সিল পিটিয়ে জাপার হাওলাদারকে এমপি বানানো হয়েছে, বললেন আ. লীগ নেতা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০০: ৫৩
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ২১

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকী) আসনে জোটের শরিক নেতা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদারকে সিল পিটিয়ে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। রুহুল আমিনের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অনিয়ম হওয়া নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের একটি রেস্তোরাঁয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পটুয়াখালী জেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই মতবিনিময় সভা করেন আফজাল হোসেন।

মতবিনিময় সভার একপর্যায়ে জামাল হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এখানে অনেকেই আছেন, এর আগে আমরা গোলকধাঁধায় পড়েছিলাম। গত পাঁচটি বছর। পটুয়াখালীতে রেডিমেড এসে (রুহুল আমিন হাওলাদার) আমাদের দিয়ে সিল পিটিয়ে, যেভাবেই হোক, কোনো উন্নয়ন হয়নি। ভুল করেছি।’

জামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা সেই ভুলটা আর দ্বিতীয়বার করতে চাই না। আমাদের বলেছিল (রুহুল আমিন হাওলাদার) সোনার চামচ মুখে দিয়ে দেবে, এই যুবলীগের (জেলা যুবলীগের সভাপতি) শহীদ ভাই সাক্ষী, কি শহীদ ভাই? আমরা আর গোলকধাঁধায় পড়তে চাই না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন—আমাদের আর এমন প্রার্থী চাপিয়ে দেবেন না।’

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়াকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে জোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারকে তখন জায়গা করে দেয় আওয়ামী লীগ। ওই সময়ে তখন দলীয় মহাসচিব হিসেবে রুহুল আমিন হাওলাদার ‘এ আসনে নৌকা নাই, লাঙ্গল হলো নৌকার ভাই’ স্লোগান দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে রুহুল আমিনকে বিজয়ী করতে ওতপ্রোতভাবে কাজ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম–সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘শাহজাহান চাচার গত নির্বাচন (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) সুষ্ঠু হয়েছে। তবে এর আগের (দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) কেমন হয়েছে, সে (রুহুল আমিন হাওলাদার) কীভাবে বিজয়ী হয়েছে, আপনারা ভালো করে জানেন। এ বিষয়ে আমি ফোনে মন্তব্য করব না, জানতে চাইলে সরাসরি দেখা করেন।’ এরপর ফোন কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এটা আত্মঘাতীমূলক বক্তব্য। এটা আওয়ামী লীগের বক্তব্য হতে পারে না। বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪-এর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। যিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি তাঁর দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। কারও পারপাস সার্ভ করে নিজেকে কলুষিত করেছেন তিনি।’

এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ে যে কটি নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো সুষ্ঠু হয়েছে এবং ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার (জামাল) এই বিরূপ মন্তব্যের ব্যাপারে আমি শুনেছি। এটা কোনোভাবেই ঠিক করেনি। সে যদি এ রকম বক্তব্য দিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত