গানের টেলর সুইফট কেন ট্রাম্প শিবিরে আতঙ্কের নাম

জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১৫: ২৪
Thumbnail image

টেলর সুইফট: তিনি এখন এলভিস প্রিসলি বা বিটলসকেও ছাড়িয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে প্রভাবশালী সেলিব্রিটি তিনি।

এক ইরাস ট্যুরেই মার্কিন অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের নগদ অর্থপ্রবাহ তৈরি করেছেন। আমেরিকার উচ্ছন্নে যাওয়া কিশোরী থেকে শুরু করে মালয়েশিয়ার হিজাবি কিশোরীটি পর্যন্ত তাঁকে আইডল মানছে। এভাবে বিশ্ব সংস্কৃতিতেও তাঁর প্রভা ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার সংস্কৃতি দূত বললেও অত্যুক্তি হবে না। অনেক স্থানে ভূরাজনৈতিক বেড়া ভেঙে ঢুকে পড়েছেন সুইফট। চীনের মার্কেটগুলোতে এখন পশ্চিমা শিল্পীদের গান বাজে না। শুধু সুইফট সেখানে ব্যতিক্রম!

সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে কনসার্ট করেছেন সুইফট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে এই ট্যুরেই সিঙ্গাপুরের জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার! এই কারণেই ট্যুর আয়োজন নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বিরোধ বেধে গিয়েছিল। খুব গোস্যা করেছে ফিলিপাইন। ৪০ কোটির খবর শুনে নিশ্চয়ই ক্ষোভে ফুঁসছে প্রতিবেশীরা!

এর মধ্যে কানসাস সিটি চিফসের তারকা ফুটবলার কেলভিন কেলসের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন সুইফট। তাঁরা এখন এক ছাদের নিচেই থাকছেন। সম্প্রতি সুপার বৌলে শিরোপা জিতেছে চিফস। কেলভিনও কম বড় তারকা নন। মজার বিষয় হলো, দুজনেরই রাজনৈতিক মতাদর্শে দারুণ মিল। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এই তারকা জোড়ের প্রভাব রয়েছে রাজনীতিতেও।

সুইফট যে শুধু বড় কনসার্টে বিপুল লোকসমাগমের ম্যাজিকে পরিণত হয়েছেন তা-ই নয়, রাজনীতির ময়দানেও ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। সেটি বোঝায় যায় বিরোধী রিপাবলিকান শিবিরের প্রতিক্রিয়া ও অস্বস্তি দেখে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করছেন না। অথচ হলিউডের মেরিল স্ট্রিপের মতো তারকাকে তিনি ‘ওভার রেটেড’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, সুইফট আতঙ্ক কতটা জেঁকে বসেছে রিপাবলিকান শিবিরে।

২০২০ সালের নির্বাচনেই রিপাবলিকানেরা অবশ্য সুইফটের প্রভাব-প্রতিপত্তি আঁচ করতে পেরেছে। তখনই বোঝা গেছে, সুইফট বিপুলসংখ্যক তরুণকে হয় ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোটবুথে নিতে পারেন, নয়তো নিরপেক্ষ থাকতে উৎসাহিত করতে পারেন!

২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে টেনেসি অঙ্গরাজ্যে দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন সুইফট। এ ছাড়া রাজ্যজুড়ে ৩৫ হাজার নতুন ভোটারের নিবন্ধন নিশ্চিত করেছিলেন। তার মানে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশজুড়ে তাঁর লাখ লাখ ভক্ত বড় ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে।

সুইফটের ভক্তদের হাতি মার্কার বুথে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাঁরা হয় গাধায় সিল মারবেন নয়তো বুথেই যাবেন না!

রিপাবলিকানরা একেবারে চুপচাপও নেই অবশ্য। সাইবার যোদ্ধারা এরই মধ্যে সুইফটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেছে। তারা বলেই ফেলেছে, সুইফট হচ্ছেন পেন্টাগনের এজেন্ট। তাঁকে বুড়ো বাইডেনের পক্ষে মাঠে নামানো হয়েছে।

তারা নেমেছে কেলভিন কেলসের বিরুদ্ধেও। এমনকি সুপার বৌলের পুরো স্ক্রিপ্ট নাকি তথাকথিত ডিপ স্টেটের সাজানো!

এসবে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইফট দুর্বল বাইডেনের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারেন বলেই আশা করা হচ্ছে। আমেরিকান সুইফটিরা বড় অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে!

সুইফটের এই জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কী? এরই মধ্যে ১৪টি গ্র্যামি জিতেছেন। টানা চারবার একক বর্ষসেরা অ্যালবামের রেকর্ড গড়েছেন সুইফট। সবচেয়ে বেশি সময় বিলবোর্ড টপ চার্টে থাকার রেকর্ড তাঁর দখলে।

টেলর সুইফটের কিংবদন্তিতুল্য জনপ্রিয়তা নিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অনেক তত্ত্ব চর্চাও চলছে। পোশাক-আশাকে সুইফটকে যেন মনে হয়, উডল্যান্ড হিলস মলের সামনে কারও লিফটের আশায় অপেক্ষারত পাশের বাড়ির মেয়েটি! এই মিশুক প্রকৃতি তাঁর বড় গুণ। তাঁর ব্র্যান্ডিংয়ের আরেকটি বড় কৌশল, আপাত অগোছাল, কেয়ারলেস থাকা। মঞ্চে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা, এক পায়ের জুতার হিল ছুটে যাওয়ার পর ব্যালেরিনার মতো দাঁড়িয়ে থেকে শো চালিয়ে যাওয়া বা ভুল করে ফ্রকের এক হাতের স্লিভে হাত গলাতে ভুলে যাওয়া—এমন আরও অনেক কিছু!

সেদিক থেকে বিয়ন্সে যেন প্রিন্সেস! তাঁকে দূর থেকে দেখা যায়, কামনা করা যায়, কিন্তু কাছে যাওয়া যায় না, ছোঁয়া তো দূরের কথা! বিশেষায়িত করে বলতে গেলে, বিয়ন্সের সংগীত স্বর্গীয়-প্রেমময়, আরিয়ানার আছে কণ্ঠ, ডুয়া লিপা ভালো নাচতে পারেন না কিন্তু তিনি দারুণ!

আর টেলর সুইফট? মঞ্চে যে ভালো নাচেন এমন নয়। তিনি আসলে প্রায় নাচেনই না! কিন্তু যখন মঞ্চে ওঠেন—ঝলমলে পোশাক, দীর্ঘাঙ্গী, প্রগাঢ় লাল অধররঞ্জনি মাখানো কিউপিডের ধনুকের মতো ঠোঁট, ঘাড় বাঁকিয়ে পিয়ানোর চাবিতে রঙিন আঙুল, কণ্ঠে সম্পর্ক, একাকিত্ব আর বিচ্ছেদের বিষাদ ও খেদ ঝেরে ফেলার উচ্ছ্বাসমাখা গান।

এটুকুই শেষ নয়, সংগীত শিল্পও বদলে দিয়েছেন সুইফট: শো টিকিট, মেধাস্বত্ব—এমন অনেক কিছুই নতুন এনেছেন। এমনকি সংগীতকলাতে নতুন সংযোজন ঘটেছে তাঁর হাত ধরে। তিনি নতুন স্বর, নতুন পিচ আবিষ্কার করেছেন। নিজেই গান লেখেন মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে। এখন অস্কারের মঞ্চেও উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। এককথায়, সুইফট কমপ্লিট প্যাকেজ!

লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত