়ে চলাচল করে। এর বেশির ভাগই মালবাহী জাহাজ। তবে বেশ কিছু সামরিক জাহাজও এই জলপথ পার হয়। খালের প্রধান ব্যবহারকারী দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন পানামা খালের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবহারকারী। এখানেই ভূরাজনীতি এবং
২ দিন আগেসম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার জন্য ভারতের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই বিষয়টি নয়াদিল্লির জন্য একটি বড় কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে।
৭ দিন আগে