ইলিশ রক্ষা অভিযানের ট্রলার ইউএনওর নির্দেশে পোড়ানোর অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১৯: ০২
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১৯: ০৯

মা ইলিশ রক্ষায় সন্ধ্যা নদীতে অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার রাতের বেলা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমার নির্দেশে ট্রলারটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় বইছে। তবে ইউএনও দাবি করেছেন, ইঞ্জিন থেকে আগুন লেগেছে।

এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বাবুগঞ্জের ইউএনও নুসরাত ফাতিমাক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার চালক আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর ট্রলারে করে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে বের হন বাবুগঞ্জের ইউএনওসহ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল। সঙ্গে একদল পুলিশ সদস্য ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কেদারপুর খেয়াঘাটে ফিরে আসেন তাঁরা। এ সময় জব্দ করা জাল নদী তীরে পুড়িয়ে ফেলা হয়। একপর্যায়ে ইউএনও তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আরও ইলিশ গেল কোথায়?’ ইউএনও বকাঝকা শুরু করলে তিনি সেখান থেকে সরে যান। পরে ইউএনও নুসরাত তাঁর দেহরক্ষী দুই আনসার সদস্যকে ট্রলারটি পুড়িয়ে দিতে বলেন। তখন তাঁরা ডিজেল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুনে ট্রলারটি পুড়তে থাকলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে নেভানোর চেষ্টা করলেও তাঁদের বাধা দেন ইউএনও নুসরাত। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল তখন পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা অভিযান শেষ করে তীরে এসে জব্দ করা জাল পুড়িয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে ট্রলার মালিক আনোয়ারকে বকাঝকা করা হলে তিনি পালিয়ে যান। এরপর ইউএনওর দেহরক্ষী দুই আনসার সদস্য ডিজেল ছিটিয়ে আনোয়ারের ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

অভিযোগে বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানে জব্দ করা কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রলার পুড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ইউএনও দাবি করেন, জব্দ করা ইলিশ মাছ যখন এতিমখানায় বিতরণ করা হচ্ছিল তখন ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে আগুন লেগেছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্ত করা হচ্ছে। তাঁরা গিয়ে ট্রলারটি পুড়তে দেখেছেন।

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তদন্ত কমিটি গঠনের কথা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটনে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল বিমানবন্দরে দুই যাত্রীর ইলিশ জব্দ করে জরিমানা করেন ইউএনও নুসরাত ফাতিমা। ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, পরিবহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই বরিশাল বিমানবন্দরে লাগেজ স্ক্যান করে আটটি ইলিশ পাওয়া যায়। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমানের দুই যাত্রীকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা আটটি ইলিশ দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত