আমিনুল ইসলাম নাবিল
দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’
ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।
ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।
হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।
শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।
দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তাঁর বিদায়ের ঘোষণার পর নতুন চ্যান্সেলর পেতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মের্কেলের দলকে পরাজিত করে জয় পেয়েছে মধ্য-বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব কম। সরকার গঠনের জন্য এ জয় যথেষ্ট নয়। ফলে জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠনের কোনো উপায় নেই। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো এর মীমাংসা হয়নি। ফলে জার্মানির ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে, তা এখনো অনিশ্চিত।
নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের জোটসঙ্গী সিএসইউ ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রিন পার্টি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি (এফডিপি) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, অভিবাসনবিরোধী এএফডি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ও লেফট পার্টি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠন করা ছাড়া এখন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জার্মানিতে সরকার গঠনের জোট প্রক্রিয়া সহজ বিষয় নয়। সরকার গঠনে দীর্ঘসূত্রতা এর আগেও দেখেছে দেশটি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুবই কম হলে সরকার গঠন নিয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। এবারের নির্বাচনে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাই কারা জার্মানির ক্ষমতায় আসছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। সিডিইউ-সিএসইউ জোটের প্রার্থী আরমিন লাশেট নির্বাচনে হারের পরও বলেছিলেন, তাঁরা এখনো সরকার গঠনে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্কের হিসাব।’
জার্মানিতে ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠনের নজির আছে। দেশটিতে ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন হেলমুট স্মিটের দল ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে কত দিন লাগবে, সেই বিষয়ে জার্মানির সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।
এসপিডি অথবা সিডিইউ যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে দুটি দলকে কাছে টানতে হবে। কেননা দুটি দলকে সরকারে ভিড়ানো ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ শতাংশ) পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ‘কিংমেকার’ হিসেবে আলোচনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পাওয়া গ্রিন পার্টি এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এফডিপি। এই দুই দলকে কাছে টানতে মরিয়া এসপিডি এবং সিডিইউ।
নির্বাচনে পরাজয়ের পরও সিডিইউ দলের নেতা আরমিন লাশেট জোট সরকার গঠন ও চ্যান্সেলর হওয়া নিয়ে বিভিন্ন আশার কথা শোনালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফিকে হয়েছে। হারের পরও লাশেটের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এমনকি নিজ দলেও প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই নেতা। তবে লাশেট সরে দাঁড়ালেই যে মের্কেলের দল সিডিইউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, বিষয়টি এমন নয়। লাশেটের মতে, তিনি নিজে সরে দাঁড়ালেও ইউনিয়ন শিবির নেতৃত্ব দিতে এখনো প্রস্তুত।
এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়া বামপন্থী দল এসপিডি জোট সরকারের গঠনের বিষয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। গঠনমূলক পরিবেশে সংলাপ চলছে। এই প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বড়দিনের আগেই নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।’
ডয়চেভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সাধারণ সম্পাদকেরা সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভবত শুক্রবারই (আজ) সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৷ মধ্যস্থতাকারীরা সেই খসড়া যে যার দলের কাছে পেশ করে অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা করা হতে পারে।
জার্মানিতে তিন দলের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ বলা হয়ে থাকে। আর কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের প্রতীকের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত জোটকে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’ বলা হয়। উল্লেখ্য, এসপিডির প্রতীক লাল, এফডিপির হলুদ ও গ্রিন পার্টির প্রতীক সবুজ। এখন এসপিডি যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আর সিডিউ (কালো প্রতীক) যদি এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে, তাহলে সেটি হবে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’। শলৎস ও তাঁর দল এসপিডি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা যেতেই পারে, ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর চেয়ে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ‘জ্যামাইকা কোয়ালিশন’-এর আশা।
এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে নিয়ে এসপিডির সরকার গঠনের যে আলোচনা, সেটিও এগোচ্ছে জটিল পথে। কারণ, এই তিন দলের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ নিয়ে গ্রিন পার্টি ও এফডিপির বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তবে শেষমেশ যদি ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ ক্ষমতায় আসে, তাহলে ধরে নিতে হবে দলগুলো নিজেদের জায়গা থেকে অনেকখানি ছাড় দিয়েই সরকার গঠন করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে পারলে হয়তো শিগগিরই নতুন সরকারের ঘোষণা আসতে পারে। জনমত সমীক্ষাগুলো, ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’-এর পক্ষেই রায় দিচ্ছে।
ডয়চেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও জোট সরকার গড়ার স্বার্থে অনেক কিছু মেনেই আগাতে হয়। তবে কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ছাড় দিতে চাইবে না। যেমন এফডিপি জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই করহার বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতির সীমা শিথিলের মতো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থা একটু জটিল। জার্মানরা সরাসরি চ্যান্সেলরকে ভোট দেন না। দেশটির ভোটারেরা নির্বাচনে দুটি ভোট দিয়ে থাকেন। প্রথম ভোটটি তাঁরা নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দেন। আর দ্বিতীয় ভোটটি তাঁরা দেন পছন্দের দলের জন্য। ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পায়, সেই অনুপাতে ৫৯৮ সদস্যের আইনসভার বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। দলগুলোর দুই ধরনের প্রার্থী থাকে। যারা সরাসরি লড়বে, আর যারা শতাংশের হিসেবে সংসদে যাবে। শতাংশের হিসেবে কারা কারা সংসদে যাবে, সেটিও দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।
হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৫৯৮ হলেও বাস্তবে সেটি ছাড়িয়ে যায়। ধরুন, কোনো রাজ্যে একটি দল ৩০ শতাংশ ভোট পেল। সেই হিসাবে ৩০টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতলেন সেই দলের ৩৩ জন প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত ৩৩ জন সরাসরি সংসদে যাবে। এই যে তিনজন অতিরিক্ত যোগ হলেন, সেটিকে শতাংশে হিসাব করে অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোনো দলের ১০টি আসন পাওয়ার কথা থাকলে তারা পেয়ে যাবে ১১টি আসন। এভাবেই ভোটারদের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে জার্মান আইনসভার আসনসংখ্যা বাড়ে।
ভোটের হিসাবে জার্মানির নতুন আইনসভা আকার পেলে তখন শুরু হয় সরকার গঠনের হিসাব। এ ক্ষেত্রে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শুরু হয় জোটের হিসাব। আর তখনই সরকার গঠনের জন্য জন্ম হয় জটিল নানা সমীকরণের। সমঝোতার মাধ্যমে কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় ৫১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারলেই সরকার গঠনের অনুমতি মেলে। এ ক্ষেত্রে জোটে থাকা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটির নেতাই হন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।
শেষমেশ জার্মানিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আর যিনিই চ্যান্সেলর হন না কেন, তাঁর সামনে মূলত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জার্মান অর্থনীতির কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্বকে মনোযোগী হতে হবে। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে ডিজিটাইজেশন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতা এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা—এসবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতির উন্নতি হলেও ডিজিটাইজেশনে জার্মানি এখনো পিছিয়ে। জার্মান অর্থনীতিতে গাড়ি শিল্পের বড় ভূমিকা থাকলেও গাড়িসহ অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপ স্বল্পতায় ভুগছে দেশটি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিতে তরুণের চেয়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত এসব বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই নতুন জোট সরকারকে কাজ করতে হবে।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১৭ ঘণ্টা আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগে