অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলে সরাসরি হামলা, অন্তত অর্ধশতকের মধ্যে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। গতকাল শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে ইসরায়েলকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করে শত শত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। এর বেশিরভাগই প্রতিহত করেছে বলে দাবি করছে ইসরায়েল। তবে অন্তত একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি সেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামরিক নজির স্থাপন করেছে ইরান।
এটি ছিল কোনো দেশের দ্বারা পরিচালিত একক বৃহত্তম ড্রোন হামলা। আর প্রায় অর্ধ শতকের শত্রুতার ইতিহাসে ইরান এই প্রথম সরাসরি ইসরায়েলে আক্রমণ করল।
তেহরানের এমন ঐতিহাসিক সামরিক পদক্ষেপের রাজনৈতিক, সামরিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে সেটি খুঁজে দেখা যেতে পারে। ইরানের এই হামলা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিও বদলে দিতে পারে এই ঘটনা।
রাজনীতি
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই সামরিক অপারেশনটিকে ‘ট্রু প্রমিজ’ বা ‘সত্য প্রতিশ্রুতি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা ইসরায়েল এবং অন্যদের আক্রমণের পাল্টা প্রতিশোধ ও শাস্তির প্রতিশ্রুতির কথাই বলে আসছেন এতোদিন ধরে।
এই হামলাটি ছিল গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার সরাসরি প্রতিশোধ। ওই হামলায় সিরিয়া ও লেবাননে নেতৃত্বদানকারী অপারেশনের দায়িত্বে থাকা দুই জেনারেল এবং আরও ছয়জন লোকসহ সাতজন আইআরজিসি সদস্য নিহত হন।
এই অভিযান ছিল মূলত ইরানের প্রতিরোধ সক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বমূলক নীতি এবং এই অঞ্চলজুড়ে সামরিক হামলা, বিশেষ করে ইরাকে শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হত্যার পর ইরান আপসের নীতি অবলম্বন করেছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা।
গাজা যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সিরিয়ার আরেক শীর্ষ আইআরজিসি কমান্ডার রাজি মুসাভিকে ডিসেম্বরের শেষের দিকে হত্যার পর ইরানি কর্মকর্তারা ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখিয়েছেন বলেই মনে করা হয়।
নিষ্ক্রিয়তা, দুর্বল আক্রমণ, অঞ্চলজুড়ে গোষ্ঠীগুলোর সমন্বিত ‘প্রতিরোধ অক্ষ’— সব মিলিয়ে এই সামরিক পদক্ষেপে ইরানের সন্তোষ প্রকাশ— পুরো বিষয়টি স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের জন্য অত্যন্ত বিলাসী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এমনকি তেহরানও স্বীকার করে যে, এই ঘটনা ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াতে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার সুবিধা নিতে পারে।
অন্যদিকে, নজিরবিহীন ইরানি হামলা হয়তো গাজা উপত্যকায় কয়েক হাজার নারী ও শিশুর মৃত্যু থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে মুসলিম বিশ্বে ইরানের সফট পাওয়ার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। যেখানে দেশটিকে অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে।
গাজায় হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা অস্বীকার করেনি। তুরস্ক শুধু চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলে কিছু রপ্তানি সীমিত করতে শুরু করে, যখন ইসরায়েলি সরকার দেশটিকে অবরুদ্ধ গাজায় সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যেখানে গাজায় শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। সৌদি আরব এবং তুরস্ক উভয়ই গাজায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে যাচ্ছে।
কূটনৈতিক মিশনে হামলা ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদে আত্মরক্ষার ‘অন্তর্নিহিত অধিকার’–এর কথা বলা আছে। ফলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরান আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি হাজির করতে পারবে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল ব্যাপকভাবেই জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
ইরানের প্রথম সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রদর্শন
ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য ঠিক কতটি ড্রোন বা ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে ইরানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ৩০০ টিরও বেশি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
ইরানি ড্রোনগুলো গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দুই বছরেরও বেশি আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেন, রুশ সামরিক বাহিনী ইরানের ডিজাইন করা শাহেদ ড্রোন তাঁদের ভূখণ্ডে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রোববার (১৪ এপ্রিল) জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ৫০ কেজি ওজনের অপেক্ষাকৃত ছোট ওয়ারহেড বহনকারী শাহেদ–১৩৬ কামিকাজ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
আইআরজিসি–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে বলা হয়েছে, শাহেদ–২৩৮, যেটিতে ১৩৬ মডেলের প্রোপেলারের পরিবর্তে একটি টার্বোজেট ব্যবহার করা হয়েছে— ইসরায়েল আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে। ২৩৮ মডেলটি উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ গতির। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার। উচ্চগতি পেতে গিয়ে এই ড্রোন থেকে শত্রুর র্যাডার ফাঁকি দেওয়ার মতো কিছু কৌশল ব্যবহারের সক্ষমতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
ইরান দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগারের অধিকারী। তবে ইসরায়েল হামলাই ছিল তার সক্ষমতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইমাদ এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাভেহ ইসরায়েলে হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের পালমাচিম বিমানঘাঁটিতে হামলার সিমুলেশনসহ বৃহৎ আকারের সামরিক মহড়ায় আইআরজিসি ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ডেজফুল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও উৎক্ষেপণ করা হয়।
ইরানের কাছে ফাত্তাহ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে এটি মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সক্ষম। একই প্রযুক্তির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। তবে প্রথম দিকের হামলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
তবে কয়েক ঘণ্টার বহুমাত্রিক হামলায় ইরান তার সর্বকালের সবচেয়ে বড় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা করতে পেরেছে। এই হামলাতেই ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সত্যিকার কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর দিকে সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রম করেছে।
আইআরজিসি কমান্ডার–ইন–চিফ হোসেন সালামি বলেন, অপারেশনটি সাফল্যের একটি স্তর অর্জন করেছে যা আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে! ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শুধু সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নেগেভ মরুভূমিতে নেভাটিম বিমানঘাঁটি। সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জন্য এই ঘাঁটিই ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ইরানের নেতাদের বিবেচনার তালিকায় রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাবের চেয়ে এই হামলায় সমস্যা জর্জরিত ইরানি অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম বলেই মনে হবে। কারণ কনস্যুলেটে হামলার পর প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই আক্রমণ করা হলো।
কিন্তু স্থানীয় বাজারে একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আর এটি প্রত্যাশিতও ছিল। বিদেশি মুদ্রার মানের ঊর্ধ্বগতি এবং আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরানি মুদ্রা রিয়ালের দরপতন চলছেই। ওই মুদ্রা স্থিতিশীলতা পাওয়ার আগেই রোববার মার্কিন ডলারের বিপরীতে এর দাম প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজারে নেমেছে। ইরানের ইতিহাসে রিয়ালের এটিই সর্বনিম্ন মান।
আধা–সরকারি তাসনিম নিউজ ওয়েবসাইট রোববার জানিয়েছে, তেহরান এবং অন্যান্য বাজারে মুদ্রা এবং সোনার লেনদেন খুব কম হচ্ছে। কারণ সর্বস্তরে আশঙ্কা ও উদ্বেগ এখন চরমে।
তেহরানের প্রসিকিউটর অফিস রোববার জানিয়েছে, তারা ‘সমাজের মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করার’ কারণে একজন সাংবাদিক এবং জাহান–ই সনাত নামে একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
আরও পড়ুন:
ইসরায়েলে সরাসরি হামলা, অন্তত অর্ধশতকের মধ্যে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। গতকাল শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে ইসরায়েলকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করে শত শত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। এর বেশিরভাগই প্রতিহত করেছে বলে দাবি করছে ইসরায়েল। তবে অন্তত একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি সেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামরিক নজির স্থাপন করেছে ইরান।
এটি ছিল কোনো দেশের দ্বারা পরিচালিত একক বৃহত্তম ড্রোন হামলা। আর প্রায় অর্ধ শতকের শত্রুতার ইতিহাসে ইরান এই প্রথম সরাসরি ইসরায়েলে আক্রমণ করল।
তেহরানের এমন ঐতিহাসিক সামরিক পদক্ষেপের রাজনৈতিক, সামরিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে সেটি খুঁজে দেখা যেতে পারে। ইরানের এই হামলা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিও বদলে দিতে পারে এই ঘটনা।
রাজনীতি
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই সামরিক অপারেশনটিকে ‘ট্রু প্রমিজ’ বা ‘সত্য প্রতিশ্রুতি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা ইসরায়েল এবং অন্যদের আক্রমণের পাল্টা প্রতিশোধ ও শাস্তির প্রতিশ্রুতির কথাই বলে আসছেন এতোদিন ধরে।
এই হামলাটি ছিল গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার সরাসরি প্রতিশোধ। ওই হামলায় সিরিয়া ও লেবাননে নেতৃত্বদানকারী অপারেশনের দায়িত্বে থাকা দুই জেনারেল এবং আরও ছয়জন লোকসহ সাতজন আইআরজিসি সদস্য নিহত হন।
এই অভিযান ছিল মূলত ইরানের প্রতিরোধ সক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বমূলক নীতি এবং এই অঞ্চলজুড়ে সামরিক হামলা, বিশেষ করে ইরাকে শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হত্যার পর ইরান আপসের নীতি অবলম্বন করেছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা।
গাজা যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সিরিয়ার আরেক শীর্ষ আইআরজিসি কমান্ডার রাজি মুসাভিকে ডিসেম্বরের শেষের দিকে হত্যার পর ইরানি কর্মকর্তারা ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখিয়েছেন বলেই মনে করা হয়।
নিষ্ক্রিয়তা, দুর্বল আক্রমণ, অঞ্চলজুড়ে গোষ্ঠীগুলোর সমন্বিত ‘প্রতিরোধ অক্ষ’— সব মিলিয়ে এই সামরিক পদক্ষেপে ইরানের সন্তোষ প্রকাশ— পুরো বিষয়টি স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের জন্য অত্যন্ত বিলাসী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এমনকি তেহরানও স্বীকার করে যে, এই ঘটনা ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াতে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার সুবিধা নিতে পারে।
অন্যদিকে, নজিরবিহীন ইরানি হামলা হয়তো গাজা উপত্যকায় কয়েক হাজার নারী ও শিশুর মৃত্যু থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে মুসলিম বিশ্বে ইরানের সফট পাওয়ার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। যেখানে দেশটিকে অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে।
গাজায় হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা অস্বীকার করেনি। তুরস্ক শুধু চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলে কিছু রপ্তানি সীমিত করতে শুরু করে, যখন ইসরায়েলি সরকার দেশটিকে অবরুদ্ধ গাজায় সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যেখানে গাজায় শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। সৌদি আরব এবং তুরস্ক উভয়ই গাজায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে যাচ্ছে।
কূটনৈতিক মিশনে হামলা ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদে আত্মরক্ষার ‘অন্তর্নিহিত অধিকার’–এর কথা বলা আছে। ফলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরান আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি হাজির করতে পারবে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল ব্যাপকভাবেই জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
ইরানের প্রথম সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রদর্শন
ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য ঠিক কতটি ড্রোন বা ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে ইরানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ৩০০ টিরও বেশি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
ইরানি ড্রোনগুলো গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দুই বছরেরও বেশি আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেন, রুশ সামরিক বাহিনী ইরানের ডিজাইন করা শাহেদ ড্রোন তাঁদের ভূখণ্ডে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রোববার (১৪ এপ্রিল) জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ৫০ কেজি ওজনের অপেক্ষাকৃত ছোট ওয়ারহেড বহনকারী শাহেদ–১৩৬ কামিকাজ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
আইআরজিসি–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে বলা হয়েছে, শাহেদ–২৩৮, যেটিতে ১৩৬ মডেলের প্রোপেলারের পরিবর্তে একটি টার্বোজেট ব্যবহার করা হয়েছে— ইসরায়েল আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে। ২৩৮ মডেলটি উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ গতির। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার। উচ্চগতি পেতে গিয়ে এই ড্রোন থেকে শত্রুর র্যাডার ফাঁকি দেওয়ার মতো কিছু কৌশল ব্যবহারের সক্ষমতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
ইরান দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগারের অধিকারী। তবে ইসরায়েল হামলাই ছিল তার সক্ষমতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইমাদ এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাভেহ ইসরায়েলে হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের পালমাচিম বিমানঘাঁটিতে হামলার সিমুলেশনসহ বৃহৎ আকারের সামরিক মহড়ায় আইআরজিসি ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ডেজফুল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও উৎক্ষেপণ করা হয়।
ইরানের কাছে ফাত্তাহ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে এটি মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সক্ষম। একই প্রযুক্তির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। তবে প্রথম দিকের হামলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
তবে কয়েক ঘণ্টার বহুমাত্রিক হামলায় ইরান তার সর্বকালের সবচেয়ে বড় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা করতে পেরেছে। এই হামলাতেই ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সত্যিকার কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর দিকে সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রম করেছে।
আইআরজিসি কমান্ডার–ইন–চিফ হোসেন সালামি বলেন, অপারেশনটি সাফল্যের একটি স্তর অর্জন করেছে যা আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে! ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শুধু সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নেগেভ মরুভূমিতে নেভাটিম বিমানঘাঁটি। সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জন্য এই ঘাঁটিই ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ইরানের নেতাদের বিবেচনার তালিকায় রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাবের চেয়ে এই হামলায় সমস্যা জর্জরিত ইরানি অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম বলেই মনে হবে। কারণ কনস্যুলেটে হামলার পর প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই আক্রমণ করা হলো।
কিন্তু স্থানীয় বাজারে একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আর এটি প্রত্যাশিতও ছিল। বিদেশি মুদ্রার মানের ঊর্ধ্বগতি এবং আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরানি মুদ্রা রিয়ালের দরপতন চলছেই। ওই মুদ্রা স্থিতিশীলতা পাওয়ার আগেই রোববার মার্কিন ডলারের বিপরীতে এর দাম প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজারে নেমেছে। ইরানের ইতিহাসে রিয়ালের এটিই সর্বনিম্ন মান।
আধা–সরকারি তাসনিম নিউজ ওয়েবসাইট রোববার জানিয়েছে, তেহরান এবং অন্যান্য বাজারে মুদ্রা এবং সোনার লেনদেন খুব কম হচ্ছে। কারণ সর্বস্তরে আশঙ্কা ও উদ্বেগ এখন চরমে।
তেহরানের প্রসিকিউটর অফিস রোববার জানিয়েছে, তারা ‘সমাজের মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করার’ কারণে একজন সাংবাদিক এবং জাহান–ই সনাত নামে একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
১ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৭ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে