সুইডেন ইস্যুতে আবার বেঁকে বসেছেন এরদোয়ান, কী আদায় করতে চান তিনি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ০৯
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ১১

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য পদ পেতে অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এর জন্য দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছে তুরস্ক। কিন্তু ইইউ নেতারা বারবার নানা অজুহাতে আঙ্কারাকে হতাশ করেছে। 

ইউরোপীয় নেতাদের এমন আচরণে এরদোয়ান বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেছেন, অনেক হয়েছে। ইইউর কাছ থেকে তিনি আর কিছু আশা করেন না। 

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুর্কি পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় এমন হতাশার কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, ‘৪০ বছর অপেক্ষা করার পর তুরস্ক এখন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে কিছু আশা করে না।’ 

এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছি, কিন্তু তারা তাদের দেওয়া কথা রাখেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আর কোনো নতুন শর্ত সহ্য করা হবে না।’ 

অবশ্য দর-কষাকষির হাতিয়ার ব্যবহারের সুযোগ তিনি হাতছাড়া করছেন না। দাবি আদায়ের আশা ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার মানুষ নন এরদোয়ান। 

ভূরাজনৈতিক অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সর্বশেষ ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানান এরদোয়ান। ন্যাটো সদস্য তুরস্কের সমর্থন ছাড়া এ সামরিক জোটের সদস্যপদ লাভ সম্ভব নয়। ফলে তখন এরদোয়ানের সব শর্ত মেনে নেয় সুইডেন।

 ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয় তুরস্ক। দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী এই দেশের। জোটের স্থল কমান্ডের সদর দপ্তর তুরস্কে। এ ছাড়া আরও নানা কারণে ইউরো–আটলান্টিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তুরস্ক ন্যাটোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। 

গত জুলাইয়ে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে সুইডেনের অনুরোধে রাজি হন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তবে আজ রোববার তুরস্কের পার্লামেন্ট অধিবেশনে বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার কথা বলা হয়। 

গত বছর ইউক্রেনের রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় সুইডেন। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখায় স্টকহোম। তুরস্ক ও হাঙ্গেরি বাদে ন্যাটোর বাকি সব সদস্য দেশ এতে সম্মত হয়েছে। 

তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখন নতুন করে বেঁকে বসেছেন। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ না পাওয়ার অভিমানের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। ফলে পর্যবেক্ষকেরা ধারণা করছেন, সুইডেন ইস্যুতে আবার ইইউর সঙ্গে দর-কষাকষি করতে চান এরদোয়ান। 

ব্লুমবার্গে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে কলাম লেখেন ববি ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘ইইউর সদস্য হতে হলে তুরস্কে বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে। এসবের মধ্য অন্যতম হলো মৃত্যুদণ্ডের আইন বাতিল করা। কিন্তু এরদোয়ান সেই আইন পুনর্বহাল করেছেন। ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দমন–নিপীড়ন ও শরণার্থীদের ইউরোপে পাঠানোর পর্যায়ক্রমিক হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখন ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের সঙ্গে তুরস্কের ইইউতে যোগদানকে গুলিয়ে ফেলছেন এরদোয়ান। এটি ইইউতে তুরস্কের যোগদানের পথে আরও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সত্যি বলতে, তুরস্কের ইইউতে যোগদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এখন স্বয়ং এরদোয়ান।’ 

এদিকে গত মঙ্গলবার তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বরাত দিয়ে বলা হয়, তুর্কি পার্লামেন্ট সুইডেনের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখবে যদি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার আঙ্কারার কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এফ–১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে। 

প্রসঙ্গত, তুরস্ক ১৯৮৭ সালে প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত