জাহাঙ্গীর আলম
মানুষের জীবনের মূল্য কত? এটি কোনো সরল প্রশ্ন নয়। সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা ঐতিহাসিকভাবে জীবন বাঁচাতে এবং জনকল্যাণের জন্য পয়সা খরচ করতে ইচ্ছুক। বিভিন্ন দেশের সরকার গাড়ি নির্মাতাদের বায়ু দূষণ কমাতে বাধ্য করে। কারণ এতে অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগের তীব্রতা কমে। এতে কিন্তু গাড়ির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। মৎস্য ও জলজ পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কারখানাগুলোর দূষণ প্রতিরোধে আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। পণ্যের মূল্যে সেই ব্যয়টিও যুক্ত হয়।
তবে এই ধরনের ট্রেডঅফের (অপরচুনিটি কস্টও বলা যায়) স্পষ্ট সীমা আছে। জীবনের মূল্য নির্ধারণের বিজ্ঞান নিয়ে মানুষ কাজ শুরু করেছে বড় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে বা এ ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহের আগের প্রস্তুতি হিসেবে। বিশেষ করে, সামরিক কৌশলবিদেরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কীভাবে ন্যূনতম খরচে সবচেয়ে কার্যকরভাবে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো যায়!
ব্যয় ন্যূনতম রাখার হিসাব নিকাশটার একটা পদ্ধতি বের করার প্রথম উদ্যোগ নেয় মার্কিন সামরিক বাহিনী। অবশ্য মার্কিন বিমানবাহিনী মানুষের জীবন নিয়ে অতটা ভাবিত ছিল না। তারা চেয়েছিল সীমিত বাজেট ও যুদ্ধবিমান দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম পারমাণবিক আক্রমণেই সর্বাধিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কৌশল। ১৯৪৯ সালে বিমানবাহিনী সেই দায়িত্ব দেয় থিংক ট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনকে। র্যান্ড এই কাজ করতে গিয়ে জটিল গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে। কয়েকশ সমীকরণ দিয়ে বোমা এবং যুদ্ধবিমানের ৪ লাখ আলাদা কম্বিনেশন ব্যবহার করে ন্যূনতম ব্যয় নির্ধারণের চেষ্টা করে তারা। ১৯৫০ সালে ন্যূনতম খরচে সোভিয়েত বিজয়ের সূত্র প্রকাশ করে র্যান্ড। শত শত সস্তা যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সোভিয়েতের আকাশ ছেয়ে ফেলার নিদান দেয় তারা, যাতে সোভিয়েত বাহিনী বিভ্রান্ত হয়, আর এই সুযোগে ফেলা যায় পরমাণু বোমা।
কিন্তু সেই জটিল গাণিতিক মডেলে পাইলটদের জীবন বিবেচনায় নেননি গবেষকেরা। শত্রু ভূমিতে থাকা বেসামরিক প্রাণ তো দূর কি বাত! পরিসংখ্যানের গেম থিওরির আলোকে তাঁরা প্রচুর পাইলটের মৃত্যুর বিনিময়ে ন্যূনতম জেটবিমান হারানোর মডেল দিয়েছিলেন।
এই মডেল নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে সংশোধিত মডেল দেন তাঁরা। নতুন ও দক্ষ যুদ্ধবিমান কেনার পথ বাতলে দেন। কিন্তু তাঁদের মডেলে বোমা, প্যারাস্যুট আর প্রশিক্ষণের খরচ ধরা হলেও জীবনের কোনো দাম বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। গেম থিওরির সবচেয়ে লজ্জাজনক প্রয়োগ ছিল সেটি!
শুধু র্যান্ডই নয়, মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের প্যাঁচে ঘোল খেয়েছেন অনেকেই।
কর্মক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে তাঁর স্বজনেরা হয়তো কিছু ক্ষতিপূরণ পান। বেঁচে থাকলে ব্যক্তিটি বাকি জীবনে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হয়তো তার সমান হয়। কিন্তু ধরুন, একজন খনি শ্রমিক আর খনি কোম্পানির অফিসে কাজ করা কর্মীর ক্ষতিপূরণ যখন সমান হয় না সেটিকে কোনোভাবে কি ন্যায্য বলা যায়? নৈতিকতার নিরিখে যুক্তি দিয়ে বলা যায়, বেতনের পরিমাণের ভিত্তিতে কখনো একজনের জীবনের দাম অন্যের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে না। যেমনটি অনেক সময় দেখা যায়। দুর্ঘটনায় নিহত একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ একজন করপোরেট এক্সিকিউটিভ বা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ক্ষতিপূরণের সমান কখনো হতে দেখা যায় না।
এই সমস্যার একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট জ্যাক কার্লসন। পিএইচডি গবেষণাপত্রে তিনি জীবনের মূল্য নির্ধারণের পরিবর্তে ‘জীবন রক্ষার ব্যয়’ নির্ধারণের চেষ্টা করেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত অত্যন্ত মূল্যবান যুদ্ধবিমান থেকে পাইলটের ইজেক্ট করা অথবা বিমানটি কোনোমতে অবতরণ করানোর মধ্যকার খরচের তুলনামূলক হিসাব করেন। তিনি দেখান, পাইলটকে বাঁচানোর খরচ ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর বি-৫৮ বোয়িং বিমানের ইজেকশন পড তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে খরচ হবে ৮ কোটি ডলার। এতে বছরে এক থেকে তিনজন পাইলটের জীবন বাঁচানো যাবে। হিসাব করে দেখান, একজন পাইলটের জীবনের দাম ১১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৯০ লাখ ডলার।
কার্লসনের এই পদ্ধতিই পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তাঁর থিসিস অ্যাডভাইজার র্যান্ডের অর্থনীতিবিদ থমাস শেলিং। এটির ভিত্তিতে দেওয়া গেম থিওরি অব কনফ্লিক্টের জন্য ২০০৫ সালে নোবেল পান শেলিং। তাঁর পদ্ধতিটি এখনো ব্যবহার করা হয়।
তাঁর কাজটি অনেকখানি দার্শনিক প্রশ্নের জবাব। বিতর্ক এড়াতে তিনি ‘জীবনের মূল্যের’ বদলে মৃত্যু এড়ানো বা ‘জীবন রক্ষার’ খরচের কথা বলেন। জীবনের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে যে দার্শনিক বিতর্ক, সেটি এড়িয়ে বরং একজন মানুষ কতো টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে রাজি সেটি নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন তিনি।
এতে করে ‘মৃত্যু ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয়েরই একটি অংশ’ এমন প্রশ্নবোধক নৈতিক অবস্থানকে উতরে যাওয়ার একটা পথ তৈরি হয়। আধুনিক জীবনবিমার মতো বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনাকে সহজে স্বীকার করে নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা হয়েছে। এতে কোনো মৃত্যুর জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার অবস্থানকে কিছুটা হালকা করে জ্ঞাত ঝুঁকির দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ওই ঘটনার এক দশক পরে, ১৯৭০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকটের সময় মার্কিন রাজনীতিকেরা সরকারি বিধিবিধানের আর্থিক প্রভাব নিয়ে ভাবিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রত্যেক সরকারি বিধিবিধানের বিপরীতে টাকার অঙ্কে লাভ-লোকসান হিসাবের কথা ভাবতে বলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মানুষের জীবনের বিপরীতে সরকার একটি প্রাইস ট্যাগ নির্ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গবেষকের হিসাবে এটি মোটামুটি প্রায় ১ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ কিপ ভিস্কুসি সম্প্রতি এনপিআর রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন একটি হিসাবের কথা জানান।
টাকা দিয়ে জীবনের দাম নির্ধারণের বিষয়টি আসে নিরাপত্তা প্রবিধানের ধারণা থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন অধিদপ্তর, সিডিসি, ইপিএ—এই সরকারি সংস্থাগুলোর সবাই জীবনের দাম নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁরা এই মানটি ব্যবহার করে এই মূল্যের বিপরীতে কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রবিধান প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করেন।
অর্থনীতিবিদ কিপ ভিস্কুসি এবং সরকারি সংস্থাগুলো জীবনের একটা মূল্য কিন্তু দৈবচয়নে নির্ধারণ করেন না। তাঁরা একটি উপায় বের করেছেন যাতে শুধু নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা নির্বাচন এড়ানো যায়।
তাঁরা পারিপার্শ্বিক বিবেচনা করেন। কর্মক্ষেত্র কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং মৃত্যু ঝুঁকির জন্য মজুরিতে কত অতিরিক্ত অর্থ যোগ করতে হয় সেটির ওপর ভিত্তি করে জীবনের দাম টাকায় নির্ধারণ করা হয়।
বিষয়টি সহজ করার জন্য একগুচ্ছ শ্রমিককে বিবেচনা করা যাক। যেমন—নির্মাণ শ্রমিক, নার্স, কয়লা খনি শ্রমিক, আইনজীবী—এই ধরনের কর্মক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক কর্মক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করলে ধরে নেওয়া যায় ২৫ হাজার কর্মীর মধ্যে একজন কর্মক্ষেত্রে মারা যাবেন। এটা নিশ্চিত কোনো বিষয় নয়। তবে এমন একটা পরিসংখ্যান বিবেচনা করা হয়।
এ ধরনের হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনা সামনে আসে মূলত কোভিড মহামারির সময়। ওপরের হিসাব পদ্ধতিটি প্রাক-করোনাভাইরাস সময়ের।
করোনাকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, কর্মীদের ঝুঁকি নিতে রাজি করাতে, কোম্পানিগুলোকে তাঁদের প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪০০ ডলার দিতে হবে। এখন যদি কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ হাজার জনে একজন ধরে নিয়ে হিসাব করা হয় তাহলে প্রত্যেকের জন্য ৪০০ ডলার করে ধরলে সেটি ১ কোটি ডলার দাঁড়ায়। এটিই একজনের জীবনের মূল্য।
কিপ ভিস্কুসি জীবনের দাম এভাবেই নির্ধারণ করেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভ্যালু অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল লাইফ (ভিএসএল) অর্থাৎ জীবনের পরিসংখ্যানগত মূল্য নির্ধারণ করেন। এই প্রকরণটি প্রথম ব্যবহার করেন শেলিং।
ভিস্কুসির পদ্ধতিটি খুব সাধারণ। ১৯৮১ সালের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর কর্মস্থলে ১০ হাজার জনে একজনের মৃত্যু হয়। এই ঝুঁকির বিনিময়ে প্রত্যেককে প্রতি বছর ৩০০ ডলার অতিরিক্ত দেওয়া হয়। তার মানে ১০ হাজার কর্মী তাঁদের একজনের মৃত্যুর ঝুঁকির বিনিময়ে অতিরিক্ত পাচ্ছেন মোট ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ একজনের জীবনের দাম এটি। বর্তমান মূল্যস্ফীতি হিসাবে ধরলে এই ভিএসএলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
তবে ভিস্কুসি স্বীকার করেন, এটি শুধুই একটি পরিসংখ্যান। কিন্তু পরিসংখ্যান, আর বাস্তব জীবন তো এক নয়!
সরকারি সংস্থাগুলোও একটি মান ব্যবহার করে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ বেটসি স্টিভেনসন বলেন, ২ বা ৪২ বা ৮২ যাই হোক না কেন, এটা তো একটি সংখ্যাই মাত্র।
অর্থাৎ এখানে বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য কোনো ছাড় (ডিসকাউন্ট) বা কম বয়সীদের জন্য বেশি অর্থ ক্ষতিপূরণ (জীবনের দাম) দেওয়ার কোনো বিষয় আলাদা করে নির্ধারণ করা হয় না।
বেটসি স্টিভেনসন এবং কিপ ভিস্কুসি এবং অন্য অনেক অর্থনীতিবিদ কোভিডকালে জীবনের দাম নির্ধারণে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
ওই সময় এপিডেমিওলজিস্টরা বলেছিলেন, সংক্রমণ বিস্তার কমাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিলে ১০ থেকে ২০ লাখ প্রাণ বাঁচতে পারে। তাই লকডাউন দিয়ে ১০ লাখ জীবন বাঁচানো হয়েছে মানে প্রতি জনের দাম ১ কোটি করে ধরে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা গেছে! এটি এক বছরে মার্কিন জিডিপির প্রায় অর্ধেক।
তবে স্টিভেনসন মানছেন, শুধু গণিত দিয়ে জীবনের দাম নির্ধারণ করা যায় না। আমরা মানুষের জীবন নিয়ে কথা বলছি, যার মূল্য ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার।
অবশ্য সব দেশে এসব নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না। বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণের কোনো পদ্ধতি নেই। এটি নির্ধারিত হয়—দুর্ঘটনার ধরন, আকার, দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক ফায়দার সুযোগ, আন্তর্জাতিক চাপ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। আবার ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারে পৌঁছায় না, এমন অভিযোগও আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের (শ্রম অণু বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব বেগম জেবুন্নেছা করিম আজকের পত্রিকা বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে কোনো পদ্ধতি নেই। তবে সরকারের একটি ক্রাইটেরিয়া লিস্ট আছে। সেটি অনুযায়ী ডাক্তারেরাই নির্ধারণ করে দেন কে কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন। বীভৎসভাবে জখম হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান আছে। হালকা আঘাত হলে সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পান। জখমের অবস্থা দেখে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। কোনো শ্রমিক মারা গেলে দাফন কাফনের জন্য পরিবার থেকে যদি আবেদন করা হয় তাহলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। আর কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় মারা গেলে শ্রমিকের পরিবার পায় ২ লাখ টাকা। আহতদের দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। রোগের জন্যও একইভাবে অবস্থার জটিলতা বিবেচনায় টাকা দেওয়া হয়।’
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে হতাহতদের একইভাবে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব বেগম জেবুন্নেছা।
মানুষের জীবনের মূল্য কত? এটি কোনো সরল প্রশ্ন নয়। সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা ঐতিহাসিকভাবে জীবন বাঁচাতে এবং জনকল্যাণের জন্য পয়সা খরচ করতে ইচ্ছুক। বিভিন্ন দেশের সরকার গাড়ি নির্মাতাদের বায়ু দূষণ কমাতে বাধ্য করে। কারণ এতে অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগের তীব্রতা কমে। এতে কিন্তু গাড়ির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। মৎস্য ও জলজ পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কারখানাগুলোর দূষণ প্রতিরোধে আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। পণ্যের মূল্যে সেই ব্যয়টিও যুক্ত হয়।
তবে এই ধরনের ট্রেডঅফের (অপরচুনিটি কস্টও বলা যায়) স্পষ্ট সীমা আছে। জীবনের মূল্য নির্ধারণের বিজ্ঞান নিয়ে মানুষ কাজ শুরু করেছে বড় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে বা এ ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহের আগের প্রস্তুতি হিসেবে। বিশেষ করে, সামরিক কৌশলবিদেরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কীভাবে ন্যূনতম খরচে সবচেয়ে কার্যকরভাবে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো যায়!
ব্যয় ন্যূনতম রাখার হিসাব নিকাশটার একটা পদ্ধতি বের করার প্রথম উদ্যোগ নেয় মার্কিন সামরিক বাহিনী। অবশ্য মার্কিন বিমানবাহিনী মানুষের জীবন নিয়ে অতটা ভাবিত ছিল না। তারা চেয়েছিল সীমিত বাজেট ও যুদ্ধবিমান দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম পারমাণবিক আক্রমণেই সর্বাধিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কৌশল। ১৯৪৯ সালে বিমানবাহিনী সেই দায়িত্ব দেয় থিংক ট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনকে। র্যান্ড এই কাজ করতে গিয়ে জটিল গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে। কয়েকশ সমীকরণ দিয়ে বোমা এবং যুদ্ধবিমানের ৪ লাখ আলাদা কম্বিনেশন ব্যবহার করে ন্যূনতম ব্যয় নির্ধারণের চেষ্টা করে তারা। ১৯৫০ সালে ন্যূনতম খরচে সোভিয়েত বিজয়ের সূত্র প্রকাশ করে র্যান্ড। শত শত সস্তা যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সোভিয়েতের আকাশ ছেয়ে ফেলার নিদান দেয় তারা, যাতে সোভিয়েত বাহিনী বিভ্রান্ত হয়, আর এই সুযোগে ফেলা যায় পরমাণু বোমা।
কিন্তু সেই জটিল গাণিতিক মডেলে পাইলটদের জীবন বিবেচনায় নেননি গবেষকেরা। শত্রু ভূমিতে থাকা বেসামরিক প্রাণ তো দূর কি বাত! পরিসংখ্যানের গেম থিওরির আলোকে তাঁরা প্রচুর পাইলটের মৃত্যুর বিনিময়ে ন্যূনতম জেটবিমান হারানোর মডেল দিয়েছিলেন।
এই মডেল নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে সংশোধিত মডেল দেন তাঁরা। নতুন ও দক্ষ যুদ্ধবিমান কেনার পথ বাতলে দেন। কিন্তু তাঁদের মডেলে বোমা, প্যারাস্যুট আর প্রশিক্ষণের খরচ ধরা হলেও জীবনের কোনো দাম বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। গেম থিওরির সবচেয়ে লজ্জাজনক প্রয়োগ ছিল সেটি!
শুধু র্যান্ডই নয়, মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের প্যাঁচে ঘোল খেয়েছেন অনেকেই।
কর্মক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে তাঁর স্বজনেরা হয়তো কিছু ক্ষতিপূরণ পান। বেঁচে থাকলে ব্যক্তিটি বাকি জীবনে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হয়তো তার সমান হয়। কিন্তু ধরুন, একজন খনি শ্রমিক আর খনি কোম্পানির অফিসে কাজ করা কর্মীর ক্ষতিপূরণ যখন সমান হয় না সেটিকে কোনোভাবে কি ন্যায্য বলা যায়? নৈতিকতার নিরিখে যুক্তি দিয়ে বলা যায়, বেতনের পরিমাণের ভিত্তিতে কখনো একজনের জীবনের দাম অন্যের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে না। যেমনটি অনেক সময় দেখা যায়। দুর্ঘটনায় নিহত একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ একজন করপোরেট এক্সিকিউটিভ বা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ক্ষতিপূরণের সমান কখনো হতে দেখা যায় না।
এই সমস্যার একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট জ্যাক কার্লসন। পিএইচডি গবেষণাপত্রে তিনি জীবনের মূল্য নির্ধারণের পরিবর্তে ‘জীবন রক্ষার ব্যয়’ নির্ধারণের চেষ্টা করেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত অত্যন্ত মূল্যবান যুদ্ধবিমান থেকে পাইলটের ইজেক্ট করা অথবা বিমানটি কোনোমতে অবতরণ করানোর মধ্যকার খরচের তুলনামূলক হিসাব করেন। তিনি দেখান, পাইলটকে বাঁচানোর খরচ ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর বি-৫৮ বোয়িং বিমানের ইজেকশন পড তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে খরচ হবে ৮ কোটি ডলার। এতে বছরে এক থেকে তিনজন পাইলটের জীবন বাঁচানো যাবে। হিসাব করে দেখান, একজন পাইলটের জীবনের দাম ১১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৯০ লাখ ডলার।
কার্লসনের এই পদ্ধতিই পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তাঁর থিসিস অ্যাডভাইজার র্যান্ডের অর্থনীতিবিদ থমাস শেলিং। এটির ভিত্তিতে দেওয়া গেম থিওরি অব কনফ্লিক্টের জন্য ২০০৫ সালে নোবেল পান শেলিং। তাঁর পদ্ধতিটি এখনো ব্যবহার করা হয়।
তাঁর কাজটি অনেকখানি দার্শনিক প্রশ্নের জবাব। বিতর্ক এড়াতে তিনি ‘জীবনের মূল্যের’ বদলে মৃত্যু এড়ানো বা ‘জীবন রক্ষার’ খরচের কথা বলেন। জীবনের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে যে দার্শনিক বিতর্ক, সেটি এড়িয়ে বরং একজন মানুষ কতো টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে রাজি সেটি নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন তিনি।
এতে করে ‘মৃত্যু ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয়েরই একটি অংশ’ এমন প্রশ্নবোধক নৈতিক অবস্থানকে উতরে যাওয়ার একটা পথ তৈরি হয়। আধুনিক জীবনবিমার মতো বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনাকে সহজে স্বীকার করে নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা হয়েছে। এতে কোনো মৃত্যুর জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার অবস্থানকে কিছুটা হালকা করে জ্ঞাত ঝুঁকির দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ওই ঘটনার এক দশক পরে, ১৯৭০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকটের সময় মার্কিন রাজনীতিকেরা সরকারি বিধিবিধানের আর্থিক প্রভাব নিয়ে ভাবিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রত্যেক সরকারি বিধিবিধানের বিপরীতে টাকার অঙ্কে লাভ-লোকসান হিসাবের কথা ভাবতে বলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মানুষের জীবনের বিপরীতে সরকার একটি প্রাইস ট্যাগ নির্ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গবেষকের হিসাবে এটি মোটামুটি প্রায় ১ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ কিপ ভিস্কুসি সম্প্রতি এনপিআর রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন একটি হিসাবের কথা জানান।
টাকা দিয়ে জীবনের দাম নির্ধারণের বিষয়টি আসে নিরাপত্তা প্রবিধানের ধারণা থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন অধিদপ্তর, সিডিসি, ইপিএ—এই সরকারি সংস্থাগুলোর সবাই জীবনের দাম নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁরা এই মানটি ব্যবহার করে এই মূল্যের বিপরীতে কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রবিধান প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করেন।
অর্থনীতিবিদ কিপ ভিস্কুসি এবং সরকারি সংস্থাগুলো জীবনের একটা মূল্য কিন্তু দৈবচয়নে নির্ধারণ করেন না। তাঁরা একটি উপায় বের করেছেন যাতে শুধু নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা নির্বাচন এড়ানো যায়।
তাঁরা পারিপার্শ্বিক বিবেচনা করেন। কর্মক্ষেত্র কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং মৃত্যু ঝুঁকির জন্য মজুরিতে কত অতিরিক্ত অর্থ যোগ করতে হয় সেটির ওপর ভিত্তি করে জীবনের দাম টাকায় নির্ধারণ করা হয়।
বিষয়টি সহজ করার জন্য একগুচ্ছ শ্রমিককে বিবেচনা করা যাক। যেমন—নির্মাণ শ্রমিক, নার্স, কয়লা খনি শ্রমিক, আইনজীবী—এই ধরনের কর্মক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক কর্মক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করলে ধরে নেওয়া যায় ২৫ হাজার কর্মীর মধ্যে একজন কর্মক্ষেত্রে মারা যাবেন। এটা নিশ্চিত কোনো বিষয় নয়। তবে এমন একটা পরিসংখ্যান বিবেচনা করা হয়।
এ ধরনের হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনা সামনে আসে মূলত কোভিড মহামারির সময়। ওপরের হিসাব পদ্ধতিটি প্রাক-করোনাভাইরাস সময়ের।
করোনাকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, কর্মীদের ঝুঁকি নিতে রাজি করাতে, কোম্পানিগুলোকে তাঁদের প্রতি বছর অতিরিক্ত ৪০০ ডলার দিতে হবে। এখন যদি কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ হাজার জনে একজন ধরে নিয়ে হিসাব করা হয় তাহলে প্রত্যেকের জন্য ৪০০ ডলার করে ধরলে সেটি ১ কোটি ডলার দাঁড়ায়। এটিই একজনের জীবনের মূল্য।
কিপ ভিস্কুসি জীবনের দাম এভাবেই নির্ধারণ করেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভ্যালু অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল লাইফ (ভিএসএল) অর্থাৎ জীবনের পরিসংখ্যানগত মূল্য নির্ধারণ করেন। এই প্রকরণটি প্রথম ব্যবহার করেন শেলিং।
ভিস্কুসির পদ্ধতিটি খুব সাধারণ। ১৯৮১ সালের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর কর্মস্থলে ১০ হাজার জনে একজনের মৃত্যু হয়। এই ঝুঁকির বিনিময়ে প্রত্যেককে প্রতি বছর ৩০০ ডলার অতিরিক্ত দেওয়া হয়। তার মানে ১০ হাজার কর্মী তাঁদের একজনের মৃত্যুর ঝুঁকির বিনিময়ে অতিরিক্ত পাচ্ছেন মোট ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ একজনের জীবনের দাম এটি। বর্তমান মূল্যস্ফীতি হিসাবে ধরলে এই ভিএসএলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
তবে ভিস্কুসি স্বীকার করেন, এটি শুধুই একটি পরিসংখ্যান। কিন্তু পরিসংখ্যান, আর বাস্তব জীবন তো এক নয়!
সরকারি সংস্থাগুলোও একটি মান ব্যবহার করে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ বেটসি স্টিভেনসন বলেন, ২ বা ৪২ বা ৮২ যাই হোক না কেন, এটা তো একটি সংখ্যাই মাত্র।
অর্থাৎ এখানে বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য কোনো ছাড় (ডিসকাউন্ট) বা কম বয়সীদের জন্য বেশি অর্থ ক্ষতিপূরণ (জীবনের দাম) দেওয়ার কোনো বিষয় আলাদা করে নির্ধারণ করা হয় না।
বেটসি স্টিভেনসন এবং কিপ ভিস্কুসি এবং অন্য অনেক অর্থনীতিবিদ কোভিডকালে জীবনের দাম নির্ধারণে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
ওই সময় এপিডেমিওলজিস্টরা বলেছিলেন, সংক্রমণ বিস্তার কমাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিলে ১০ থেকে ২০ লাখ প্রাণ বাঁচতে পারে। তাই লকডাউন দিয়ে ১০ লাখ জীবন বাঁচানো হয়েছে মানে প্রতি জনের দাম ১ কোটি করে ধরে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা গেছে! এটি এক বছরে মার্কিন জিডিপির প্রায় অর্ধেক।
তবে স্টিভেনসন মানছেন, শুধু গণিত দিয়ে জীবনের দাম নির্ধারণ করা যায় না। আমরা মানুষের জীবন নিয়ে কথা বলছি, যার মূল্য ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার।
অবশ্য সব দেশে এসব নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না। বাংলাদেশে মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণের কোনো পদ্ধতি নেই। এটি নির্ধারিত হয়—দুর্ঘটনার ধরন, আকার, দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক ফায়দার সুযোগ, আন্তর্জাতিক চাপ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। আবার ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারে পৌঁছায় না, এমন অভিযোগও আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের (শ্রম অণু বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব বেগম জেবুন্নেছা করিম আজকের পত্রিকা বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে কোনো পদ্ধতি নেই। তবে সরকারের একটি ক্রাইটেরিয়া লিস্ট আছে। সেটি অনুযায়ী ডাক্তারেরাই নির্ধারণ করে দেন কে কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন। বীভৎসভাবে জখম হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান আছে। হালকা আঘাত হলে সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পান। জখমের অবস্থা দেখে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। কোনো শ্রমিক মারা গেলে দাফন কাফনের জন্য পরিবার থেকে যদি আবেদন করা হয় তাহলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। আর কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় মারা গেলে শ্রমিকের পরিবার পায় ২ লাখ টাকা। আহতদের দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। রোগের জন্যও একইভাবে অবস্থার জটিলতা বিবেচনায় টাকা দেওয়া হয়।’
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে হতাহতদের একইভাবে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব বেগম জেবুন্নেছা।
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১০ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে