Ajker Patrika

মালদ্বীপ ইস্যুতে মোদির এক ঢিলে দুই পাখি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ১৯
মালদ্বীপ ইস্যুতে মোদির এক ঢিলে দুই পাখি

এ যেন এক যুদ্ধ পরিস্থিতি। কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে বিষয়টি এখন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। শুরুটা হয়েছিল সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণকে কেন্দ্র করে। লাক্ষাদ্বীপ সাগরের মালাবার উপকূলে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কতগুলো প্রবাল দ্বীপ নিয়ে এই অঞ্চলটির অবস্থান।

সবকিছু ঠিকই ছিল। লাক্ষাদ্বীপের জলে-স্থলে মুক্ত বালকের মতো বেশ খোশমেজাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন মোদি। সেসবের ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে গত কয়েক দিন ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের মানুষকে মালদ্বীপ না গিয়ে লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণেরও আহ্বান জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এ অবস্থায় গোলমাল বেধে যায় মোদির ভ্রমণ নিয়ে মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা মোদিকে ‘পুতুল’, ‘ভাঁড়’ বলে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এমনকি লাক্ষাদ্বীপকে নিয়েও তাঁরা উপহাস করেন।

মালদ্বীপের মন্ত্রীদের এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে নয়াদিল্লি। তোলপাড় শুরু হয় দুই দেশেই। মালদ্বীপের ভারতপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ এ ধরনের মন্তব্যকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দেন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সরকারকে এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলেন।

ঘটনার জের ধরে গতকাল রোববার তিন মন্ত্রীকেই বরখাস্ত করে মুইজ্জুর সরকার। শুধু তা-ই নয়, আজ সোমবার ভারতে নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনারকেও তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের বিষয়ে নয়াদিল্লির গভীর উদ্বেগের কথা হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়—দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামতের দায়িত্ব এখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকেই নিতে হবে।

মোদিকে নিয়ে মন্তব্য করা তিন জুনিয়র মন্ত্রীর মধ্যে দুজনই নারী। ধারণা করা হয়, তাঁরা দুজনই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের আচরণের বিষয়ে মুইজ্জুর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে নয়াদিল্লি।

সম্প্রতি ভারতের লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।এ তো গেল কূটনীতিক পর্যায়ের কর্মকাণ্ড। বিষয়টি ভারতের সাধারণ মানুষকেও নাড়া দিয়েছে। এই ঘটনার পর অনেক ভারতীয় তাঁদের পূর্বনির্ধারিত মালদ্বীপ সফর বাতিল করেছেন। প্রতিবছরই ভারতের অসংখ্য পর্যটক মালদ্বীপে ছুটি কাটাতে যান। এবার দেশটির বলিউড তারকা, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ আওয়াজ তুলেছেন—ছুটি কাটাতে এখন থেকে আর মালদ্বীপ নয়, লাক্ষাদ্বীপই হোক নতুন গন্তব্য। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই মালদ্বীপের টিকিট কাটা থাকলেও তা বাতিল করে দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এখন ‘ভারতের শত্রু’ হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ।

তবে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে সম্পর্কের এমন অবনতি শুরু হয় মোদির সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণেরও আগে থেকে। গত বছর মালদ্বীপের নির্বাচনে ভারতপন্থী প্রেসিডেন্ট পরাজিত হলে ক্ষমতায় আসেন চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মুইজ্জু। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মুইজ্জুর আগে ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। সোলির আমলে মালদ্বীপ সফরেও গিয়েছিলেন মোদি। সে সময় দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, মালদ্বীপের জলসীমায় পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে ভারতীয় নৌসেনা। পাশাপাশি মালদ্বীপেও মোতায়েন থাকবে ভারতীয় কিছু সেনা।

এদিকে মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই জনগণকে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘটনার জের ধরেই সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপ সফর করে ওই অঞ্চলটিকে দেশের মানুষের কাছে মালদ্বীপের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেই অর্থে মালদ্বীপের মন্ত্রীদের মন্তব্যের জের ধরে সেই দেশের প্রতি ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা মোদির ইচ্চারই প্রতিফলন। এ বিষয়ে কারও সন্দেহ আছে কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত