২০২৪ সালে বিটকয়েনের দাম ‘অর্ধেক’ নাকি ‘দ্বিগুণ’ হবে

পরাগ মাঝি
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২: ৩২
Thumbnail image

বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ধরনের অভিমত পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল এই মুদ্রাটির নানা উত্থান-পতন দেখা গেছে। ফলে এক বছর পর মুদ্রাটির অবস্থান কী হবে—তা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন। 

সম্প্রতি বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ জানতে চারজন বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের প্রতিবেদক নেরিন গ্রে দেশাই। মূলত আসন্ন বছর ২০২৪ সালে মুদ্রাটির অবস্থান কী হবে—তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের কাছে। এখানেও সম্পূর্ণ বিপরীত যুক্তি ও মত পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ বলছেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে বিটকয়েনের মূল্য পড়ে গিয়ে অর্ধেক হয়ে যাবে। আবার কেউ দেখছেন বিপুল সম্ভাবনা। তাঁদের মতে, মুদ্রাটির মূল্য বর্তমানের দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। 

বিটকয়েনের বর্তমান মূল্য যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি মাসের (ডিসেম্বর) শুরুর দিকেই হঠাৎ করে অস্বাভাবিক উত্থানের মধ্য দিয়ে শিরোনাম হয়েছে বিতর্কিত এই মুদ্রাটি। গত সপ্তাহেই এটির মূল্য ৪৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল; দুই বছরের মধ্যে যা কি-না সর্বোচ্চ। কিন্তু গত রোববার ঘটে আরেক কাণ্ড! মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই মুদ্রাটির মূল্য সাড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে দেখা গেছে। এর ফলে সেদিন মুদ্রাটির মূল্য ৪১ হাজার ডলারেরও নিচে নেমে যায়। 

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৪ সালে মুদ্রাটির অবস্থান কী হবে তা অনুমান করা সত্যিই খুব কঠিন। তবে এই বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফরেন এক্সচেঞ্জ রিসার্চের প্রধান জিওফ কেন্ডরিক মনে করেন, ২০২৪ সালে বিটকয়েনের মূল্যে বিপুল উত্থান দেখা যাবে। কেন্ডরিকের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আগামী বছরেই বিটকয়েন তার অতীতের রেকর্ড মূল্যকেও ছাড়িয়ে যাবে। এমনও হতে পারে এর মূল্য তখন ১ লাখ ডলারেরও বেশি হবে। 

যে বিবেচনায় কেন্ডরিক এমন মত দিয়েছেন তা হলো—নতুন বছরেই ক্রিপটো মুদ্রাকে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) দ্বারা অনুমোদন করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই অনুমোদন পেয়ে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিটকয়েন দিয়ে তাদের তহবিল আদান-প্রদান শুরু করবে। ফলে নিশ্চিতভাবেই বিপুল চাহিদা তৈরি হবে ডিজিটাল এই মুদ্রাটির। 

এখন পর্যন্ত বিটকয়েন তার সর্বোচ্চ মূল্যে পৌঁছেছিল ২০২১ সালে। সেই বছর মুদ্রাটির মূল্য ৬৯ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। যদিও পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বিটকয়েনের মূল্যে ধস নামে। মাত্র ১৭ হাজার ডলার মূল্য নিয়ে ২০২২ সাল শেষ করেছিল মুদ্রাটি। তবে চলতি বছর মুদ্রাটির মূল্য আবার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ৪৩ হাজার ৬০৬ ডলারের সমান মূল্য মান নিয়ে দাঁড়িয়েছিল বিটকয়েন। 

মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন দ্বারা বিটকয়েনের অনুমোদন লাভের বিষয়ে আশাবাদী বৈশ্বিক ক্রিপটো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ‘জেমিনি’-এর প্রধান কৌশল কর্মকর্তা মার্শাল বেয়ার্ড। বিটকয়েন ধীরে ধীরে মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে বলে মনে করেন তিনি। বেয়ার্ডের মতে, মূলধারার অর্থনীতির ‘স্বর্ণমান’-এর সঙ্গে ডিজিটাল সম্পদের ক্ষেত্রে বিটকয়েনকে তুলনা করা যায়। 

এদিকে বিটকয়েনের ভাগ্যে আরও বড় বড় উত্থান-পতন অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ ‘ডেরিবিট’-এর প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা লুক স্ট্রিজার্স। আগামী জানুয়ারিতে বিটকয়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। লুক মনে করেন, অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগেই অর্থাৎ চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই বেশ কয়েকবার উত্থান-পতন হবে মুদ্রাটির। 

বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে হতাশাবাদী মন্তব্যটি করেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাটোস ইনসাইট’-এর কৌশলগত উপদেষ্টা গিলস উবাগস। বিটকয়েনের কয়েকটি দুর্বলতা বের করছেন তিনি। তাঁর মতে—ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা কিছুটা জটিল, এই মুদ্রা খরচ এবং কাগুজে টাকায় রূপান্তর করা কঠিন, রেপুটেশনও ভালো নয়, আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—এটি অস্থির। ফলে বিটকয়েনকে প্রকৃত মুদ্রা হিসেবে কখনোই ভাবা হয়নি এবং দীর্ঘদিন মান ধরে রাখার ক্ষমতাও নেই এটির। 

গিলস বলেন, ‘বর্তমানে ৪০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের বিটকয়েন যে আবারও ২০ হাজার ডলারে নামবে না—তা জোর গলায় বলার উপায় নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত