আমিনুল ইসলাম নাবিল
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকেই ‘পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি’ খ্যাত ইউক্রেনে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন কার্যত বন্ধ। দেশটি যুদ্ধের আগে যা কিছু মজুত করেছিল, বন্দর বন্ধ থাকায় সেগুলোও রপ্তানি করতে পারছে না।
ইউক্রেনের বন্দরগুলো যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো না যায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট সামাল দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট প্রকট হলে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়বে নিম্ন আয়ের দেশগুলো।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকটের দায় অবশ্য একা নিতে নারাজ রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার পরিণতিতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট শুরু হয়েছে।
দায় যারই হোক, খাদ্যের সংকট প্রকট হলে এর ফল ভোগ করতে হবে গোটা বিশ্বকেই, এটি অবধারিত। সম্প্রতি ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে। ‘খাদ্য বিপর্যয় আসছে’ শিরোনামে প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের প্রভাবে গোটা বিশ্বই ব্যাপক ক্ষুধার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি সমাধানে সুনজর দেওয়া এখন সবার দায়িত্ব।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন হয়তো বুঝতেও পারছেন না তিনি কতটুকু ক্ষতি করছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও তিনি অগণিত মানুষের জীবন ধ্বংস করছেন। এত বেশি মাত্রায় ক্ষতি হচ্ছে যে তাঁকে অনুশোচনায়ও ভুগতে হতে পারে। করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যবিপর্যয়কে আরও ত্বরান্বিত করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শস্য ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না ইউক্রেন। ইউক্রেন জলসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ওডেসা বন্দর অবরোধ করেছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ ক্যালরি সরবরাহ করে থাকে। বিশ্বজুড়ে মোট গমের ২৮ শতাংশ, বার্লির ২৯ শতাংশ, ভুট্টার ১৫ শতাংশ এবং সূর্যমুখী তেলের ৭৫ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে দেশ দুটি। শুধু ইউক্রেনই বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের খাবারের ক্যালরির জোগান দেয়।
লেবানন ও তিউনিসিয়ার আমদানি করা খাদ্যশস্যের প্রায় অর্ধেকই জোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। লিবিয়া ও মিশরের ক্ষেত্রে তা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চলতি বছরের শুরু থেকে গমের দাম ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর গত ১৬ মে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে গমের দাম আরও ৬ শতাংশ বাড়ে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত হারে খাদ্যের দাম বাড়ছে। এটি একটি বড় ধাক্কা। এর জন্য দায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা। খাদ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো সংকটে পড়তে পারে।
হাউস অব কমন্সের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, যদি ইউক্রেন শস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানি করতে না পারে, তাহলে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার এ বছর শেষে দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও এটি বড় উদ্বেগের কারণ। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এটি ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
বেইলি বলেন, ‘ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী দুটি কথা বলেছেন। ইউক্রেনের খাদ্য মজুত আছে, কিন্তু তারা এই মুহূর্তে তার নাগাল পাচ্ছে না। গম ও ভোজ্যতেলের অন্যতম বড় সরবরাহকারী ইউক্রেন হলেও এই মুহূর্তে এসব রপ্তানির সুযোগ তার নেই। এটি ভীষণ উদ্বেগজনক। শুধু এ দেশের (যুক্তরাজ্যের) জন্য নয়। নৈরাশ্যের জন্য দুঃখিত; কিন্তু সত্যিই এটি ভীষণ উদ্বেগজনক।’
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র দেশগুলো খাদ্যের সংকটে পড়তে পারে। যুদ্ধপূর্ব সময়ের মতো যদি ইউক্রেন তাঁদের পণ্য রপ্তানি পুনরায় শুরু করতে না পারে, তাহলে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে, যা বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে। এই সংঘাত লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের বন্দর বন্ধ রয়েছে। দেশটি পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। অথচ দেশটি একসময় প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা ও গমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য বিপুল পরিমাণে রপ্তানি করত।
জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ কমেছে। ফলে বিকল্প জায়গা থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দাম বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
ইকোনমিস্ট বলছে, শুধু যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে এমনটি শুধু নয়, যুদ্ধের আগেই ২০২২ সাল একটি ভয়াবহ সংকটের বছর হবে বলে সতর্ক করেছিল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী অন্যতম দুই দেশ ভারত ও চীনে ফলন কম হয়েছে। চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চল। সবকিছু মিলে সংকট প্রকট হচ্ছে।
দরিদ্র দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো তাদের বাজেটের ২৫ শতাংশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো ৪০ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্যে ব্যয় করছে। খাদ্যে ব্যয় এভাবে বাড়তে থাকলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়বে দেশগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে গমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করত লেবানন। পণ্য আমদানিতে অনেকখানিই ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল দেশটি। যুদ্ধের প্রভাবে লক্ষ করা গেছে লেবাননে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শত শত পয়েন্ট বেড়েছে। গত ২০২০ সালের চেয়ে মূল্যস্ফীতি সূচকে ৩ হাজার শতাংশের বেশি পয়েন্ট বেড়েছে। অব্যাহতভাবে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশেই জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আটার দাম ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে ইরানের জনগণ।
ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের আট মাসে ইউক্রেনের সাতটি বন্দর দিয়ে ৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন শস্য রপ্তানি হয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর পর রেল অবকাঠামোর ক্ষতি, বন্দর বন্ধ থাকা এবং কৃষ্ণসাগরে রুশ অবরোধের কারণে রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।
মোদ্দাকথা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এই মুহূর্তে সবার চাওয়া যুদ্ধের শেষ হোক, বিশ্বজুড়ে চলমান খাদ্যসংকট দূর হোক। পোপ ফ্রান্সিস ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানির ওপর বাধা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, শস্যকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকেই ‘পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি’ খ্যাত ইউক্রেনে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন কার্যত বন্ধ। দেশটি যুদ্ধের আগে যা কিছু মজুত করেছিল, বন্দর বন্ধ থাকায় সেগুলোও রপ্তানি করতে পারছে না।
ইউক্রেনের বন্দরগুলো যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো না যায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট সামাল দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট প্রকট হলে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়বে নিম্ন আয়ের দেশগুলো।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকটের দায় অবশ্য একা নিতে নারাজ রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার পরিণতিতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট শুরু হয়েছে।
দায় যারই হোক, খাদ্যের সংকট প্রকট হলে এর ফল ভোগ করতে হবে গোটা বিশ্বকেই, এটি অবধারিত। সম্প্রতি ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে। ‘খাদ্য বিপর্যয় আসছে’ শিরোনামে প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের প্রভাবে গোটা বিশ্বই ব্যাপক ক্ষুধার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি সমাধানে সুনজর দেওয়া এখন সবার দায়িত্ব।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন হয়তো বুঝতেও পারছেন না তিনি কতটুকু ক্ষতি করছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও তিনি অগণিত মানুষের জীবন ধ্বংস করছেন। এত বেশি মাত্রায় ক্ষতি হচ্ছে যে তাঁকে অনুশোচনায়ও ভুগতে হতে পারে। করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যবিপর্যয়কে আরও ত্বরান্বিত করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শস্য ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না ইউক্রেন। ইউক্রেন জলসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ওডেসা বন্দর অবরোধ করেছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ ক্যালরি সরবরাহ করে থাকে। বিশ্বজুড়ে মোট গমের ২৮ শতাংশ, বার্লির ২৯ শতাংশ, ভুট্টার ১৫ শতাংশ এবং সূর্যমুখী তেলের ৭৫ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে দেশ দুটি। শুধু ইউক্রেনই বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের খাবারের ক্যালরির জোগান দেয়।
লেবানন ও তিউনিসিয়ার আমদানি করা খাদ্যশস্যের প্রায় অর্ধেকই জোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। লিবিয়া ও মিশরের ক্ষেত্রে তা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চলতি বছরের শুরু থেকে গমের দাম ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর গত ১৬ মে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে গমের দাম আরও ৬ শতাংশ বাড়ে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত হারে খাদ্যের দাম বাড়ছে। এটি একটি বড় ধাক্কা। এর জন্য দায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা। খাদ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো সংকটে পড়তে পারে।
হাউস অব কমন্সের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, যদি ইউক্রেন শস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানি করতে না পারে, তাহলে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার এ বছর শেষে দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও এটি বড় উদ্বেগের কারণ। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এটি ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
বেইলি বলেন, ‘ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী দুটি কথা বলেছেন। ইউক্রেনের খাদ্য মজুত আছে, কিন্তু তারা এই মুহূর্তে তার নাগাল পাচ্ছে না। গম ও ভোজ্যতেলের অন্যতম বড় সরবরাহকারী ইউক্রেন হলেও এই মুহূর্তে এসব রপ্তানির সুযোগ তার নেই। এটি ভীষণ উদ্বেগজনক। শুধু এ দেশের (যুক্তরাজ্যের) জন্য নয়। নৈরাশ্যের জন্য দুঃখিত; কিন্তু সত্যিই এটি ভীষণ উদ্বেগজনক।’
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র দেশগুলো খাদ্যের সংকটে পড়তে পারে। যুদ্ধপূর্ব সময়ের মতো যদি ইউক্রেন তাঁদের পণ্য রপ্তানি পুনরায় শুরু করতে না পারে, তাহলে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে, যা বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে। এই সংঘাত লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের বন্দর বন্ধ রয়েছে। দেশটি পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। অথচ দেশটি একসময় প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা ও গমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য বিপুল পরিমাণে রপ্তানি করত।
জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ কমেছে। ফলে বিকল্প জায়গা থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দাম বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
ইকোনমিস্ট বলছে, শুধু যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে এমনটি শুধু নয়, যুদ্ধের আগেই ২০২২ সাল একটি ভয়াবহ সংকটের বছর হবে বলে সতর্ক করেছিল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী অন্যতম দুই দেশ ভারত ও চীনে ফলন কম হয়েছে। চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চল। সবকিছু মিলে সংকট প্রকট হচ্ছে।
দরিদ্র দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো তাদের বাজেটের ২৫ শতাংশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো ৪০ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্যে ব্যয় করছে। খাদ্যে ব্যয় এভাবে বাড়তে থাকলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়বে দেশগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে গমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করত লেবানন। পণ্য আমদানিতে অনেকখানিই ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল দেশটি। যুদ্ধের প্রভাবে লক্ষ করা গেছে লেবাননে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শত শত পয়েন্ট বেড়েছে। গত ২০২০ সালের চেয়ে মূল্যস্ফীতি সূচকে ৩ হাজার শতাংশের বেশি পয়েন্ট বেড়েছে। অব্যাহতভাবে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশেই জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আটার দাম ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে ইরানের জনগণ।
ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের আট মাসে ইউক্রেনের সাতটি বন্দর দিয়ে ৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন শস্য রপ্তানি হয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর পর রেল অবকাঠামোর ক্ষতি, বন্দর বন্ধ থাকা এবং কৃষ্ণসাগরে রুশ অবরোধের কারণে রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।
মোদ্দাকথা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এই মুহূর্তে সবার চাওয়া যুদ্ধের শেষ হোক, বিশ্বজুড়ে চলমান খাদ্যসংকট দূর হোক। পোপ ফ্রান্সিস ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানির ওপর বাধা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, শস্যকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে