ফজলুল কবির
মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে প্রাণহানি ও এর পরবর্তী ঘটনাবলির দিকে গোটা বিশ্বই উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা দ্রুতই বৈষম্য, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রশ্ন সামনে এনে সরকারপতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিষয়টি এখানে থামলে হতো। পুরো আন্দোলন এখন সহিংস রূপ নিয়েছে। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বিক্ষোভ দমনে সরাসরি রুশ সরকারের সহযোগিতা চেয়ে বসেছেন। এমন আহ্বানের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এই দেশে ‘সহায়তার’ জন্য ভ্লাদিমির পুতিন যে কালক্ষেপণ করবেন না, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। আর এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের কপালে বাড়তি ভাঁজ পড়াটাও স্বাভাবিক।
এমনিতেই ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই পক্ষের মধ্যে। এর মধ্যে কাজাখস্তানে সরাসরি রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান পশ্চিমাদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু কাজাখ পরিস্থিতির দিকে তাকানো যাক। গত শুক্রবার দেশটিতে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে হওয়া সহিংসতায় দুই পক্ষ মিলিয়ে মোট ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ বিক্ষোভকারীকে। এ অবস্থায় কাজাখ প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাশিয়া দেশটিতে আড়াই হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও তার প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি। তারা বলেছে, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জাতিসংঘ।
কথা হলো, কেন বিক্ষোভ হচ্ছে কাজাখস্তানে? সোজা উত্তর হলো, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এটা বাইরের কারণ। দুর্নীতি ও বৈষম্যে নিমজ্জিত একটি দেশে যেকোনো ছোট ঘটনাতেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা নাগরিকদের নিরাপত্তা, নিরাপদ সড়ক, দ্রব্যমূল্য বা যেকোনো কিছু হতে পারে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে অনেক বড় কারণ। এই কারণ সামনে রেখে কাজাখ নাগরিকেরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং দ্রুতই তাঁরা নিজেদের ক্ষোভের মূল কারণটি সামনে নিয়ে আসেন। আর তা হলো দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য।
এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের তরফ থেকে কী করা হয়েছে? আলোচনা? না। তারা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্ল্যাকআউট করেছে। এর ফল শুভ হয় না কখনো, কাজাখস্তানেও হয়নি। সেখানে বিক্ষোভ বরং ছড়িয়ে পড়েছে এবং সহিংস হয়ে উঠেছে। কিন্তু কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ এতেও সচেতন হননি। তিনি ‘অন্য দেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের’ মদদ এর পেছনে খুঁজে পেয়েছেন। আর এরই ফল হচ্ছে নিজের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার শরণাপন্ন হওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, কাজাখস্তানে বহুসংখ্যক রুশ রয়েছেন। রাশিয়ার সেনা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এই রুশদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাজাখদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিলে পুরো বিষয়টি জটিল হয়ে উঠবে। পুতিনের জন্য তখন কাজাখস্তান হয়ে উঠবে অভিমন্যুর সেই চক্রব্যূহ, যেখানে প্রবেশ করা যায়, বের হওয়া মুশকিল।
অথচ কাজাখ বিক্ষোভকারীরা শুধু নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন দারিদ্র্য ও দুর্নীতির একটা মীমাংসা হোক। চেয়েছিলেন বৈষম্যের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে। হ্যাঁ, কোনো নেতা বা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার মতো কোনো লোক তাঁদের ছিল না। এ ধরনের আন্দোলনে এটা নতুন নয়। এমনটা এর আগে তিউনেসিয়ায়, লিবিয়ায় দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীদের মূল ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর কাজাখস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া নুরসুলতান নাজারবায়েভের ওপর। তাঁরা এখন তাঁকে খুঁজছেন। কিন্তু তাঁর কোনো বক্তব্য তো দূরে থাক, তাঁকেই কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
আর এখানেই এসে ঢুকে পড়ছে রাশিয়া। দ্য কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) বদৌলতে এমনিতেই রাশিয়া এখানে নাক গলাতে পারে। কারণ, ওই চুক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান। এই যে চুক্তি, এটি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করে আসছিলেন নাজারবায়েভ তাঁর প্রায় ৩০ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে। ২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে আসেন। তিনি যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন, তা হলো কাজাখ পরিচয় অটুট রেখে রাশিয়াকে নিরাপত্তার প্রশ্নে নিজের কৌশলগত সঙ্গী হিসেবে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়লেও নাজারবায়েভ কিন্তু দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ছিলেন গত সপ্তাহ পর্যন্ত। গত সপ্তাহে সেই দায়িত্ব নিজের কাছে নেন এখনকার প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। আর কাজাখ বিক্ষোভের সূচনাটি হয়েছিল গত সপ্তাহেই। এগুলোর মধ্যে এখন অনেকেই সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
আগেই বলা হয়েছে, রাশিয়া কাজাখস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সিএসটিও চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু এ পরিস্থিতি ঠিক এমন সময়ে সৃষ্টি হলো, যখন মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় বসার কথা। গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত নাজারবায়েভের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁকেই তিনি নিরাপদ বলে মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে তোকায়েভের পক্ষেও তেমন নড়নচড়ন সম্ভব নয়। যতই তিনি বিদেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের দিকে আঙুল তাক করুন, তাঁর পক্ষে সেই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী সম্পর্কে এই মুহূর্তে সবিস্তারে কিছু বলা সম্ভব নয়। এই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী যেমন দীর্ঘ সীমান্ত থাকা রুশ দেশের দিক থেকে হতে পারে, তেমনি পশ্চিমও হতে পারে।
তবে এখন এসব আলোচনা পাশে রেখে কাজাখস্তানে রুশ সেনা মোতায়েনের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান সংকটের এই সময়ে রাশিয়া যত দ্রুততার সঙ্গে দেশটিতে সেনা পাঠিয়েছে, তাতে অনেক প্রশ্ন একসঙ্গে সামনে এসেছে। সেখানে সবচেয়ে জোর প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল? একই প্রস্তুতি কি তার সিএসটিও চুক্তির আওতাধীন সব দেশের জন্য আছে? রাশিয়া কি আলোচনার চেয়ে সামরিক সমাধানের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে? পুতিনের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় প্রভাবে ও প্রতিপত্তিতে একচ্ছত্র হওয়ার ইচ্ছা কি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে? এক মেয়াদে সরাসরি যুদ্ধ থেকে দূরে থাকা যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ অর্থনীতির দিকে আবার মনোযোগ দিচ্ছে, তা কি টের পাচ্ছে মস্কো? মনে রাখা ভালো, কাজাখস্তান বিশ্বের অন্যতম বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ শুধু নয়, শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশও। ফলে অনেক স্বার্থের দরজা খুলে বসে আছে মধ্য এশিয়ার দেশটি।
আরও পড়ুন:
মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে প্রাণহানি ও এর পরবর্তী ঘটনাবলির দিকে গোটা বিশ্বই উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা দ্রুতই বৈষম্য, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রশ্ন সামনে এনে সরকারপতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিষয়টি এখানে থামলে হতো। পুরো আন্দোলন এখন সহিংস রূপ নিয়েছে। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বিক্ষোভ দমনে সরাসরি রুশ সরকারের সহযোগিতা চেয়ে বসেছেন। এমন আহ্বানের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এই দেশে ‘সহায়তার’ জন্য ভ্লাদিমির পুতিন যে কালক্ষেপণ করবেন না, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। আর এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের কপালে বাড়তি ভাঁজ পড়াটাও স্বাভাবিক।
এমনিতেই ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই পক্ষের মধ্যে। এর মধ্যে কাজাখস্তানে সরাসরি রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান পশ্চিমাদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু কাজাখ পরিস্থিতির দিকে তাকানো যাক। গত শুক্রবার দেশটিতে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে হওয়া সহিংসতায় দুই পক্ষ মিলিয়ে মোট ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ বিক্ষোভকারীকে। এ অবস্থায় কাজাখ প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাশিয়া দেশটিতে আড়াই হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও তার প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি। তারা বলেছে, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জাতিসংঘ।
কথা হলো, কেন বিক্ষোভ হচ্ছে কাজাখস্তানে? সোজা উত্তর হলো, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এটা বাইরের কারণ। দুর্নীতি ও বৈষম্যে নিমজ্জিত একটি দেশে যেকোনো ছোট ঘটনাতেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা নাগরিকদের নিরাপত্তা, নিরাপদ সড়ক, দ্রব্যমূল্য বা যেকোনো কিছু হতে পারে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে অনেক বড় কারণ। এই কারণ সামনে রেখে কাজাখ নাগরিকেরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং দ্রুতই তাঁরা নিজেদের ক্ষোভের মূল কারণটি সামনে নিয়ে আসেন। আর তা হলো দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য।
এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের তরফ থেকে কী করা হয়েছে? আলোচনা? না। তারা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্ল্যাকআউট করেছে। এর ফল শুভ হয় না কখনো, কাজাখস্তানেও হয়নি। সেখানে বিক্ষোভ বরং ছড়িয়ে পড়েছে এবং সহিংস হয়ে উঠেছে। কিন্তু কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ এতেও সচেতন হননি। তিনি ‘অন্য দেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের’ মদদ এর পেছনে খুঁজে পেয়েছেন। আর এরই ফল হচ্ছে নিজের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার শরণাপন্ন হওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, কাজাখস্তানে বহুসংখ্যক রুশ রয়েছেন। রাশিয়ার সেনা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এই রুশদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাজাখদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিলে পুরো বিষয়টি জটিল হয়ে উঠবে। পুতিনের জন্য তখন কাজাখস্তান হয়ে উঠবে অভিমন্যুর সেই চক্রব্যূহ, যেখানে প্রবেশ করা যায়, বের হওয়া মুশকিল।
অথচ কাজাখ বিক্ষোভকারীরা শুধু নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন দারিদ্র্য ও দুর্নীতির একটা মীমাংসা হোক। চেয়েছিলেন বৈষম্যের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে। হ্যাঁ, কোনো নেতা বা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার মতো কোনো লোক তাঁদের ছিল না। এ ধরনের আন্দোলনে এটা নতুন নয়। এমনটা এর আগে তিউনেসিয়ায়, লিবিয়ায় দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীদের মূল ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর কাজাখস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া নুরসুলতান নাজারবায়েভের ওপর। তাঁরা এখন তাঁকে খুঁজছেন। কিন্তু তাঁর কোনো বক্তব্য তো দূরে থাক, তাঁকেই কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
আর এখানেই এসে ঢুকে পড়ছে রাশিয়া। দ্য কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) বদৌলতে এমনিতেই রাশিয়া এখানে নাক গলাতে পারে। কারণ, ওই চুক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান। এই যে চুক্তি, এটি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করে আসছিলেন নাজারবায়েভ তাঁর প্রায় ৩০ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে। ২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে আসেন। তিনি যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন, তা হলো কাজাখ পরিচয় অটুট রেখে রাশিয়াকে নিরাপত্তার প্রশ্নে নিজের কৌশলগত সঙ্গী হিসেবে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়লেও নাজারবায়েভ কিন্তু দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ছিলেন গত সপ্তাহ পর্যন্ত। গত সপ্তাহে সেই দায়িত্ব নিজের কাছে নেন এখনকার প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। আর কাজাখ বিক্ষোভের সূচনাটি হয়েছিল গত সপ্তাহেই। এগুলোর মধ্যে এখন অনেকেই সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
আগেই বলা হয়েছে, রাশিয়া কাজাখস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সিএসটিও চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু এ পরিস্থিতি ঠিক এমন সময়ে সৃষ্টি হলো, যখন মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় বসার কথা। গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত নাজারবায়েভের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁকেই তিনি নিরাপদ বলে মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে তোকায়েভের পক্ষেও তেমন নড়নচড়ন সম্ভব নয়। যতই তিনি বিদেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের দিকে আঙুল তাক করুন, তাঁর পক্ষে সেই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী সম্পর্কে এই মুহূর্তে সবিস্তারে কিছু বলা সম্ভব নয়। এই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী যেমন দীর্ঘ সীমান্ত থাকা রুশ দেশের দিক থেকে হতে পারে, তেমনি পশ্চিমও হতে পারে।
তবে এখন এসব আলোচনা পাশে রেখে কাজাখস্তানে রুশ সেনা মোতায়েনের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান সংকটের এই সময়ে রাশিয়া যত দ্রুততার সঙ্গে দেশটিতে সেনা পাঠিয়েছে, তাতে অনেক প্রশ্ন একসঙ্গে সামনে এসেছে। সেখানে সবচেয়ে জোর প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল? একই প্রস্তুতি কি তার সিএসটিও চুক্তির আওতাধীন সব দেশের জন্য আছে? রাশিয়া কি আলোচনার চেয়ে সামরিক সমাধানের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে? পুতিনের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় প্রভাবে ও প্রতিপত্তিতে একচ্ছত্র হওয়ার ইচ্ছা কি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে? এক মেয়াদে সরাসরি যুদ্ধ থেকে দূরে থাকা যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ অর্থনীতির দিকে আবার মনোযোগ দিচ্ছে, তা কি টের পাচ্ছে মস্কো? মনে রাখা ভালো, কাজাখস্তান বিশ্বের অন্যতম বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ শুধু নয়, শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশও। ফলে অনেক স্বার্থের দরজা খুলে বসে আছে মধ্য এশিয়ার দেশটি।
আরও পড়ুন:
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে