ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যেই শুনানিতে অংশ নিলেন আইনজীবী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৪৯
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ০২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীরা তিন দিনের আদালত বর্জন কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনের মতো পালন করেছেন। আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যেই আজ রোববার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম নামের এক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। আদালত থেকে তিনি আদেশও পেয়েছেন। আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যে এক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেওয়ায় জেলার অন্য আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ। 

আদালতে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিনিয়র সহকারী জজ (সরাইল) আদালতে আমি একটি দরখাস্ত দিয়েছিলাম। বলেছে ভেতর দিয়ে নাকি আদেশ করবে। আজকে (রোববার) যে আদালত বর্জন কর্মসূচি চলছে, তা আমি জানি। সুতরাং আমি শুনানি করি নাই। আদালতে আমার সহকারী (মুহুরি) গিয়ে আবেদন জমা দিয়েছিল। তাকেও নিষেধ করেছি আর না যেতে।’ 

জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকে (রোববার) দেওয়ানি আদালতে এসে একজন আইনজীবী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে বিবাদীদের প্রতি সমন জারির পাশাপাশি শোকজ করেছেন।’

আদালত সূত্র বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে নতুন সদস্যদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে দাতা সদস্য ও অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগ আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র সহকারী জজ (সরাইল) আদালতে দায়ের করা মামলায় ২৮ জনকে বিবাদী করেন বোরহান উদ্দিন। তার মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। এই মামলা শুনানির দিন আগামী ১৬ জানুয়ারি ধার্য আছে। এরই মধ্যে ওই স্কুলের নির্বাচন আগামীকাল সোমবার (৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের আগে মামলায় নথি তলব করে নিষেধাজ্ঞার আদেশের জন্য বাদীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আজ রোববার আদালতে আবেদন করেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, আদালত বর্জনের বিষয়টি সারা দেশে আলোচিত। আইনজীবী সমিতির ঐক্য ও নেতৃত্বের প্রশ্নে আমরা আইনজীবীরা গত কয়েক দিন যাবৎ আদালত বর্জন করে আসছি। এই পরিস্থিতিতে শুধু টাকার লোভে একজন আইনজীবী সবার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমন করবে, তা মানা যায় না।’ 

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। কিন্তু সেই আইনজীবী অস্বীকার করছেন। আমরা ঘটনার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আগামীকাল (সোমবার) আমাদের সাধারণ সভা আছে। যদি এই আইনজীবী সব আইনজীবীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

আদালতের একাধিক সূত্র জানায়, মূলত একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকের বিতণ্ডা হয়। এরই জেরে বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। 

পরে জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের অপসারণ এবং জেলা জজ আদালতের নাজিরের বিচারের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয় আইনজীবী সমিতি। 

এদিকে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর অসৌজন্যমূলক আচরণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের এক বিচারককে গালাগাল এবং তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণের ব্যাখ্যা জানতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে তাঁদের ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদালত অবমাননার রুলসহ এই আদেশ দেন। ওই ঘটনায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। তিন আইনজীবী হলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঞা, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলাম।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত