Ajker Patrika

বিবিসির বিশ্লেষণ: মণিপুরে কী হচ্ছে এবং কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিবিসির বিশ্লেষণ: মণিপুরে কী হচ্ছে এবং কেন

দুই মাসের বেশি সময় ধরে উত্তাল ভারতের ছোট্ট রাজ্য মণিপুর। চলছে জাতিগত সংঘাত। নতুন করে এ সংঘাত শুরুর পরদিন, অর্থাৎ ৪ মের একটি ভিডিও নিয়ে মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভারত। ভিডিওটিতে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে ঘোরাতে দেখা গেছে। ভিডিওটি গত বুধবার ভাইরাল হয়।

মণিপুর কোথায়, কারা সেখানে থাকেন? 
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটি বাংলাদেশের পূর্বদিকে পড়েছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গেও এর সীমান্ত রয়েছে। এই রাজ্যে প্রায় ৩৩ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশিই হলো মেইতেই জনগোষ্ঠীর। কুকি ও নাগারা মিলে মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ। 

কী হচ্ছে? 
মে মাসের শুরুতে রাজ্যটিতে সংঘাত শুরু হয়। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ। তবুও ইতিমধ্যে সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩০ জন। আহত হয়েছেন আরও ৪০০ জন। রাজ্যের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হয়েছেন বাস্তুহারা। মণিপুরে পুলিশের বিপুল গোলাবারুদ লুট হয়েছে। কয়েক শ গির্জা এবং ১২টির বেশি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। তছনছ করা হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। 

সংঘাতের শুরু কীভাবে? 
এবারের সমস্যার শিকড়ে রয়েছে মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকিসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর এক আইনি লড়াই। প্রায় এক দশক নানাভাবে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা আইনিভাবে তফসিলি উপজাতি বা ‘শিডিউলড ট্রাইব’ (এসটি) তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বক্তব্য, স্বাধীনতার আগে স্বাধীন মণিপুর রাজ্যে তাঁদের ‘উপজাতি’ হিসেবেই স্বীকৃতি ছিল।

৩ মার্চ মণিপুর হাইকোর্ট এক নির্দেশে রাজ্য সরকারকে বলেছিলেন, মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠী তফসিলি উপজাতি হিসেবে সংরক্ষণ পেতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে। নির্দেশটি হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে ১৮ এপ্রিল প্রকাশ করার পর বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে উপজাতি সম্প্রদায়। বিক্ষোভ দিনকয়েকের মধ্যেই সহিংস আন্দোলনে রূপ নেয়। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের পাশের জেলা চূড়াচাঁদপুরে ৩ মে উপজাতি ছাত্রদের একটি মিছিল বের হয়।

কিছুটা গুজবের কারণে এবং মিছিলে অস্ত্র থাকার খবরে সহিংসতা ছড়াতে শুরু করে ইম্ফলের আশপাশে, চূড়াচাঁদপুরে এবং এর আশপাশের অন্তত আরও চার জেলায়। এক দিনে নিহত হন অন্তত ২০ জন মানুষ।

কুকিরা বলছেন, স্থানীয় সমাজ ও সরকারে ইতিমধ্যে প্রভাব বিস্তার করেন মেইতেইরা। তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেলে কুকিদের বসবাসের স্থানে তাঁরা গিয়ে ঘাঁটি গড়তে পারেন। অর্থাৎ জমি কিনতে পারেন এবং বসতি গড়তে পারেন। কিন্তু ধারণা করা হয়, সেখানে সংঘাতের পেছনে রয়েছে অসংখ্য অন্তর্নিহিত কারণ।

কুকি জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, তাদের নির্মূলে মেইতেই নেতৃত্বাধীন সরকার একটি উপায় বের করেছে। তা হলো মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইকে সামনে আনা; কিন্তু এর আড়ালে চলছে কুকি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে অবৈধ অভিবাসনও সেখানে উত্তেজনা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।

কারা লড়ছেন কার বিরুদ্ধে? 
স্বাধীন দেশের দাবিতে মেইতেই, কুকি ও নাগা মিলিশিয়ারা দশকের পর দশক একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই জনগোষ্ঠীদের ধর্ম পৃথক এবং প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর মিলিশিয়ারাই লড়াই করে আসছেন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে। তবে সবশেষ জাতিগত সংঘাত ও উত্তেজনা মূলত মেইতেই ও কুকিদের মধ্যেই। ফ্রন্টিয়ার মণিপুর নামের একটি গণমাধ্যমের সম্পাদক ধীরেন এ সাদকপাম বলেন, এবারের সংঘাতটি পুরোপুরি জাতিগত। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। 

কুকি ও মেইতেই কারা? 
মেইতেইরা থাকেন মণিপুর, মিয়ানমার ও আশপাশের এলাকায়। এদের বেশির ভাগ হলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী। কুকি জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাঁরা। মণিপুরের অনেকেই তাদের শিকড় মিয়ানমারে খুঁজে পেতে পারেন। মেইতেই জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই বসবাস করেন ইম্ফাল উপত্যকায়, আর আশপাশের পাহাড় ও তার বাইরে বসবাস করেন কুকিরা। 

নারীকে কেন হামলা ও অপদস্থের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে? 
মণিপুরের ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই মণিপুরী তরুণীকে বিবস্ত্র করে একদল উত্তেজিত জনতা রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে একটি মাঠে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বুধবার ওই দুই নারীর ভিডিও ভাইরাল হয়। এত দিন পর ওই পুরোনো ভিডিও কী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল, কারা তা করল, কোন উদ্দেশ্যে—তা দ্রুত আলোচনায় উঠে আসে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সেটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, এর পরপরই তা পরিণত হয় টক অব দ্য কান্ট্রিতে।

দিল্লিতে কর্মরত বিবিসির গীতা পান্ডে বলেন, সংঘাতে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিকে হাতিয়ার বানানো নতুন কিছু নয়। মণিপুরের দুই নারীর ভিডিওচিত্র তেমনই। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মেইতেই জনগোষ্ঠীর এক নারীকে কুকি মিলিশিয়ারা ধর্ষণ করছেন, এমন এক ভুয়া খবরের জেরে ওই দুই নারীকে ধর্ষণ ও হয়রানি করা হয়। 

মণিপুর চালাচ্ছেন কারা? 
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিই মণিপুর রাজ্য শাসন করছে। সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন এন বীরেন সিং। তিনি মেইতেই জনগোষ্ঠীর। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতে জনগোষ্ঠীর হলেও বিধানসভায় ৬০ আসনের মধ্যে ৪০টিই রয়েছে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। 

কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে? 
৪ মে সংঘাত শুরুর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করেছে সরকার। কিন্তু মণিপুর ইস্যুতে দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো মন্তব্য করেননি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এত দিন মুখ না খুললেও এ ইস্যুতে বৃহস্পতিবার প্রথম কথা বলেন মোদি। তিনি বলেন, ‘আমি জাতিকে আশ্বস্ত করছি, আইন তার সর্বশক্তি দিয়ে চলবে। মণিপুরের মেয়েদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা কখনো ক্ষমা করা যাবে না।’ তবে বেশির ভাগ ভারতীয় প্রশ্ন তুলেছেন, মণিপুর ইস্যুতে জনসমক্ষে মন্তব্য করতে এত দেরি কেন করলেন মোদি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত