নোবেলজয়ী আসেমোগলুর নিবন্ধ
চিলিতে অগাস্তো পিনোশের স্বৈরশাসনের পতনের পর জনগণের মধ্যে নতুন সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দলীয় মতাদর্শের লোকদের সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। ভোটারদের প্রত্যাশা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াই মূলত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মূলে। নর্ডিক দেশগুলোর সোশ্যাল ডেমোক্রেসির ইতিহাসে এর প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় কী কী জরুরি তার ইঙ্গিত মিলবে ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড্যারন আসেমোগলোর নিবন্ধ থেকে। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
অনলাইন ডেস্ক
উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশগুলোতে উন্নত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনেক ভালো মডেল আছে। চিলিতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের ব্যর্থ প্রচেষ্টা আমাদের একটি পাঠ শিখিয়েছে। চিলি দেখিয়েছে, উন্নত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত নয়।
লাতিন আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ চিলি এখনো জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নির্মম শাসন এবং ঐতিহাসিক বৈষম্যের উত্তরাধিকার নিয়ে ভুগছে। ১৯৮৮ সালের গণভোটের পর চিলি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে কিছুটা অগ্রগতি লাভ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিকে কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে উত্তরণ এবং শিক্ষা ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক অসমতা কমাতে সাহায্য করেছে। তবে এখনো বড় ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে। কেবল আয়ে নয়, সরকারি সেবা, উচ্চ শিক্ষা এবং শ্রমবাজারের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে দেশটিতে এখনো ব্যাপক অসমতা রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, চিলিতে এখনো ১৯৮০ সালে পিনোশে যে সংবিধান আরোপ করেছিলেন সেটিই রয়ে গেছে।
মন্দের ভালো হিসেবে বিষয়টিকে নবযাত্রার মতো মনে হলেও, চিলি যা করছে তা ভুলভাবে করেছে। ২০২০ সালের গণভোটে নতুন সংবিধান রচনার জন্য বিপুল পরিমাণ ভোটার সমর্থন প্রকাশ করেন। এরপর নতুন সংবিধান রচনার বিষয়টি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে অর্পণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংবিধান পরিষদের সদস্য বাছাইয়ের জন্য ২০২১ সালে যে নির্বাচন হয় সেটিতে নির্বাচিতরা মাত্র ৪৩ শতাংশ ভোট পান। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থীই ছিলেন চরম বামপন্থী মহল থেকে আসা। যারা ব্যবসা–বাণিজ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নানাবিধ নতুন অধিকার প্রতিষ্ঠা করার দৃঢ় আদর্শিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যাই হোক, এই সংবিধান পরিষদ যখন নতুন সংবিধান পাসের জন্য গণভোট দেয় তখন চিলির ৬২ শতাংশ ভোটার তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর, একই ধরনের প্রচেষ্টা হয় অন্য উপায়ে। এবারে ডানপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠরা একটি নতুন সংবিধানের প্রথম খসড়ার প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের তৈরি আরেকটি খসড়া গণভোটে দিয়েছিল। নতুন এই খসড়া সংবিধানও যথেষ্ট জনসমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়।
এই অভিজ্ঞতা যারা এই লাইনে কাজ করেন তাঁদের কাছে পরিচিত লাগার কথা। কারণ চিলিই একমাত্র দেশ নয় যেখানে একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠান এমন পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার বিরোধিতা করেছে। একই ধরনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঘটছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর ফলে (গণতান্ত্রিক) প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন পুনর্নির্মাণ করা কি সম্ভব? এ ক্ষেত্রে আমি এবং আমার সহকর্মী নিকোলাস আয়াজম্যান, সেভাত আখসয়, মার্টিন ফিজবিন এবং কার্লোস মোলিনার সাম্প্রতিক কাজ হয়তো কিছু সূত্র দিতে পারে। আমরা দেখতে পেয়েছি, যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তারা সেগুলোকে সমর্থন করে। তবে তারা কেবল তখনই গণতন্ত্রকে সফল মনে করবে যখন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা, সরকারি সেবা এবং অন্য যেসব সেবা তারা প্রত্যাশা করে সেগুলো পাবে।
গণতন্ত্রে মানুষের চাহিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ বা অন্যান্য অস্থিরতার সময়ে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন কমে যায় এবং যখন জনগণ ভালো সরকারি সেবা, কম অসমতা এবং সীমিত বা শূন্য দুর্নীতি উপভোগ করে, তখন সমর্থন বাড়ে। আমরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ইতিহাস থেকে যে পাঠগুলো পাচ্ছি তা স্পষ্ট মনে হচ্ছে। সোজা কথায় বলা যায়, আমরা যদি একটি ভালো গণতন্ত্র তৈরি করতে চাই, তাহলে আমাদের শুরু করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে, যা মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
যেহেতু অনেক দেশে অসমতা বাড়ছে এবং করপোরেশনগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তাই এটি যুক্তিসংগত যে, গণতন্ত্রকে সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং অপ্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো—এই একই কাজ ডানপন্থী এবং বামপন্থীরা পৃথক উপায়ে করতে চায়। চিলির ক্ষেত্রে বামপন্থীদের কঠোর ব্যবসাবিরোধী এজেন্ডা অযৌক্তিক। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভালো বিকল্প হলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলগুলোর উদ্ভাবিত মডেল। মূলত ১৯২৯ সালের শেয়ারবাজারে বিপর্যয় এবং মহামন্দার (গ্রেট ডিপ্রেশন) পর এই মডেলের আবির্ভাব হয়। দেশগুলোতে যখন বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বৈষম্য কমানোর জন্য স্পষ্ট নীতির প্রয়োজন ছিল তখনই এই মডেলের সূত্রপাত।
নর্ডিক অঞ্চলের দেশগুলোতে সোশ্যাল ডেমোক্রেসি বা সামাজিক গণতন্ত্রের উৎপত্তি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। কিছু মানুষ মনে করে, এই দেশগুলো সব সময় সমতা ও সহযোগিতার প্রতি প্রাকৃতিকভাবে ঝুঁকে ছিল। আবার একদল এসব দেশকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ বা গণতান্ত্রিক সমাজবাদী মডেল হিসেবে দেখে। প্রকৃতপক্ষে কোনোটিই সত্য নয়।
বিশ শতকের শুরুতে সুইডেন এবং নরওয়ে উভয় দেশেই বৈষম্য ছিল প্রবল। ১৯৩০ সালে নরওয়ের গিনি সহগ (বৈষম্য পরিমাপ) ছিল ১.০০–এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৫৭। অর্থাৎ, আজকের দুনিয়ার লাতিন আমেরিকার যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি বৈষম্য ছিল দেশ দুটিতে। উভয় দেশেই শিল্প খাতে সংঘাতের ঘটনা ছিল নিয়মিত। যেসব শ্রমিক দল এসব সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই পরে ক্ষমতা কেন্দ্রে উঠে আসে এবং রাজনীতির মূল দন্ড ছিল মার্কসবাদ। কিন্তু তারা ক্ষমতায় আসার পর তাদের পূর্ববর্তী বিপ্লবী এবং কঠোর আদর্শ থেকে সরে আসে। তার বদলে, তারা বড় পরিসরে সুসংহত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, শ্রম বাজার ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমতা আনা—ইত্যাদি সংস্কারের প্রতিশ্রুতির প্রচারণা চালায়।
নরওয়ের লেবার পার্টি ১৯৩০ সালে নির্বাচনে বাজে ফলাফল করার পর কট্টর মার্কসবাদী এজেন্ডা থেকে সরে আসে। এই ঘটনা তখনকার ড্যানিশ এবং সুইডিশ শ্রমিক দলগুলোর মতো লেবার পার্টি আরও বাস্তব বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে এবং জনগণের চাহিদা বিবেচনায় নীতি বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। দলটি একটি ব্যাপক শিক্ষা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। যাতে গ্রামীণ এলাকায় পড়াশোনার মান উন্নত হয়। ১৯৩৫ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দলটি পরের বছর ‘ফোক স্কুল আইন’ বাস্তবায়ন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
তুমাস পেককারিনেন, কিয়েল সালভানেস এবং ম্যাটি সারভিমাকিসহ সাম্প্রতিক কাজগুলোতে আমরা দেখিয়েছি যে, নরওয়ের বিদ্যালয় শিক্ষা সংস্কার কেবল গ্রামীণ শিক্ষার মান উন্নত করেনি, এটি নরওয়ের রাজনীতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কারণ যারা এই সংস্কারের সুবিধা পেয়েছিল (প্রথমে অভিভাবকেরা) তারা লেবার পার্টির প্রতি তাদের সমর্থন জারি রেখেছিলেন। ফলে নরওয়ের ‘সামাজিক গণতন্ত্র’–এর মডেলকে সমর্থনকারী একটি ভোটার জোট তৈরি হতে পেরেছিল। সোজা কথায়, দলটি এমন সেবাগুলোই দিতে শুরু করেছিল যা ভোটারেরা চেয়েছিল এবং এর বিপরীতে ভোটারেরা দলটিকে পরের নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছিল।
সুইডেনেও ব্যাপকভাবে একই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৩২ সালে প্রথম নির্বাচনী জয়ের পর সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি উচ্চ মজুরি, শিল্পে স্থিতিশীলতা এবং একটি স্থিতিশীল ম্যাক্রোইকোনমিক (সামষ্টিক অর্থনীতি) পরিবেশ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে। এরপর পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ভোটে জিতে ক্ষমতায় টিকে ছিল তারা।
যারা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে ও নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে চায় যাতে বৈষম্য দূর করা এবং অসহায়দের সুরক্ষা দেওয়া যায়—তাদের জন্য এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো, জনগণের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করে এমন একটি সংস্কারমূলক এজেন্ডা গ্রহণ করার মাধ্যমে গণতন্ত্র কার্যকর করা। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, বাম বা ডান যেকোনো চরমপন্থী নীতি ভোটারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থই হবে এবং এ ধরনের প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশগুলোতে উন্নত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনেক ভালো মডেল আছে। চিলিতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের ব্যর্থ প্রচেষ্টা আমাদের একটি পাঠ শিখিয়েছে। চিলি দেখিয়েছে, উন্নত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত নয়।
লাতিন আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ চিলি এখনো জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নির্মম শাসন এবং ঐতিহাসিক বৈষম্যের উত্তরাধিকার নিয়ে ভুগছে। ১৯৮৮ সালের গণভোটের পর চিলি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে কিছুটা অগ্রগতি লাভ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিকে কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে উত্তরণ এবং শিক্ষা ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক অসমতা কমাতে সাহায্য করেছে। তবে এখনো বড় ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে। কেবল আয়ে নয়, সরকারি সেবা, উচ্চ শিক্ষা এবং শ্রমবাজারের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে দেশটিতে এখনো ব্যাপক অসমতা রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, চিলিতে এখনো ১৯৮০ সালে পিনোশে যে সংবিধান আরোপ করেছিলেন সেটিই রয়ে গেছে।
মন্দের ভালো হিসেবে বিষয়টিকে নবযাত্রার মতো মনে হলেও, চিলি যা করছে তা ভুলভাবে করেছে। ২০২০ সালের গণভোটে নতুন সংবিধান রচনার জন্য বিপুল পরিমাণ ভোটার সমর্থন প্রকাশ করেন। এরপর নতুন সংবিধান রচনার বিষয়টি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে অর্পণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংবিধান পরিষদের সদস্য বাছাইয়ের জন্য ২০২১ সালে যে নির্বাচন হয় সেটিতে নির্বাচিতরা মাত্র ৪৩ শতাংশ ভোট পান। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থীই ছিলেন চরম বামপন্থী মহল থেকে আসা। যারা ব্যবসা–বাণিজ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নানাবিধ নতুন অধিকার প্রতিষ্ঠা করার দৃঢ় আদর্শিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যাই হোক, এই সংবিধান পরিষদ যখন নতুন সংবিধান পাসের জন্য গণভোট দেয় তখন চিলির ৬২ শতাংশ ভোটার তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর, একই ধরনের প্রচেষ্টা হয় অন্য উপায়ে। এবারে ডানপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠরা একটি নতুন সংবিধানের প্রথম খসড়ার প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের তৈরি আরেকটি খসড়া গণভোটে দিয়েছিল। নতুন এই খসড়া সংবিধানও যথেষ্ট জনসমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়।
এই অভিজ্ঞতা যারা এই লাইনে কাজ করেন তাঁদের কাছে পরিচিত লাগার কথা। কারণ চিলিই একমাত্র দেশ নয় যেখানে একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠান এমন পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার বিরোধিতা করেছে। একই ধরনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঘটছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর ফলে (গণতান্ত্রিক) প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন পুনর্নির্মাণ করা কি সম্ভব? এ ক্ষেত্রে আমি এবং আমার সহকর্মী নিকোলাস আয়াজম্যান, সেভাত আখসয়, মার্টিন ফিজবিন এবং কার্লোস মোলিনার সাম্প্রতিক কাজ হয়তো কিছু সূত্র দিতে পারে। আমরা দেখতে পেয়েছি, যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তারা সেগুলোকে সমর্থন করে। তবে তারা কেবল তখনই গণতন্ত্রকে সফল মনে করবে যখন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা, সরকারি সেবা এবং অন্য যেসব সেবা তারা প্রত্যাশা করে সেগুলো পাবে।
গণতন্ত্রে মানুষের চাহিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ বা অন্যান্য অস্থিরতার সময়ে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন কমে যায় এবং যখন জনগণ ভালো সরকারি সেবা, কম অসমতা এবং সীমিত বা শূন্য দুর্নীতি উপভোগ করে, তখন সমর্থন বাড়ে। আমরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ইতিহাস থেকে যে পাঠগুলো পাচ্ছি তা স্পষ্ট মনে হচ্ছে। সোজা কথায় বলা যায়, আমরা যদি একটি ভালো গণতন্ত্র তৈরি করতে চাই, তাহলে আমাদের শুরু করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে, যা মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
যেহেতু অনেক দেশে অসমতা বাড়ছে এবং করপোরেশনগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তাই এটি যুক্তিসংগত যে, গণতন্ত্রকে সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং অপ্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো—এই একই কাজ ডানপন্থী এবং বামপন্থীরা পৃথক উপায়ে করতে চায়। চিলির ক্ষেত্রে বামপন্থীদের কঠোর ব্যবসাবিরোধী এজেন্ডা অযৌক্তিক। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভালো বিকল্প হলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলগুলোর উদ্ভাবিত মডেল। মূলত ১৯২৯ সালের শেয়ারবাজারে বিপর্যয় এবং মহামন্দার (গ্রেট ডিপ্রেশন) পর এই মডেলের আবির্ভাব হয়। দেশগুলোতে যখন বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বৈষম্য কমানোর জন্য স্পষ্ট নীতির প্রয়োজন ছিল তখনই এই মডেলের সূত্রপাত।
নর্ডিক অঞ্চলের দেশগুলোতে সোশ্যাল ডেমোক্রেসি বা সামাজিক গণতন্ত্রের উৎপত্তি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। কিছু মানুষ মনে করে, এই দেশগুলো সব সময় সমতা ও সহযোগিতার প্রতি প্রাকৃতিকভাবে ঝুঁকে ছিল। আবার একদল এসব দেশকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ বা গণতান্ত্রিক সমাজবাদী মডেল হিসেবে দেখে। প্রকৃতপক্ষে কোনোটিই সত্য নয়।
বিশ শতকের শুরুতে সুইডেন এবং নরওয়ে উভয় দেশেই বৈষম্য ছিল প্রবল। ১৯৩০ সালে নরওয়ের গিনি সহগ (বৈষম্য পরিমাপ) ছিল ১.০০–এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৫৭। অর্থাৎ, আজকের দুনিয়ার লাতিন আমেরিকার যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি বৈষম্য ছিল দেশ দুটিতে। উভয় দেশেই শিল্প খাতে সংঘাতের ঘটনা ছিল নিয়মিত। যেসব শ্রমিক দল এসব সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই পরে ক্ষমতা কেন্দ্রে উঠে আসে এবং রাজনীতির মূল দন্ড ছিল মার্কসবাদ। কিন্তু তারা ক্ষমতায় আসার পর তাদের পূর্ববর্তী বিপ্লবী এবং কঠোর আদর্শ থেকে সরে আসে। তার বদলে, তারা বড় পরিসরে সুসংহত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, শ্রম বাজার ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমতা আনা—ইত্যাদি সংস্কারের প্রতিশ্রুতির প্রচারণা চালায়।
নরওয়ের লেবার পার্টি ১৯৩০ সালে নির্বাচনে বাজে ফলাফল করার পর কট্টর মার্কসবাদী এজেন্ডা থেকে সরে আসে। এই ঘটনা তখনকার ড্যানিশ এবং সুইডিশ শ্রমিক দলগুলোর মতো লেবার পার্টি আরও বাস্তব বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে এবং জনগণের চাহিদা বিবেচনায় নীতি বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। দলটি একটি ব্যাপক শিক্ষা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। যাতে গ্রামীণ এলাকায় পড়াশোনার মান উন্নত হয়। ১৯৩৫ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দলটি পরের বছর ‘ফোক স্কুল আইন’ বাস্তবায়ন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
তুমাস পেককারিনেন, কিয়েল সালভানেস এবং ম্যাটি সারভিমাকিসহ সাম্প্রতিক কাজগুলোতে আমরা দেখিয়েছি যে, নরওয়ের বিদ্যালয় শিক্ষা সংস্কার কেবল গ্রামীণ শিক্ষার মান উন্নত করেনি, এটি নরওয়ের রাজনীতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কারণ যারা এই সংস্কারের সুবিধা পেয়েছিল (প্রথমে অভিভাবকেরা) তারা লেবার পার্টির প্রতি তাদের সমর্থন জারি রেখেছিলেন। ফলে নরওয়ের ‘সামাজিক গণতন্ত্র’–এর মডেলকে সমর্থনকারী একটি ভোটার জোট তৈরি হতে পেরেছিল। সোজা কথায়, দলটি এমন সেবাগুলোই দিতে শুরু করেছিল যা ভোটারেরা চেয়েছিল এবং এর বিপরীতে ভোটারেরা দলটিকে পরের নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছিল।
সুইডেনেও ব্যাপকভাবে একই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৩২ সালে প্রথম নির্বাচনী জয়ের পর সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি উচ্চ মজুরি, শিল্পে স্থিতিশীলতা এবং একটি স্থিতিশীল ম্যাক্রোইকোনমিক (সামষ্টিক অর্থনীতি) পরিবেশ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে। এরপর পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ভোটে জিতে ক্ষমতায় টিকে ছিল তারা।
যারা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে ও নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে চায় যাতে বৈষম্য দূর করা এবং অসহায়দের সুরক্ষা দেওয়া যায়—তাদের জন্য এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো, জনগণের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করে এমন একটি সংস্কারমূলক এজেন্ডা গ্রহণ করার মাধ্যমে গণতন্ত্র কার্যকর করা। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, বাম বা ডান যেকোনো চরমপন্থী নীতি ভোটারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থই হবে এবং এ ধরনের প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পুতিন ও ট্রাম্প উভয়েই একধরনের ‘আদর্শহীন বাস্তবতাবাদী’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পুতিন মানবাধিকার ও পশ্চিমা উদারনৈতিক মূল্যবোধকে প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্পও প্রায় একই ধাঁচে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতার গতিপ্রকৃতির বাস্তবতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। পুতিন ট্রাম্পের এই বৈশিষ্ট্যকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে একটি..
৯ ঘণ্টা আগেভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
১৪ ঘণ্টা আগেগত বছরটি ছিল এমন এক বছর, যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীনেরা হয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারজাভির একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, ‘সরকারের কাজ হলো এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যা নাগরিকদের আশার আলো দেয়।’
৩ দিন আগেডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
৪ দিন আগে