হালদায় পুরোদমে ডিম ছেড়েছে কার্প মাছ, উৎসব করে চলছে সংগ্রহ 

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ১৩: ৫৬
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ১৫: ১০

এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর অবশেষে পুরোদমে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ। গতকাল রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাতের নীরবতা ছাপিয়ে নদীতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে ডিম আহরণের জন্য নদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকা তিন শতাধিক ডিম সংগ্রহকারীর মুখে হাসি ফুটেছে।

সোমবার স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা বলছে, রোববার সকাল সাতটার দিকে নদীতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে জাল পেতে পুরোদমে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন। সারা দিন নদীতে অবস্থান নিয়ে ডিম না ছাড়ায় অনেককেই হতাশ হয়েছেন। পরে এ দিন রাত আড়াইটার দিকে নদীতে মা মাছগুলো পুরোদমে ডিম ছাড়ার পর তিন শতাধিক নৌকা হালদা নদীর আজিমের ঘাট, নতুনহাট, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা, রামদাস মুন্সীর হাট, নাপিতেরঘাট, সোনাইরমুখ, গড়দুয়ারা, অংকুরিঘোনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছে। সোমবার ভোররাত পর্যন্ত চলে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ। 

হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী রোসাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিম কতটুকু পেয়েছি বড় কথা নয়, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির।’

ডিম সংগ্রহকারী ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ মুছা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিমাণে খুব বেশি না হলেও ডিম যা সংগ্রহ করতে পেরেছি তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।’ 

হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রাউপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশ থাকায় রোববার রাতে হালদা নদীতে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সংগ্রহকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছে।’

হালদা গবেষক শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে গতকাল রোববার মধ্যরাতে জোয়ারের সময় আমতুয়া পয়েন্টে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। এরপর এই ডিম জোয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাপিতের ঘাট, আজিমারঘাট, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারি সংলগ্ন রুপালি স্লুইজ গেট, নোয়াহাটসহ হালদার বিভিন্ন স্পিনিং গ্রাউন্ডে এই ডিম ছড়িয়ে পড়ে। শনিবারের বজ্রপাতসহ ব্যাপক বৃষ্টির প্রভাবে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া গতকাল রোববার সকালে অমাবস্যা শেষ হওয়ায়, রাতের জোয়ারে ডিম ছাড়ার শতভাগ সম্ভাবনা ছিল। তাই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, বালতিসহ ডিম ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। এই বছর সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় হালদা নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ডিম সংগ্রহকারীসহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে।’ 

উল্লেখ্য, প্রতি বছর এপ্রিল-মে দুই মাসের যে কোনো সময় ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নিষিক্ত ডিম আহরণ করতে ব্যস্ততার সীমা থাকে না হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীদের।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত