হুসাইন আহমদ
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মম শ্রম দাসত্বের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্য শিকাগোর কারখানার শ্রমিকেরা যে রক্তক্ষয়ী লড়াই করেছিলেন, এর সূত্র ধরে ১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হলো শ্রমিক দিবস। ১৩৭ বছর আগের লড়াইয়ের মাধ্যমে দৈনিক কর্মঘণ্টা ১৬ থেকে কমে ৮ ঘণ্টার স্বীকৃতি পায়। এর ধারাবাহিকতায় শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত অনেক উন্নতি হলেও শোষণ তীব্র রূপ নিয়েছে; পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আজ আধুনিক দাসত্বের কশাঘাতে জর্জরিত।
গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের চাকচিক্যময় দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ। সেই আসরের খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে যতটা উন্মাদনা ছিল, কিন্তু সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণ স্টেডিয়ামটি তৈরিতে কত যে শ্রমিকের রক্ত ও প্রাণক্ষয় হয়েছে, তার হিসাব কজন রেখেছেন? কাতারের স্টেডিয়াম নির্মাণে এসব অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটাকে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সমালোচকদের অনেকে।
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, আধুনিক দাসত্ব বলতে শোষণের এমন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়; হুমকি, সহিংসতা, বল প্রয়োগ, প্রতারণা অথবা ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে যা একজন ব্যক্তি মেনে নিতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কতগুলো বিষয় পড়ে। যেমন—কাতারে অভিবাসী শ্রমিকেরা, যৌনতার জন্য যাদের পাচার করা হয় এবং ঋণের দায়ে যাদের আটকে রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫ কোটি মানুষ নানারূপে আধুনিক দাসত্বের শেকলে বন্দী। এদের মধ্যে ৩ লাখের বেশি শিশু, যাদের অনেকেই যৌন শোষণের শিকার। এই ৫ কোটির মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ শ্রম দাসত্বের মধ্যে আছে; ২ কোটি ২০ লাখ জোরপূর্বক বিয়ের ফাঁদে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আগের পাঁচ বছরে আধুনিক দাসত্বে বন্দী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৬ সালের চেয়ে এই সংখ্যা ২০২১ সালে অন্তত ১ কোটি বেড়েছে।
কাতারে বিশ্বকাপ শুরুর আগে জার্মানির ফুটবল লিগ বা বুন্দেসলিগা খেলার শেষ দিনটিতে জার্মানির বিভিন্ন শহরের স্টেডিয়ামগুলো ফুঁসে উঠেছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিবাসী শ্রমিক শোষণের দেশ কাতারে বিশ্বকাপ বর্জনের ডাক দেয়। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কাতার সাতটি স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর, আবাসন, রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ নানা উচ্চাভিলাষী নির্মাণকাজের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রায় ২০ লাখ অতিথি শ্রমিকের সঙ্গে বিশ্বকাপ সামনে রেখে যোগ হয় আরো ৪ লাখ। তাঁদের বেশির ভাগকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে আনা হয়েছিল। শুধু স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করতেই ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিশ্বকাপের অবকাঠামো তৈরি করতে কাতারে মানবেতর পরিবেশে কত শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালে এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত এক দশকে কাতারে অপ্রত্যাশিতভাবে হাজার হাজার তরুণ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। কাতার সরকারের অভিবাসী মৃত্যুর রেকর্ডকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটিতে ১৫ হাজার ৭৯৯ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কাতারে কাজে যাওয়ার আগে এসব শ্রমিক বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তানের ছয় অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকায় লিখেছেন সামিরা এল ওয়াসিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুজন মিয়া নামে ৩২ বছর বয়সী এক পাইপ ফিটার। মরুভূমিতে বিশ্বকাপের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছিলেন তিনি। সুজনের কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা ছিল না। হঠাৎ তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে সেখানে প্রচণ্ড দাবদাহ ছিল।
সহিংসতা থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বৈশ্বিক ভাইস প্রেসিডন্ট পিটার উইলিয়ামস। এই আধুনিক দাসত্ব বিশেষজ্ঞের মতে, আধুনিক বিশ্বে নানারূপে বিরাজ করছে দাসত্ব। ধরা যাক কোনো পরিবারে শিশু, পিতামাতা, এমনকি কখনো কখনো দাদা-দাদির ঋণ পরিশোধের জন্য একসঙ্গে কোনো ইটভাটায় কাজ করছেন এবং মূলত সেখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘কল্পনা করুন, পশ্চিম আফ্রিকায় এক হ্রদের মধ্যে মাছ ধরার নৌকায় এক বালক। তাকে হয়তো তার বাবা-মা বিক্রি করে দিলেন। এবং ওই বালককে কোনো মজুরি ছাড়াই চরম অস্বাস্থ্যকর শিল্পে কাজ করতে তাকে বাধ্য করা হলো। বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চলে এটা ব্যাপকভাবে বিরাজমান। আবার ধরুন, কোনো যৌনপল্লি এলাকার কোনো শিশু যৌন বাণিজ্যে মুনাফার জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্ষণের শিকার হলো। এসব পাচার অনলাইনেও হচ্ছে, যেখানে শিশু অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হয়। আর সেই নিপীড়ন থেকে মুনাফা লোটে অন্য কেউ।’
উইলিয়ামসের বিচারে আধুনিক দাসত্বের তিনটি উপাদান আছে—এক. স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা; দুই. শোষণের শিকার হওয়া, অর্থাৎ স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকে ব্যবহার করে অন্য কেউ মুনাফা করছে; তিন. সবশেষে এই সবকিছুই করা হয় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে।
দাসত্বকে বিশ্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নানারূপে তা বিরাজ করছে বিশ্বজুড়ে। যেহেতু অবৈধ, সেহেতু তা চলছে চোখে ধুলো দিয়ে এবং সেটা নির্মূল করা অনেক কঠিন। আগে মানুষের দখল থাকত আরেক মানুষের হাতে, তাকে সারা জীবন নিপীড়ন ও অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হতো। এখন দৃশ্যত তেমন পরিস্থিতি নেই।
কিন্তু দাসত্ব আধুনিক রূপ নিয়ে বেশ ভালোভাবে টিকে আছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন কাউকে সস্তায় কেনা যায় এবং সহজে শোষণ করা যায়। এখন খুব সহজেই মাত্র কয়েক শ ডলারের বিনিময়ে কারো কাজ ও মানবতা কিনে ফেলা যায়। ইতিহাসের যেকোনো সময়ে এটা অনেক লাভজনক। কারণ, মানুষকে এত সস্তায় কেনা যায় এবং সহজে খরচের খাতায় ফেলা যায়। মানুষ নিয়ে এভাবে শুনতে খারাপ লাগে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আধুনিক দাসত্ব মানুষকে পণ্যে পরিণত করেছে। সস্তা শ্রমের এই দাসত্ব বিশ্বজুড়েই।
আমরা কফি পান করি, চকলেট খাই, কাপড় পরি, ফিফা বিশ্বকাপ দেখি—এই সবকিছুর সঙ্গে সস্তা শ্রমরূপে যুক্ত আছে আধুনিক দাসত্ব। যেসব পণ্যসম্ভার প্রতিদিন আমাদের হাতে আসে, তার সবগুলোর সঙ্গে দাসত্ব জড়িত আছে।
ব্যক্তি মুনাফার পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থার অনেকটা সহগামী হয়ে পড়েছে আধুনিক দাসত্ব। এই পরিস্থিতির অবসানের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রাধান্য দেওয়ার বিকল্প নেই। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বৈশ্বিক জোট গঠন এবং আরো স্থিতিশীল ও সুষম ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত নীতিমালাকে নতুন রূপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএলও।
এক বিবৃতিতে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, অভূতপূর্ব মহামারি কোভিডের পর বিশ্বজুড়ে প্রকৃত মজুরি কমেছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, অসমতাও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
আধুনিক দাসত্ব নির্মূলের পথে অগ্রগতি করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শ্রম পরিদর্শন কার্যকর করতে জোর দিতে হবে। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র আরোপিত বাধ্যতামূলক শ্রমের বিধান বিলুপ্ত করতে হবে। বাধ্যতামূলক শ্রম ও পাচারের কারবার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক প্রতিরক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনি সুরক্ষাও বাড়াতে হবে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও), দ্য গার্ডিয়ান, ইউএস নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মম শ্রম দাসত্বের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্য শিকাগোর কারখানার শ্রমিকেরা যে রক্তক্ষয়ী লড়াই করেছিলেন, এর সূত্র ধরে ১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হলো শ্রমিক দিবস। ১৩৭ বছর আগের লড়াইয়ের মাধ্যমে দৈনিক কর্মঘণ্টা ১৬ থেকে কমে ৮ ঘণ্টার স্বীকৃতি পায়। এর ধারাবাহিকতায় শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত অনেক উন্নতি হলেও শোষণ তীব্র রূপ নিয়েছে; পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আজ আধুনিক দাসত্বের কশাঘাতে জর্জরিত।
গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের চাকচিক্যময় দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ। সেই আসরের খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে যতটা উন্মাদনা ছিল, কিন্তু সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণ স্টেডিয়ামটি তৈরিতে কত যে শ্রমিকের রক্ত ও প্রাণক্ষয় হয়েছে, তার হিসাব কজন রেখেছেন? কাতারের স্টেডিয়াম নির্মাণে এসব অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটাকে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সমালোচকদের অনেকে।
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, আধুনিক দাসত্ব বলতে শোষণের এমন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়; হুমকি, সহিংসতা, বল প্রয়োগ, প্রতারণা অথবা ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে যা একজন ব্যক্তি মেনে নিতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কতগুলো বিষয় পড়ে। যেমন—কাতারে অভিবাসী শ্রমিকেরা, যৌনতার জন্য যাদের পাচার করা হয় এবং ঋণের দায়ে যাদের আটকে রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫ কোটি মানুষ নানারূপে আধুনিক দাসত্বের শেকলে বন্দী। এদের মধ্যে ৩ লাখের বেশি শিশু, যাদের অনেকেই যৌন শোষণের শিকার। এই ৫ কোটির মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ শ্রম দাসত্বের মধ্যে আছে; ২ কোটি ২০ লাখ জোরপূর্বক বিয়ের ফাঁদে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আগের পাঁচ বছরে আধুনিক দাসত্বে বন্দী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৬ সালের চেয়ে এই সংখ্যা ২০২১ সালে অন্তত ১ কোটি বেড়েছে।
কাতারে বিশ্বকাপ শুরুর আগে জার্মানির ফুটবল লিগ বা বুন্দেসলিগা খেলার শেষ দিনটিতে জার্মানির বিভিন্ন শহরের স্টেডিয়ামগুলো ফুঁসে উঠেছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিবাসী শ্রমিক শোষণের দেশ কাতারে বিশ্বকাপ বর্জনের ডাক দেয়। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কাতার সাতটি স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর, আবাসন, রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ নানা উচ্চাভিলাষী নির্মাণকাজের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রায় ২০ লাখ অতিথি শ্রমিকের সঙ্গে বিশ্বকাপ সামনে রেখে যোগ হয় আরো ৪ লাখ। তাঁদের বেশির ভাগকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে আনা হয়েছিল। শুধু স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করতেই ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিশ্বকাপের অবকাঠামো তৈরি করতে কাতারে মানবেতর পরিবেশে কত শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালে এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত এক দশকে কাতারে অপ্রত্যাশিতভাবে হাজার হাজার তরুণ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। কাতার সরকারের অভিবাসী মৃত্যুর রেকর্ডকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটিতে ১৫ হাজার ৭৯৯ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কাতারে কাজে যাওয়ার আগে এসব শ্রমিক বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তানের ছয় অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকায় লিখেছেন সামিরা এল ওয়াসিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুজন মিয়া নামে ৩২ বছর বয়সী এক পাইপ ফিটার। মরুভূমিতে বিশ্বকাপের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছিলেন তিনি। সুজনের কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা ছিল না। হঠাৎ তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে সেখানে প্রচণ্ড দাবদাহ ছিল।
সহিংসতা থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বৈশ্বিক ভাইস প্রেসিডন্ট পিটার উইলিয়ামস। এই আধুনিক দাসত্ব বিশেষজ্ঞের মতে, আধুনিক বিশ্বে নানারূপে বিরাজ করছে দাসত্ব। ধরা যাক কোনো পরিবারে শিশু, পিতামাতা, এমনকি কখনো কখনো দাদা-দাদির ঋণ পরিশোধের জন্য একসঙ্গে কোনো ইটভাটায় কাজ করছেন এবং মূলত সেখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘কল্পনা করুন, পশ্চিম আফ্রিকায় এক হ্রদের মধ্যে মাছ ধরার নৌকায় এক বালক। তাকে হয়তো তার বাবা-মা বিক্রি করে দিলেন। এবং ওই বালককে কোনো মজুরি ছাড়াই চরম অস্বাস্থ্যকর শিল্পে কাজ করতে তাকে বাধ্য করা হলো। বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চলে এটা ব্যাপকভাবে বিরাজমান। আবার ধরুন, কোনো যৌনপল্লি এলাকার কোনো শিশু যৌন বাণিজ্যে মুনাফার জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্ষণের শিকার হলো। এসব পাচার অনলাইনেও হচ্ছে, যেখানে শিশু অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হয়। আর সেই নিপীড়ন থেকে মুনাফা লোটে অন্য কেউ।’
উইলিয়ামসের বিচারে আধুনিক দাসত্বের তিনটি উপাদান আছে—এক. স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা; দুই. শোষণের শিকার হওয়া, অর্থাৎ স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকে ব্যবহার করে অন্য কেউ মুনাফা করছে; তিন. সবশেষে এই সবকিছুই করা হয় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে।
দাসত্বকে বিশ্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নানারূপে তা বিরাজ করছে বিশ্বজুড়ে। যেহেতু অবৈধ, সেহেতু তা চলছে চোখে ধুলো দিয়ে এবং সেটা নির্মূল করা অনেক কঠিন। আগে মানুষের দখল থাকত আরেক মানুষের হাতে, তাকে সারা জীবন নিপীড়ন ও অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হতো। এখন দৃশ্যত তেমন পরিস্থিতি নেই।
কিন্তু দাসত্ব আধুনিক রূপ নিয়ে বেশ ভালোভাবে টিকে আছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন কাউকে সস্তায় কেনা যায় এবং সহজে শোষণ করা যায়। এখন খুব সহজেই মাত্র কয়েক শ ডলারের বিনিময়ে কারো কাজ ও মানবতা কিনে ফেলা যায়। ইতিহাসের যেকোনো সময়ে এটা অনেক লাভজনক। কারণ, মানুষকে এত সস্তায় কেনা যায় এবং সহজে খরচের খাতায় ফেলা যায়। মানুষ নিয়ে এভাবে শুনতে খারাপ লাগে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আধুনিক দাসত্ব মানুষকে পণ্যে পরিণত করেছে। সস্তা শ্রমের এই দাসত্ব বিশ্বজুড়েই।
আমরা কফি পান করি, চকলেট খাই, কাপড় পরি, ফিফা বিশ্বকাপ দেখি—এই সবকিছুর সঙ্গে সস্তা শ্রমরূপে যুক্ত আছে আধুনিক দাসত্ব। যেসব পণ্যসম্ভার প্রতিদিন আমাদের হাতে আসে, তার সবগুলোর সঙ্গে দাসত্ব জড়িত আছে।
ব্যক্তি মুনাফার পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থার অনেকটা সহগামী হয়ে পড়েছে আধুনিক দাসত্ব। এই পরিস্থিতির অবসানের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রাধান্য দেওয়ার বিকল্প নেই। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বৈশ্বিক জোট গঠন এবং আরো স্থিতিশীল ও সুষম ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত নীতিমালাকে নতুন রূপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএলও।
এক বিবৃতিতে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, অভূতপূর্ব মহামারি কোভিডের পর বিশ্বজুড়ে প্রকৃত মজুরি কমেছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, অসমতাও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
আধুনিক দাসত্ব নির্মূলের পথে অগ্রগতি করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শ্রম পরিদর্শন কার্যকর করতে জোর দিতে হবে। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র আরোপিত বাধ্যতামূলক শ্রমের বিধান বিলুপ্ত করতে হবে। বাধ্যতামূলক শ্রম ও পাচারের কারবার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক প্রতিরক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনি সুরক্ষাও বাড়াতে হবে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও), দ্য গার্ডিয়ান, ইউএস নিউজ
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে