যুবলীগ কর্মী বাবাকে না পেয়ে ৭ম শ্রেণির কিশোরকে গ্রেপ্তার, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

কক্সবাজার ও ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ৩৯
Thumbnail image
টেকনাফ থানা। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় বাবাকে না পেয়ে কিশোর ছেলেকে (১৬) অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেছে পরিবার। তবে পুলিশের দাবি, অভিযানে কিশোরের কাছ থেকে অস্ত্র পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দরগাহ পাড়া থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানায় উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)।

গ্রেপ্তার কিশোর স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য রেজাউল করিমের ছেলে।

এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। শিশুর পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বাবা রেজাউল করিমকে ঘরে না পেয়ে ভোরে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত শিশুকে কারাগারের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ওসির নেতৃত্বে হ্নীলার দরগাহ পাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে দুজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আটক করা হয় ওই কিশোরকে। শিশুর ডান হাতে থাকা একটি নীল রঙের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০ রাউন্ড নীল রঙের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে ওই কিশোরের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার কথা বলা হলেও আজ বিকেলে থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন ভিন্ন ভাষ্য দিয়েছেন। অস্ত্রগুলো প্রতিবেশীর বাড়ির আলমারি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জানান তিনি।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, অভিযানে যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, তাঁর ভাই সাইফুল করিমকে ধরতে না পারলেও ঘরে থাকা স্কুল পড়ুয়া শিশুকে আটক করা হয়। পরে তাকে নিয়ে প্রতিবেশী প্রবাসী নুরুল আমিনের ঘরে অভিযান চালানো হয়। তখন ওই ঘর থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

ওসি গিয়াস উদ্দিন বলেন, কিশোরের বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। প্রবাসী প্রতিবেশীর ঘরে তাঁর অস্ত্র মজুত করে রেখেছিলেন।

কিশোরের বরাত দিয়ে ওসি আরও বলেন, কিশোর জানিয়েছে অস্ত্রটি তার বাবার ছিল। সেটি পাশে নুরুল আমিনের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছিল। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনের মামলায় কিশোরের বাবাকে পলাতক আসামি করা হয়েছে। আর ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

কিশোরের বাবা রেজাউল করিম জানান, রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই তাঁর শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারল না।

প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে অস্ত্র পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আকতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গভীর রাতে পুলিশ তাঁর ঘরে ঢুকে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কি যেন খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে আমার আলমারিতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।’

টেকনাফ থানার ওসি প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেকনাফ থানার ওসি প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

টেকনাফের ওসিকে প্রত্যাহারসহ ১০ দাবি

শিশুকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগের ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কয়েকটি দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন—ডুসাটের সভাপতি জয়নাল আবেদিন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, সদস্য ফারজানা আক্তার আরজু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মিজানুর রহমান, ডুসাটের সাবেক সভাপতি মোর্তাজা হোসেন শাফি প্রমুখ।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছে, অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। টেকনাফ প্রশাসনের কাছে অবৈধ উপার্জনের খনি হওয়ার ফলে টেকনাফের সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসন আস্থা হারিয়েছে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

মানববন্ধনে ডুসাটের সদস্য নুসরাত ১০ দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—

১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।

২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।

৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. উখিয়া ও টেকনাফে পূর্বে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।

১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত