সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
আমরা আবারও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে যাচ্ছি। এবার তুলনামূলক নিচের দিকে, গ্যাংটকের উদ্দেশে। আবারও সবার গানের সুরে আনন্দ করতে করতে। আগের মতো আকাশ ভাই আর ভুবন গান গেয়ে মাতিয়ে রাখলেও এদিন সৌরভ ভাইয়ের প্রতিভাটা ছেয়ে ছিল সবার মনে।
সৌরভ ভাই পুরান ঢাকার বাসিন্দা। নবাবগঞ্জের দিকে বাড়ি। বয়স কম। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। সেই সুবাদে আমাদের সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে চুপ করে শুনছিলাম। এতটা অসাধারণ তাঁর তিলাওয়াতের কণ্ঠ! কিন্তু এই বেচারা বেশ ভালোই বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন এত লম্বা ভ্রমণে। প্রথমত, তিনি এত দূর ভ্রমণ করতে পারছিলেন না। বেলায় বেলায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কিছু খেতে পারছিলেন না। তিনি বড্ড বেশি বেছে বেছে খান। নিজের মনমতো জিনিস না পাওয়ায় ঠিকমতো খেতে পারেননি। সে জন্য শারীরিকভাবে দুর্বলও হয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে মাথাব্যথা আর বমি তো হচ্ছিলই।
এদিন গ্যাংটকে ফিরতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কারণ আমরা তেমন প্রয়োজন ছাড়া কোথাও থামিনি। এক-দুইটা ঝরনা দেখা বাকি ছিল বলে পান্ডেজি সেখানে সেখানে থামিয়েছিলেন। আর উত্তরে ঢোকার সময় যে দৃশ্যগুলো অন্ধকার নামায় দেখতে পারিনি, সেগুলো এদিন দেখে নিলাম। মনোমুগ্ধকর তিস্তা নদীর ধার বেয়ে উঁচু পাহাড়ের পথ দিয়ে নিচের দিকে নামছিলাম। রাত ৮টার মধ্যে গ্যাংটকে পৌঁছে গেলাম। উঠলাম আগের হোটেলেই। কিন্তু এবার ভিন্ন কক্ষ দেওয়া হলো আমাদের। জ্বর অনেকখানি কমে গেলেও শরীর দুর্বল হয়েছিল। গা ব্যথা ছিল প্রচণ্ড। আসতে আসতে বারবার বলছিলাম ভুবনকে, ‘যত যা কিছু হোক, আমি কিন্তু সকালে ম্যাসাজ করাব। হোটেলের উল্টো পাশেই স্পা সেন্টার আছে।’
সবার সিদ্ধান্ত ছিল সকাল সকাল শিলিগুড়ি ফিরে যাবে। আর কোথাও ঘুরবে না। পরদিন বিকেলে নাকি আকাশ ভাইদের বাসের টিকিট কাটা আছে। তাঁদের কথা শুনে সৌরভ ভাইরাও আর থাকতে চাইলেন না। তাঁদের দুজনের টিকিট আছে এর পরের দিন। আর আমাদের তারও পরের দিন। সবাই চলে যাবে ভেবে আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম চলে যাব একসঙ্গে। যেহেতু শরীর খারাপ, তাই আর একা ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছে ছিল না। আবার ভাবলাম, বাকিরা চলে গেলে খুব আনন্দও করতে পারব না। যাই হোক, এসব সিদ্ধান্ত শেষে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাবার খেতে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই কেউ। তাই ফরমাশ দিলাম রুমেই যেন দিয়ে যায়। ভেবেছিলাম জ্বরের মুখে সুপ খেলে ভালো লাগবে। সঙ্গে নুডল্স নিয়েছিলাম। সুপটা কোনো রকমে গিলতে পারলেও নুডল্সটা একদম খেতে পারছিলাম না। আমার কাছে দুইটাই বিস্বাদ লাগছিল। ভুবন যদিও সুপটা খেতে পেরেছিল, কিন্তু নুডল্সটা একদম না। খাবার নষ্ট করে মায়া লাগছিল। আবার আমাদের এতই খারাপ অবস্থা যে বিন্দুমাত্র বেশি খেতে পারছিলাম না। কালো চা খেয়েছিলাম খুব কষ্টে। ভেবেছিলাম খেলে কাজে দেবে। জ্বর বাড়ছিল। এক ফাঁকে মাসুম ভাই এসে দেখে গেলেন। ওষুধও দিয়ে গেলেন খেতে। আমরা সময় নষ্ট করলাম না। খেয়েদেয়ে যত জলদি সম্ভব ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। একে তো কনকনে শীত, তার ওপর জ্বর। মাথা ঘুরছিল। আপাদমস্তক ব্যথা তো ছিলই। সেদিন ভুবনের চেয়ে আমার অবস্থা ছিল বেগতিক। ওর গায়ে যতটা শক্তি ছিল আমার গায়ে তার তিল পরিমাণও ছিল না। ওষুধ খেয়ে ওর কাজে দিলেও আমার হচ্ছিল না তেমন। কোনো রকমে রাতটা পার করলাম। শুয়ে ভাবছিলাম, কী অলক্ষুনে জ্বর এল রে বাবা।
আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। শরীর ভালো থাকলে পরের দিনটা গ্যাংটকে থেকে ঘুরতাম। কিন্তু ভাগ্যে আর সেটা লেখা ছিল না। এই আফসোস বইতে বইতে হয়তো আবার কোনো একদিন গিয়ে হাজির হব লাল পান্ডার শহরে। সেদিন হয়তো অনেক বেশি সুস্থ থাকব। ঘুরে বেড়াব আরও কিছু ‘অমায়িক সুন্দর’ স্থান। হয়তো চিড়িয়াখানায় গিয়ে স্বচক্ষে দেখব লাল পান্ডার গড়াগড়ি। খুব ইচ্ছে ছিল সেখানকার বিখ্যাত খাবার মমো খাওয়ার। ভালো মমো খেতে যাওয়ার সেই সময়টা আর কোথায় পেলাম! হয়তো সেটাও পূরণ হবে পরেরবার। হয়তো এর পরে এসে অপ্রয়োজনে হলেও বডি ম্যাসাজটা করিয়ে নেব। ‘হয়তো’গুলো ভাবতে ভাবতে আর চোখে এই ভ্রমণের স্মৃতিগুলো নিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। খুব ভালো ঘুম না হলেও ক্লান্ত থাকায় আগের দিনের তুলনায় বেশি ঘুমালাম। খুব জরুরি ছিল, ঘুম।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
আমরা আবারও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে যাচ্ছি। এবার তুলনামূলক নিচের দিকে, গ্যাংটকের উদ্দেশে। আবারও সবার গানের সুরে আনন্দ করতে করতে। আগের মতো আকাশ ভাই আর ভুবন গান গেয়ে মাতিয়ে রাখলেও এদিন সৌরভ ভাইয়ের প্রতিভাটা ছেয়ে ছিল সবার মনে।
সৌরভ ভাই পুরান ঢাকার বাসিন্দা। নবাবগঞ্জের দিকে বাড়ি। বয়স কম। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। সেই সুবাদে আমাদের সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে চুপ করে শুনছিলাম। এতটা অসাধারণ তাঁর তিলাওয়াতের কণ্ঠ! কিন্তু এই বেচারা বেশ ভালোই বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন এত লম্বা ভ্রমণে। প্রথমত, তিনি এত দূর ভ্রমণ করতে পারছিলেন না। বেলায় বেলায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত, কোনো কিছু খেতে পারছিলেন না। তিনি বড্ড বেশি বেছে বেছে খান। নিজের মনমতো জিনিস না পাওয়ায় ঠিকমতো খেতে পারেননি। সে জন্য শারীরিকভাবে দুর্বলও হয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে মাথাব্যথা আর বমি তো হচ্ছিলই।
এদিন গ্যাংটকে ফিরতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কারণ আমরা তেমন প্রয়োজন ছাড়া কোথাও থামিনি। এক-দুইটা ঝরনা দেখা বাকি ছিল বলে পান্ডেজি সেখানে সেখানে থামিয়েছিলেন। আর উত্তরে ঢোকার সময় যে দৃশ্যগুলো অন্ধকার নামায় দেখতে পারিনি, সেগুলো এদিন দেখে নিলাম। মনোমুগ্ধকর তিস্তা নদীর ধার বেয়ে উঁচু পাহাড়ের পথ দিয়ে নিচের দিকে নামছিলাম। রাত ৮টার মধ্যে গ্যাংটকে পৌঁছে গেলাম। উঠলাম আগের হোটেলেই। কিন্তু এবার ভিন্ন কক্ষ দেওয়া হলো আমাদের। জ্বর অনেকখানি কমে গেলেও শরীর দুর্বল হয়েছিল। গা ব্যথা ছিল প্রচণ্ড। আসতে আসতে বারবার বলছিলাম ভুবনকে, ‘যত যা কিছু হোক, আমি কিন্তু সকালে ম্যাসাজ করাব। হোটেলের উল্টো পাশেই স্পা সেন্টার আছে।’
সবার সিদ্ধান্ত ছিল সকাল সকাল শিলিগুড়ি ফিরে যাবে। আর কোথাও ঘুরবে না। পরদিন বিকেলে নাকি আকাশ ভাইদের বাসের টিকিট কাটা আছে। তাঁদের কথা শুনে সৌরভ ভাইরাও আর থাকতে চাইলেন না। তাঁদের দুজনের টিকিট আছে এর পরের দিন। আর আমাদের তারও পরের দিন। সবাই চলে যাবে ভেবে আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম চলে যাব একসঙ্গে। যেহেতু শরীর খারাপ, তাই আর একা ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছে ছিল না। আবার ভাবলাম, বাকিরা চলে গেলে খুব আনন্দও করতে পারব না। যাই হোক, এসব সিদ্ধান্ত শেষে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাবার খেতে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই কেউ। তাই ফরমাশ দিলাম রুমেই যেন দিয়ে যায়। ভেবেছিলাম জ্বরের মুখে সুপ খেলে ভালো লাগবে। সঙ্গে নুডল্স নিয়েছিলাম। সুপটা কোনো রকমে গিলতে পারলেও নুডল্সটা একদম খেতে পারছিলাম না। আমার কাছে দুইটাই বিস্বাদ লাগছিল। ভুবন যদিও সুপটা খেতে পেরেছিল, কিন্তু নুডল্সটা একদম না। খাবার নষ্ট করে মায়া লাগছিল। আবার আমাদের এতই খারাপ অবস্থা যে বিন্দুমাত্র বেশি খেতে পারছিলাম না। কালো চা খেয়েছিলাম খুব কষ্টে। ভেবেছিলাম খেলে কাজে দেবে। জ্বর বাড়ছিল। এক ফাঁকে মাসুম ভাই এসে দেখে গেলেন। ওষুধও দিয়ে গেলেন খেতে। আমরা সময় নষ্ট করলাম না। খেয়েদেয়ে যত জলদি সম্ভব ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। একে তো কনকনে শীত, তার ওপর জ্বর। মাথা ঘুরছিল। আপাদমস্তক ব্যথা তো ছিলই। সেদিন ভুবনের চেয়ে আমার অবস্থা ছিল বেগতিক। ওর গায়ে যতটা শক্তি ছিল আমার গায়ে তার তিল পরিমাণও ছিল না। ওষুধ খেয়ে ওর কাজে দিলেও আমার হচ্ছিল না তেমন। কোনো রকমে রাতটা পার করলাম। শুয়ে ভাবছিলাম, কী অলক্ষুনে জ্বর এল রে বাবা।
আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। শরীর ভালো থাকলে পরের দিনটা গ্যাংটকে থেকে ঘুরতাম। কিন্তু ভাগ্যে আর সেটা লেখা ছিল না। এই আফসোস বইতে বইতে হয়তো আবার কোনো একদিন গিয়ে হাজির হব লাল পান্ডার শহরে। সেদিন হয়তো অনেক বেশি সুস্থ থাকব। ঘুরে বেড়াব আরও কিছু ‘অমায়িক সুন্দর’ স্থান। হয়তো চিড়িয়াখানায় গিয়ে স্বচক্ষে দেখব লাল পান্ডার গড়াগড়ি। খুব ইচ্ছে ছিল সেখানকার বিখ্যাত খাবার মমো খাওয়ার। ভালো মমো খেতে যাওয়ার সেই সময়টা আর কোথায় পেলাম! হয়তো সেটাও পূরণ হবে পরেরবার। হয়তো এর পরে এসে অপ্রয়োজনে হলেও বডি ম্যাসাজটা করিয়ে নেব। ‘হয়তো’গুলো ভাবতে ভাবতে আর চোখে এই ভ্রমণের স্মৃতিগুলো নিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। খুব ভালো ঘুম না হলেও ক্লান্ত থাকায় আগের দিনের তুলনায় বেশি ঘুমালাম। খুব জরুরি ছিল, ঘুম।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
১ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
৮ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৩ দিন আগেসূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪