নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ

ট্রাম্প জিতলে কতটা বদলাবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি

  • চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখন যে উত্তেজনা চলছে, তার বিরোধিতা করছেন ট্রাম্প
  • ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রায়ই অবস্থান বদলেছেন। এমন হতে পারে এবারও
  • রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বলছেন, ট্রাম্পের আমলে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়নি
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৯
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২৪
নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর নাচছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার নেভাদার হেন্ডারসনে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নীতি গ্রহণ করেছিলেন। সেটা হলো সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ (আমেরিকা ফার্স্ট)। কিন্তু এরপর যেটা দেখা গেল, সেটা হলো তাঁর বিশৃঙ্খল পররাষ্ট্রনীতি। এটা ট্রাম্পের সহযোগী ও উপদেষ্টারা খুব ভালোভাবেই জানেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়, ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পরও থেমে যাননি ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের এতই প্রভাব যে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই তিনি প্রচার শুরু করেছেন। এবারের নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবার নির্বাচিত হলেও তিনি আগের মতোই দেশ চালাবেন। অর্থাৎ নিজের স্বাক্ষরকে এবারও অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করবেন। একই সঙ্গে ইঙ্গিত দিলেন, বাইডেনের রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি থাকবে না।

ট্রাম্প কী কী করবেন, সেই ইঙ্গিতও ইতিমধ্যে দিয়েছেন। গত অক্টোবরে এ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয় পরিষদের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেন, তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন বাহিনীকে ব্যবহার করে তিনি চীনকে হুমকি দেবেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চীনের সি চিন পিং আমাকে সম্মান করেন এবং তিনি জানেন আমি পাগলাটে।’ এই ‘পাগলাটে’ শব্দের ওপর বেশ জোরই দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসবে কি না, আগামী মঙ্গলবারের ভোটে তা নির্ধারিত হয়ে যাবে। পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে গুটিয়ে নেবে নাকি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বহাল থাকবে, এই দিনই সেটা নির্ধারিত হয়ে যাবে।

এটা খানিকটা সত্য যে ট্রাম্প যদি হেরে যান, তবে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর শাসনব্যবস্থা একটা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হয়ে থাকবে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র তাঁর আমলের মতো করে পরিচালিত হয়েছিল। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যদি হেরে যান, তবে বাইডেন যুগের অবসান হবে। বাইডেনের এ যুগে পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

রিপাবলিকানদের অবশ্য বাইডেনের আমল নিয়ে এক ভিন্ন ধারণা আছে। তাঁরা বলে থাকেন, ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র চলমান দুটি যুদ্ধে (ইউক্রেন ও গাজা) জড়ায়নি। এ ছাড়া রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের আমলে চীনের সঙ্গে উত্তেজনাও এত তীব্র ছিল না।

তবে ট্রাম্পের আমলে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আগে ঘটেনি। এমনও ঘটেছে—কোনো দেশের নেতা বা কোনো ধনকুবের ট্রাম্পকে ফোন করে কথা বলেছেন আর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেমন সিরিয়ার কথা বলা যেতে পারে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের এক ফোনকলে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে সেনা সরিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প যখন বুঝতে পেরেছিলেন, তখন তুরস্ককে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘যদি তুরস্ক কিছু করে, যা আমাদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি আমি ধ্বংস করে দেব।’ আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনও নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন ট্রাম্পকে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের ভাবনা কেমন, তা উঠে এসেছে তাঁর প্রশাসনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের কথায়। একদিন ট্রাম্প তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কেন উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল?’ জবাবে বোল্টন বলেন, ‘তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে, যা দিয়ে মার্কিনদের মারতে পারবে।’ এরপর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে।’

ইউক্রেন ইস্যুতেও বিভিন্ন কথা বলেছেন ট্রাম্প। একসময় বলেছেন, তাঁর কাছে ইউক্রেনের গুরুত্ব নেই। ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায় এই দেশের গুরুত্ব তার কাছে কম। আবার ২০২২ সালে রাশিয়া যখন সেখানে হামলা চালায়, তখন নিজেকে ইউক্রেনের রক্ষক হিসেবে দাবি করেছেন। আবার এই হামলার জন্য পুতিনের প্রশংসাও করছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি এ-ও বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে এই যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করবেন। আবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে বসে তিনি যখন কথা বলেছেন, তখন পুতিনকে ধমক দিয়েছেন তিনি।

গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান দিন দিন পরিবর্তন হয়েছে। ইসরায়েলকে একসময় এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন। আবার হামাস ও হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ নেতারা ইসরায়েলের হাতে মারা যাওয়ার পর তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘আপনি যা করার দরকার, তা-ই করুন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত