ইউএনওর টেবিলে ১৬ টাকা রেখে বৃদ্ধা চাইলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড

প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২১, ১৬: ২৯

তালতলী (বরগুনা): একহাতে ঝুলি, অন্য হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে সরাসরি ইউএনওর কক্ষে ঢুকে পড়েন জাবেদা বেগম (৭৩)। ঢুকেই ঝুলিতে থাকা ১৬ টাকা বের করে ইউএনওর টেবিলে রেখে বলেন—একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই। ১১ বছর ধরে ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানসহ অনেকের কাছে ধরনা দিয়েছেন তিনি। কার্ড পেতে মেম্বর-চেয়ারম্যান তাঁর কাছে ৫-১০ হাজার টাকা চেয়েছেন। কিন্তু যার পেটই চলে না তিনি পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দেবেন কী করে! তাই কার্ডও পাওয়া হয়নি। অবশেষে সাহস করে সরাসরি ইউএনওর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন জাবেদা বেগম।

ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায়। বৃদ্ধার এ কাণ্ডের পর ইউএনও কায়সার হোসেন খোঁজখবর নেন। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, জাবেদা বেগম তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোবাহান পাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ মল্লিকের স্ত্রী। ৭৩ বছর বয়সী এ বিধবা নিতান্ত দরিদ্র। এক ছেলে শারীরিকভাবে অক্ষম। অন্য ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাঁর। বয়স্ক ভাতার কার্ড চাইতে যাওয়ার দিনও না খেয়েই ছিলেন। পরিচয় ও অবস্থা নিশ্চিত হয়ে জাবেদাকে সামনে রেখেই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে ফোন করে বৃদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দেন। দুই মিনিটের মধ্যে জাবেদার নাম বয়স্ক ভাতার এমআইএসসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ইউএনও কায়সার জাবেদা বেগমের হাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড তুলে দেন। কার্ড পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। জাবেদা বেগম বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি, ইউএনও স্যার যেন অনেক বড় হয়। স্যারের জন্য আমি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। আজ আমি অনেক খুশি।

গত রোববার এ নিয়ে ফেসবুকে একটি বিস্তারিত লেখা পোস্ট দেন ইউএনও। এরপরই বিষয়টি জানা যায়। পোস্টে ইউএনও কায়সার হোসেন লেখেন, দুঃখী মানুষের হাসি মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর হয়। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে এলোমেলো শব্দে দোয়া করেছেন যেন আল্লাহ আমাকে আরও বড় করেন। তখন থেকে ভাবছি, ইশ! যদি এই দোয়াটা না করে আমাকে আল্লাহ যেন ক্ষমা করে দেন, এই দোয়াটা করতেন! বড় হয়ে কী লাভ! বড় হতে চাই না, ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে চাই। জাবেদা বেগমের বয়স্ক ভাতার কার্ডটির ব্যবস্থা করে দিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত