আজাদুল আদনান, ঢাকা
মতিন খোন্দকার করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন। তারপরও করোনায় আক্রান্ত হন বিক্রমপুরের এই মুদি ব্যবসায়ী। গত ১৮ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৩ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী। গত তিন দিন ধরে অবস্থা সংকটের দিকে যাওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্য কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক ছোটাছুটির পরও আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় কোনো ফল মেলেনি। এখন তিনি জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে এখন অনেককেই। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালেই যেমন গড়ে প্রতিদিন ৫–১০ জন রোগীকে আইসিইউয়ের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
নিজেদের পরিস্থিতি সম্পর্কে মতিন খোন্দকারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্বামী হয়তো বাঁচবে না। ডাক্তারদের কাছে অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আইসিইউ ফাঁকা নেই। পরে আমরা ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েক জায়গায় গিয়েছি; কোথাও ফাঁকা পাইনি। ওয়ার্ডে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে ডাক্তার জানিয়েছেন, একটা আইসিইউ আজ (শনিবার) ফাঁকা হতে পারে। সেখানে আমার স্বামীকে নেওয়া হবে। শুধু যে আমরা নই। আমাদের মতো অনেকে আইসিইউ পেতে চেষ্টা করছেন।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই মুহূর্তে চরম সংকটাবস্থা চলছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বহু মানুষ, যার অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার। করোনা রোগীর পাশাপাশি অন্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও প্রচুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়নো হয়েছে। কিন্তু আগের মতোই রয়েছে আইসিইউয়ের সংখ্যা। ফলে তীব্র আইসিইউ সংকটে ভুগতে হচ্ছে রোগীদের। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৪ জন। এর আগের দিনই গত নয় মাসে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনিবারে শনাক্তদের নিয়ে দেশে ভাইরাসটির শিকারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ৩৯ জনের। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের পর এটিই একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৬৯–এ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবাইকে নিজ জেলা ও বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এমন আহ্বান শুরু থেকেই করা হলেও তা কাজে আসেনি। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের। চাপ বাড়ছে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর ওপর।
ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে যত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে, তা আগের দুই সপ্তাহে হয়নি। রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যদিও দু–একটি ছাড়া তেমন অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি কয়েকটি হাসপাতালে গুরুতর রোগীর সংখ্যা এতটাই বেশি যে, যেকোনো সময় তাদের আইসিইউ দিতে চরম বিপাকে পড়তে হতে পারে কর্তৃপক্ষকে। আবার সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে—এমন সাধারণ রোগীদের মধ্যে যারা ভর্তি হতে আসছেন, তাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়ে বাসায় পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউয়ে আইসিইউ তো নয়ই করোনা রোগীদের জন্য কোনো শয্যাই খালি নেই। পুরোনো রোগী বের হলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন। করোনা রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেলে মোট ৫০০ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া পিসিসিইউ ও এইচডিইউ মিলে রয়েছে ২০টি বেড। সেগুলোও খালি নেই। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫৭৭ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। আজ শনিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসেন। এর মধ্যে আটজনের করোনা শনাক্ত হয়। সন্দেহজনক হওয়ায় বাকিদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ বলেন, ‘পিসিসিইউ ও এইচডিইউয়ের একটি বেডও খালি নেই। আজ (শনিবার) এখন পর্যন্ত (করোনা) পজেটিভ বেড খালি নেই; সাসপেক্টেড বেডও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’
বিএসএমএমইউতে করোনা রোগীদের জন্য ১৪১টি শয্যা রয়েছে, যার কোনোটিই খালি নেই। গত দুই মাসে সংক্রমণ কিছুটা কমায় এই হাসপাতালের ৪০ শয্যার দুটি কেবিন সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার তা নতুন করোনা রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ১৬টি আইসিইউয়ের সবকটিই এখন রোগীতে পূর্ণ।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাজমুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আশঙ্কা বেড়েই চলছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তা আবারও ঊর্ধ্বমুখী রূপ নিয়েছে। ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
নতুন করে বেড বাড়ানো প্রসঙ্গে নাজমুল করিম বলেন, গত দুই মাসে সংক্রমণ কমায় করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৪০ শয্যার দুটি কেবিন সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। এখন সংক্রমণ বাড়ায় আগামীকাল রোববার থেকে সেগুলো আবার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে।
রাজধানীর কুয়েত–বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা, মুগদা, রাজারবাগ, সোহরাওয়ার্দী, সংক্রামক ব্যাধি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের দুই–তৃতীয়াংশ শয্যাই এখন রোগীতে পূর্ণ। এসব হাসপাতালে থাকা আইসিইউয়ের কোনোটিই খালি নেই। ফলে আইসিইউ একরকম সোনার হরিণে রূপ নিয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারি এসব হাসপাতালে ২ হাজার ৪০১টি শয্যা আছে করোনা রোগীদের জন্য। এর মধ্যে রোগী আছে ১ হাজার ৯৪৮টিতে। খালি ৪৫৩টি। পাশাপাশি আইসিইউ আছে ১০৮টিতে, খালি ৫টি। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আসগর আলী, স্কয়ার, ইবনে সিনা, ইউনাইটেড, এভার কেয়ার, ইম্পালস, এএমজেড ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯২৮টি শয্যা রয়েছে, যার ৫১৪টিতে রোগী আছে। এসব হাসপাতালে ১৮৮ আইসিইউর মধ্যে খালি আছে ৪৫টি। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য মোট শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৮৫৪টি, যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৫৪টিতে রোগী রয়েছে। আর ৫৭৪টি আইসিইউয়ের মধ্যে খালি আছে ২২৬টি।
শুধু যে সরকারি হাসপাতাল তা কিন্তু নয়, ক্রমেই আইসিইউ মারাত্মক সংকটাবস্থা তৈরি হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। পাশাপাশি করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত তিন–চতুর্থাংশ শয্যাই এখন পূর্ণ। সবচেয়ে বাজে দশা ঢাকায়। ঢাকার বাইরে সংক্রমণ কিছুটা কম থাকায় নাগালে রয়েছে বিভাগীয় ও জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলো। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বাইরের হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের চাপ বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণ এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ফলে তালিকাভুক্ত সরাকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডের পাশাপাশি আইসিইউ বেডের সংকট চলছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই রোগীদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুগদা হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর অবস্থাই গুরুতর। গড়ে প্রতিদিন ৫–১০ জন রোগী আইসিইউয়ের অপেক্ষায় থাকে। যে হারে রোগী আসছে, তা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো বেড থাকবে না। কিন্তু আমাদের এখানে বেড বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। তাই, এই মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।’
প্রতিরোধের ওপর জোর দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরালোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুলতানা শাহানা বানুও। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার ফল হয়তো ধীরে ধীরে আরও প্রকাশ পাবে। শনিবার বহু রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় যাদের করোনা সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের আমরা বাসায় কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি আইসিইউয়ের সংকট নিরসনে নতুন করে ১০টি আইসিইউ শয্যা চলতি সপ্তাহেই যুক্ত করা হচ্ছে।’
মতিন খোন্দকার করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন। তারপরও করোনায় আক্রান্ত হন বিক্রমপুরের এই মুদি ব্যবসায়ী। গত ১৮ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৩ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী। গত তিন দিন ধরে অবস্থা সংকটের দিকে যাওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্য কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক ছোটাছুটির পরও আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় কোনো ফল মেলেনি। এখন তিনি জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে এখন অনেককেই। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালেই যেমন গড়ে প্রতিদিন ৫–১০ জন রোগীকে আইসিইউয়ের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
নিজেদের পরিস্থিতি সম্পর্কে মতিন খোন্দকারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্বামী হয়তো বাঁচবে না। ডাক্তারদের কাছে অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আইসিইউ ফাঁকা নেই। পরে আমরা ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েক জায়গায় গিয়েছি; কোথাও ফাঁকা পাইনি। ওয়ার্ডে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে ডাক্তার জানিয়েছেন, একটা আইসিইউ আজ (শনিবার) ফাঁকা হতে পারে। সেখানে আমার স্বামীকে নেওয়া হবে। শুধু যে আমরা নই। আমাদের মতো অনেকে আইসিইউ পেতে চেষ্টা করছেন।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই মুহূর্তে চরম সংকটাবস্থা চলছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বহু মানুষ, যার অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার। করোনা রোগীর পাশাপাশি অন্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও প্রচুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়নো হয়েছে। কিন্তু আগের মতোই রয়েছে আইসিইউয়ের সংখ্যা। ফলে তীব্র আইসিইউ সংকটে ভুগতে হচ্ছে রোগীদের। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৪ জন। এর আগের দিনই গত নয় মাসে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনিবারে শনাক্তদের নিয়ে দেশে ভাইরাসটির শিকারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ৩৯ জনের। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের পর এটিই একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৬৯–এ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবাইকে নিজ জেলা ও বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এমন আহ্বান শুরু থেকেই করা হলেও তা কাজে আসেনি। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের। চাপ বাড়ছে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর ওপর।
ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে যত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে, তা আগের দুই সপ্তাহে হয়নি। রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যদিও দু–একটি ছাড়া তেমন অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি কয়েকটি হাসপাতালে গুরুতর রোগীর সংখ্যা এতটাই বেশি যে, যেকোনো সময় তাদের আইসিইউ দিতে চরম বিপাকে পড়তে হতে পারে কর্তৃপক্ষকে। আবার সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে—এমন সাধারণ রোগীদের মধ্যে যারা ভর্তি হতে আসছেন, তাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়ে বাসায় পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউয়ে আইসিইউ তো নয়ই করোনা রোগীদের জন্য কোনো শয্যাই খালি নেই। পুরোনো রোগী বের হলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন। করোনা রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেলে মোট ৫০০ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া পিসিসিইউ ও এইচডিইউ মিলে রয়েছে ২০টি বেড। সেগুলোও খালি নেই। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫৭৭ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। আজ শনিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসেন। এর মধ্যে আটজনের করোনা শনাক্ত হয়। সন্দেহজনক হওয়ায় বাকিদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ বলেন, ‘পিসিসিইউ ও এইচডিইউয়ের একটি বেডও খালি নেই। আজ (শনিবার) এখন পর্যন্ত (করোনা) পজেটিভ বেড খালি নেই; সাসপেক্টেড বেডও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’
বিএসএমএমইউতে করোনা রোগীদের জন্য ১৪১টি শয্যা রয়েছে, যার কোনোটিই খালি নেই। গত দুই মাসে সংক্রমণ কিছুটা কমায় এই হাসপাতালের ৪০ শয্যার দুটি কেবিন সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার তা নতুন করোনা রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ১৬টি আইসিইউয়ের সবকটিই এখন রোগীতে পূর্ণ।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাজমুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আশঙ্কা বেড়েই চলছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তা আবারও ঊর্ধ্বমুখী রূপ নিয়েছে। ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
নতুন করে বেড বাড়ানো প্রসঙ্গে নাজমুল করিম বলেন, গত দুই মাসে সংক্রমণ কমায় করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৪০ শয্যার দুটি কেবিন সাধারণ রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। এখন সংক্রমণ বাড়ায় আগামীকাল রোববার থেকে সেগুলো আবার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে।
রাজধানীর কুয়েত–বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা, মুগদা, রাজারবাগ, সোহরাওয়ার্দী, সংক্রামক ব্যাধি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের দুই–তৃতীয়াংশ শয্যাই এখন রোগীতে পূর্ণ। এসব হাসপাতালে থাকা আইসিইউয়ের কোনোটিই খালি নেই। ফলে আইসিইউ একরকম সোনার হরিণে রূপ নিয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারি এসব হাসপাতালে ২ হাজার ৪০১টি শয্যা আছে করোনা রোগীদের জন্য। এর মধ্যে রোগী আছে ১ হাজার ৯৪৮টিতে। খালি ৪৫৩টি। পাশাপাশি আইসিইউ আছে ১০৮টিতে, খালি ৫টি। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আসগর আলী, স্কয়ার, ইবনে সিনা, ইউনাইটেড, এভার কেয়ার, ইম্পালস, এএমজেড ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯২৮টি শয্যা রয়েছে, যার ৫১৪টিতে রোগী আছে। এসব হাসপাতালে ১৮৮ আইসিইউর মধ্যে খালি আছে ৪৫টি। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য মোট শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৮৫৪টি, যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৫৪টিতে রোগী রয়েছে। আর ৫৭৪টি আইসিইউয়ের মধ্যে খালি আছে ২২৬টি।
শুধু যে সরকারি হাসপাতাল তা কিন্তু নয়, ক্রমেই আইসিইউ মারাত্মক সংকটাবস্থা তৈরি হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। পাশাপাশি করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত তিন–চতুর্থাংশ শয্যাই এখন পূর্ণ। সবচেয়ে বাজে দশা ঢাকায়। ঢাকার বাইরে সংক্রমণ কিছুটা কম থাকায় নাগালে রয়েছে বিভাগীয় ও জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলো। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বাইরের হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের চাপ বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণ এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ফলে তালিকাভুক্ত সরাকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডের পাশাপাশি আইসিইউ বেডের সংকট চলছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই রোগীদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুগদা হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর অবস্থাই গুরুতর। গড়ে প্রতিদিন ৫–১০ জন রোগী আইসিইউয়ের অপেক্ষায় থাকে। যে হারে রোগী আসছে, তা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো বেড থাকবে না। কিন্তু আমাদের এখানে বেড বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। তাই, এই মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।’
প্রতিরোধের ওপর জোর দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরালোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুলতানা শাহানা বানুও। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার ফল হয়তো ধীরে ধীরে আরও প্রকাশ পাবে। শনিবার বহু রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় যাদের করোনা সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের আমরা বাসায় কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি আইসিইউয়ের সংকট নিরসনে নতুন করে ১০টি আইসিইউ শয্যা চলতি সপ্তাহেই যুক্ত করা হচ্ছে।’
হলে আধিপত্য বিস্তার ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি সক্রিয় করাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত রোববার রাতে সংঘর্ষ হয়।
৬ মিনিট আগেবরিশাল আইএইচটিতে সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থগিত, আটজন বহিষ্কার এবং একজনকে সতর্ক করা হয়েছে। শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
৩৭ মিনিট আগেজেলার খবর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সুবর্ণচর, গৃহবধূ, লাশ উদ্ধার, স্বজন, অভিযোগ, পিটিয়ে হত্যা
৪১ মিনিট আগেবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর কোণঠাসা করে রাখতে নিজের মাকে জামায়াতের রুকন বলে প্রচার করেছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তুরিন একসময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১ ঘণ্টা আগে