ফের ট্রাম্পের উত্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উদ্বেগে মিত্ররা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ৪০
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৪৪

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কিছু মার্কিন মিত্র ট্রাম্পের আমেরিকান বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে মোড় নেওয়ার বিষয়ে চিন্তিত। আর ট্রাম্প এই নীতিতে ঝুঁকেছেন কারণ অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলির বিবেচনায় ভোটারদের সমর্থন পাবেন তিনি।

এডিসন রিসার্চের একটি জরিপ অনুসারে, গত সোমবার আইওয়াতে এক ভোটভুটিতে ট্রাম্প প্রশ্নাতীত জয় পেয়েছেন। পররাষ্ট্র নীতি ইস্যুকে সামনে রেখে অঙ্গরাজ্যের ককাসে ১০ জনের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

ককাসে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন অর্থনীতিকে প্রথম এবং তিনজন অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

গত দশকে রয়টার্স/ইপসোসের ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চিত্র একই। যেখানে আমেরিকানরা বিদেশিদের সঙ্গে জড়িত বিষয়াবলিকে দেশের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখেন। তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈদেশিক দ্বন্দ্ব নয় বরং অভিবাসনকেই সংকট মনে করেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্স/ইপসোস জরিপ বলছে, দেশব্যাপী নাগরিকদের মাত্র ৬ শতাংশ বলেছেন যুদ্ধ এবং বিদেশি সংঘাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা, যেখানে ১১ শতাংশ অভিবাসন এবং ১৯ শতাংশ অর্থনীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখেন। আর ১০ শতাংশ অপরাধকে উল্লেখ করেছে।

অভ্যন্তরীণ উদ্বেগগুলো দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদ বেড়েছে, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে। কারণ ট্রাম্প এবং অন্যান্য নেতারা ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন নীতির সমালোচনা করেছেন। ওই সময় ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, এই সহায়তা আমেরিকাকে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।

ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকেরা সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বৈদেশিক পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে তাগিদ দিচ্ছেন। তবে ট্রাম্পের সহযোগিরা বলেছেন, তিনি ইউরোপকে প্রতিরক্ষা সমর্থন কমিয়ে দেবেন, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সঙ্কুচিত করবেন এবং আবারও তাঁর বৈদেশিক নীতির মূল হাতিয়ার হিসাবে শুল্ক প্রয়োগ করবেন।

কূটনীতিকেরা ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং তাইওয়ানের জন্য আরও বেশি তহবিলের অনুমোদন প্রস্তাবে কংগ্রেস রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ তাঁরা এখন আরও শক্তিশালী চীনের মুখোমুখি রয়েছেন।

রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস গত নভেম্বরে ফেডারেল সরকারের রাজস্ব খাত থেকে সমন্বয় করে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার একটি বিল পাস করে। পরে ডেমোক্র্যাটিক সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের জনমত বিশেষজ্ঞ ডিনা স্মেল্টজ বলেছেন, ‘ট্রাম্প আমাদের বিভিন্ন জোট এবং বর্হিবিশ্বে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন, যেগুলোকে মোটামুটিভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল।’

সেপ্টেম্বরে শিকাগো কাউন্সিলের একটি জরিপে পাওয়া গেছে, ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান ভেবেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বৈশ্বিক বিষয়াবলির বাইরে থাকা উচিত’। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবার কোনো দল এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানকে সমর্থন করল।

ন্যাটোতে সংশয়

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং সিআইএর প্রধান পদে অনুগতদের বসাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যারা তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি প্রণয়নে আরও স্বাধীনতা দেবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক ফরাসি কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন এই মাসের শুরুতে বলেছেন, ২০২০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শীর্ষ ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের বলেছিলেন ইউরোপ আক্রমণের মুখে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র কখনই ইউরোপকে সাহায্য করবে না এবং ওয়াশিংটন সামরিক জোট ন্যাটো থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করবে। সঙ্গে কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডাকেও নিয়ে যাবে।

এটা শুধু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাই নয়, যারা মিত্রদের সাহায্যের ব্যাপারে সন্দিহান। জানুয়ারিতে রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনে অস্ত্র এবং অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে তিনজন রিপাবলিকানের মধ্যে একজন এবং প্রতি পাঁচজনের মধ্যেও মাত্র একজন সমর্থন করেন।

প্রায় অর্ধেক রিপাবলিকান ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানোকে সমর্থন করেছেন। তবে অর্থ এবং অস্ত্র উভয়ের জন্য সমর্থনের মাত্রা কিছুটা কম ছিল।

ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দেশগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘এটি প্রথমবার সহজ ছিল না এবং দ্বিতীয়বারেও এর ব্যতিক্রম হবে না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত