অনলাইন ডেস্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকসহ বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখাচ্ছে। তারা বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর প্রতি সহায়তা কমাচ্ছে। এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
আপাতদৃষ্টিতে, ঋণ পরিশোধে দরিদ্র দেশগুলোর অক্ষমতা এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিয়ে অনিশ্চয়তা, সেই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোতে এখন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিগত ৭৫ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে আছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক এই আর্থিক সংস্থার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) প্রতিবছর বিশ্বের ৭৮টি দেশে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করে থাকে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ৬ ডিসেম্বর জানান, আইডিএ আগামী ৩ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।
আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি ইতিবাচক মনে হলেও এর আড়ালে এক দুঃখজনক বাস্তবতা লুকিয়ে আছে। বিশ্বের বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ দরিদ্র দেশগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
অজয় বাঙ্গার ঘোষণা আশাব্যঞ্জক, কিন্তু তাঁর বক্তব্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে। এসব বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ দাতা দেশ এখন বাজেট সংকোচনের পথে। অনুদান সামান্য পরিমাণ বাড়লেও তা ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে খুব একটা কাজে আসছে না। ফলে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংককে মুদ্রা বাজার থেকে থেকে ঋণ নিতে হবে। তবে এই ঋণের ব্যয় শেষ পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
আইডিএ যেসব দেশকে সাহায্য করে সেগুলোর মধ্যে বড় মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ ও কেনিয়াও যেমন আছে, তেমনি আছে নাইজারের মতো দেশও, যেখানে অর্ধেক মানুষই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। আইডিএ দেশগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ এবং অনুদান (যা পরিশোধ করতে হয় না) মিলিয়ে অর্থায়নের সুযোগ দেয়। কিন্তু ব্যাংক নিজেই যখন মুদ্রাবাজার থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং অনুদানের পরিবর্তে ঋণ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে, তখন দরিদ্রতম দেশগুলোকে দেওয়া ছাড় ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট–২০২২ ও আইএমএফের সাব–সাহারান আফ্রিকার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি–২০২২ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত দশকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তথ্য অনুযায়ী, অনুদান এবং সহজ শর্তের ঋণ অর্ধেকের বেশি কমেছে, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়নের বিকল্প সীমিত করে ফেলেছে।
আইডিএয়ের আন্তর্জাতিক অর্থায়নের একটি উদ্বেগজনক প্রবণতাকেই তুলে ধরে এসব প্রতিবেদন। ঋণ সংকট মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাংকের এখন আরও বড় তহবিল প্রয়োজন হবে, তবে এর জন্য মূল্যও বেশি চোকাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এই পরিবর্তন উন্নত দেশগুলোর পছন্দ হলেও এটি দরিদ্র দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে, কারণ তারা আগের মতো আর ঋণ নিতে পারবে না।
বিশ্বব্যাংকের মতোই গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঘোষণা করেছে, তারা মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে আরোপিত অতিরিক্ত সুদ (সারচার্জ) কমাবে। এই সিদ্ধান্ত কোনো সমস্যা নয়। তবে আইএমএফ এই কম সুদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রথমবারের মতো সুদ আরোপ করবে। এখন থেকে নিম্ন আয়ের অধিকাংশ দেশকেই তাদের ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে সেই ঋণ থেকেই।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর অবশ্যই আরও বেশি বায়ু বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ চালিত গণপরিবহন এবং সৌর প্যানেল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ‘জলবায়ু তহবিলের’ প্রতি আগ্রহ দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর অর্থায়নের জায়গা দখল করছে। আইডিএয়ের সহজ অর্থায়ন ঋণে জর্জরিত দেশের সরকারগুলোকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়। যদিও বিশ্ব ব্যাংকের উদ্বেগ, দরিদ্রতম দেশগুলো তাদের তহবিল অপচয় করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো দেশে আইডিএ ঋণের পরিমাণ যদি সেই দেশটির জাতীয় আয়ের ১ শতাংশ পর্যন্ত হয়, তবে এক বছরের মধ্যে সেই দেশের মাথাপিছু জিডিপি শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আইডিএয়ের সবচেয়ে কার্যকর তহবিল হলো দরিদ্রতম দেশগুলোকে দেওয়া অনুদান। দারিদ্র্য বিমোচনের গতি বাড়ানোর সেরা উপায় হলো—বিশ্বব্যাংকের সহায়তার ব্যয় কমিয়ে আনা, এমনকি এর ফলে আইডিএ–এর তহবিল কমে গেলেও এটি করা উচিত।
তবে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ছাড় কমে যাওয়া মানে ঋণ বরাদ্দ সম্ভবত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল যোগ্য দেশগুলোর দিকে যাবে। কিন্তু যেখানে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নিতে পারে, সেখানে দরিদ্রতম দেশগুলোর জন্য বিকল্প কম। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অর্থায়নের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট–২০২১ প্রতিবেদন অনুসারে, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, তাদের বড় অর্থনীতি, ঋণ পরিশোধের উচ্চ সক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে তাদের সাযুজ্য।
এরই ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, ২০১২ সালের পর থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য বৈদিশক অর্থায়নের (বিভিন্ন ধরনের ঋণ) ব্যয় চার গুণ বেড়েছে এবং দরিদ্রতম ৪০টি দেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ পড়েছে। ২০২৩ সালে নাইজারের জিডিপির ৮ শতাংশই ছিল আইডিএ–এর ঋণ। কিন্তু বৈশ্বিক বন্ড বিনিয়োগকারীরা নাইজারের মতো দেশের দিকে সামান্যতম সময় ব্যয় করতেও রাজি নয়। অর্থাৎ, এসব দেশে কেউই অর্থায়ন করতে চায় না।
দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কার্যকর সুদের হার ১ বা ২ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়লেই তা সেই দেশগুলোর সরকারকে সড়ক, হাসপাতাল এবং অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণকাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। কেবল তাই নয়, এর ফলে লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সুপেয় পানির মতো মৌলিক পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেখানে দরিদ্রতম দেশগুলোর ওপর পুনরায় দৃষ্টি নিবন্ধ করা ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়।
এদিকে, বহুপক্ষীয় ঋণ দাতা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দরিদ্রতম দেশগুলোকে ঋণ না দিতে চায় বা কম দিতে চায় তাহলে দেশগুলো চীনের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে বাধ্য হতে পারে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলো চীনের সঙ্গে এসব দেশের এমন সম্পর্ক এড়াতে চায়। ইতিমধ্যেই চীন উন্নয়নশীল বিশ্বে ঋণ প্রদানে বিশ্বব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা এড়াতে, দরিদ্রতম দেশগুলোতে অনুদান ও সহজ শর্তের ঋণ বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে এমন খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, যা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি এসব দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা দিতে ঋণ মুক্তি কর্মসূচিগুলো সম্প্রসারিত করতে হবে। এসব দেশের অনন্য চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনাগুলো বিবেচনা করে ঝুঁকি মূল্যায়ন কাঠামো সংশোধন করা উচিত, যাতে তারা তহবিল প্রাপ্তি থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত না হয়। এ ছাড়া, তহবিল বরাদ্দ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে, যাতে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।
এর বাইরে, যদি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে চায় এবং দরিদ্রতম দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই নিজেদের সামনে থাকা বিরোধপূর্ণ বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। এতে উন্নত দেশগুলোর অংশীজনরা তাদের আর্থিক দায়িত্ব বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আর এক্ষেত্রে পিছিয়ে এলে তার ফলাফলের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিগত ৭৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের জন্য এক ধরনের লাইফ লাইন হিসেবে কাজ করেছে। এখন তাদের এই পথ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘ ও জার্নাল অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকসহ বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখাচ্ছে। তারা বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর প্রতি সহায়তা কমাচ্ছে। এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
আপাতদৃষ্টিতে, ঋণ পরিশোধে দরিদ্র দেশগুলোর অক্ষমতা এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিয়ে অনিশ্চয়তা, সেই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোতে এখন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিগত ৭৫ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে আছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক এই আর্থিক সংস্থার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) প্রতিবছর বিশ্বের ৭৮টি দেশে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করে থাকে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ৬ ডিসেম্বর জানান, আইডিএ আগামী ৩ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।
আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি ইতিবাচক মনে হলেও এর আড়ালে এক দুঃখজনক বাস্তবতা লুকিয়ে আছে। বিশ্বের বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ দরিদ্র দেশগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
অজয় বাঙ্গার ঘোষণা আশাব্যঞ্জক, কিন্তু তাঁর বক্তব্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে। এসব বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ দাতা দেশ এখন বাজেট সংকোচনের পথে। অনুদান সামান্য পরিমাণ বাড়লেও তা ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে খুব একটা কাজে আসছে না। ফলে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংককে মুদ্রা বাজার থেকে থেকে ঋণ নিতে হবে। তবে এই ঋণের ব্যয় শেষ পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
আইডিএ যেসব দেশকে সাহায্য করে সেগুলোর মধ্যে বড় মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ ও কেনিয়াও যেমন আছে, তেমনি আছে নাইজারের মতো দেশও, যেখানে অর্ধেক মানুষই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। আইডিএ দেশগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ এবং অনুদান (যা পরিশোধ করতে হয় না) মিলিয়ে অর্থায়নের সুযোগ দেয়। কিন্তু ব্যাংক নিজেই যখন মুদ্রাবাজার থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং অনুদানের পরিবর্তে ঋণ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে, তখন দরিদ্রতম দেশগুলোকে দেওয়া ছাড় ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট–২০২২ ও আইএমএফের সাব–সাহারান আফ্রিকার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি–২০২২ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত দশকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তথ্য অনুযায়ী, অনুদান এবং সহজ শর্তের ঋণ অর্ধেকের বেশি কমেছে, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়নের বিকল্প সীমিত করে ফেলেছে।
আইডিএয়ের আন্তর্জাতিক অর্থায়নের একটি উদ্বেগজনক প্রবণতাকেই তুলে ধরে এসব প্রতিবেদন। ঋণ সংকট মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাংকের এখন আরও বড় তহবিল প্রয়োজন হবে, তবে এর জন্য মূল্যও বেশি চোকাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এই পরিবর্তন উন্নত দেশগুলোর পছন্দ হলেও এটি দরিদ্র দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে, কারণ তারা আগের মতো আর ঋণ নিতে পারবে না।
বিশ্বব্যাংকের মতোই গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঘোষণা করেছে, তারা মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে আরোপিত অতিরিক্ত সুদ (সারচার্জ) কমাবে। এই সিদ্ধান্ত কোনো সমস্যা নয়। তবে আইএমএফ এই কম সুদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রথমবারের মতো সুদ আরোপ করবে। এখন থেকে নিম্ন আয়ের অধিকাংশ দেশকেই তাদের ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে সেই ঋণ থেকেই।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর অবশ্যই আরও বেশি বায়ু বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ চালিত গণপরিবহন এবং সৌর প্যানেল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ‘জলবায়ু তহবিলের’ প্রতি আগ্রহ দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর অর্থায়নের জায়গা দখল করছে। আইডিএয়ের সহজ অর্থায়ন ঋণে জর্জরিত দেশের সরকারগুলোকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়। যদিও বিশ্ব ব্যাংকের উদ্বেগ, দরিদ্রতম দেশগুলো তাদের তহবিল অপচয় করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো দেশে আইডিএ ঋণের পরিমাণ যদি সেই দেশটির জাতীয় আয়ের ১ শতাংশ পর্যন্ত হয়, তবে এক বছরের মধ্যে সেই দেশের মাথাপিছু জিডিপি শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আইডিএয়ের সবচেয়ে কার্যকর তহবিল হলো দরিদ্রতম দেশগুলোকে দেওয়া অনুদান। দারিদ্র্য বিমোচনের গতি বাড়ানোর সেরা উপায় হলো—বিশ্বব্যাংকের সহায়তার ব্যয় কমিয়ে আনা, এমনকি এর ফলে আইডিএ–এর তহবিল কমে গেলেও এটি করা উচিত।
তবে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ছাড় কমে যাওয়া মানে ঋণ বরাদ্দ সম্ভবত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল যোগ্য দেশগুলোর দিকে যাবে। কিন্তু যেখানে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নিতে পারে, সেখানে দরিদ্রতম দেশগুলোর জন্য বিকল্প কম। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অর্থায়নের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট–২০২১ প্রতিবেদন অনুসারে, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, তাদের বড় অর্থনীতি, ঋণ পরিশোধের উচ্চ সক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে তাদের সাযুজ্য।
এরই ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, ২০১২ সালের পর থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য বৈদিশক অর্থায়নের (বিভিন্ন ধরনের ঋণ) ব্যয় চার গুণ বেড়েছে এবং দরিদ্রতম ৪০টি দেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ পড়েছে। ২০২৩ সালে নাইজারের জিডিপির ৮ শতাংশই ছিল আইডিএ–এর ঋণ। কিন্তু বৈশ্বিক বন্ড বিনিয়োগকারীরা নাইজারের মতো দেশের দিকে সামান্যতম সময় ব্যয় করতেও রাজি নয়। অর্থাৎ, এসব দেশে কেউই অর্থায়ন করতে চায় না।
দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কার্যকর সুদের হার ১ বা ২ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়লেই তা সেই দেশগুলোর সরকারকে সড়ক, হাসপাতাল এবং অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণকাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। কেবল তাই নয়, এর ফলে লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সুপেয় পানির মতো মৌলিক পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেখানে দরিদ্রতম দেশগুলোর ওপর পুনরায় দৃষ্টি নিবন্ধ করা ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়।
এদিকে, বহুপক্ষীয় ঋণ দাতা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দরিদ্রতম দেশগুলোকে ঋণ না দিতে চায় বা কম দিতে চায় তাহলে দেশগুলো চীনের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে বাধ্য হতে পারে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলো চীনের সঙ্গে এসব দেশের এমন সম্পর্ক এড়াতে চায়। ইতিমধ্যেই চীন উন্নয়নশীল বিশ্বে ঋণ প্রদানে বিশ্বব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা এড়াতে, দরিদ্রতম দেশগুলোতে অনুদান ও সহজ শর্তের ঋণ বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে এমন খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, যা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি এসব দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা দিতে ঋণ মুক্তি কর্মসূচিগুলো সম্প্রসারিত করতে হবে। এসব দেশের অনন্য চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনাগুলো বিবেচনা করে ঝুঁকি মূল্যায়ন কাঠামো সংশোধন করা উচিত, যাতে তারা তহবিল প্রাপ্তি থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত না হয়। এ ছাড়া, তহবিল বরাদ্দ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে, যাতে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।
এর বাইরে, যদি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে চায় এবং দরিদ্রতম দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই নিজেদের সামনে থাকা বিরোধপূর্ণ বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। এতে উন্নত দেশগুলোর অংশীজনরা তাদের আর্থিক দায়িত্ব বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আর এক্ষেত্রে পিছিয়ে এলে তার ফলাফলের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিগত ৭৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের জন্য এক ধরনের লাইফ লাইন হিসেবে কাজ করেছে। এখন তাদের এই পথ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘ ও জার্নাল অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
যদিও রাশিয়া ও চীন শেখ হাসিনার সমর্থক ছিল, তবে বাংলাদেশিরা ভারত সরকারকে সবচেয়ে বেশি দায়ী মনে করে। অন্যদের তুলনায় ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবচেয়ে সক্রিয় হস্তক্ষেপকারী এবং শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্লজ্জ রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখা হয়...
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৯৫০ সালে দেশটিতে যেখানে প্রত্যেক নারী গড়ে ৫ দশমিক ৭টি হারে সন্তান জন্ম দিতেন, তা বর্তমানে ২—এ নেমে এসেছে। ভারতের ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রজনন হার এমন স্তরের নেমে গেছে যা আগামী কয়েক দশক অব্যাহত থাকলে দেশটির জনসংখ্যা আরও স্থিতিশীল থাকবে না, কমতে শুর
১২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশি হিন্দুরা প্রকৃতপক্ষে কতটা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। এই সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভুয়া খবরের যুগে প্রতিটি খবরকেই সন্দেহের চোখে দেখা উচিত। ‘গণহত্যা’ শব্দটি অবশ্যই অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দাবি। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অধ্যয়নকারী হিসেবে আমি বলতে পারি যে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যা পড়
১ দিন আগেবাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। এই ইস্যুতে ভারতের প্রতিবাদকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হিন্দু জাগরণ মঞ্চই ছিল প্রথম। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস শপথ নেওয়ার আগেই এই প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে সংগঠনটি। কিন্তু বাংলাদেশে...
২ দিন আগে