সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ২০: ০২

আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। চলতি মে মাসে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প কাজ প্রথমে পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন। পরে পরিদর্শন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। তারা দুজনই জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। 

এই রেলপথ চালু হলে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর রেল যোগাযোগ চালু হবে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি ইতিমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এই রেলপথটি চালু হলে প্রথমে শুধু দুই দেশে পণ্য পরিবহন হবে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আখাউড়া থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। দুই দেশের এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬.৭৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটি (বাংলাদেশ অংশ) বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। 

তবে কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় দেড় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে প্রথম দফার বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি রেলপথ নির্মাণকাজ। পরে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ে প্রকল্পের। এভাবে দফায় দফায় বাড়ানো মেয়াদ শেষে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে চালু হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। 

সরেজমিন আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ অংশে তিন কিলোমিটার রেললাইন ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। বাকি মালামাল সব এসে গেছে। বাকি চার কিলোমিটার রেললাইন বসানো কাজ চলছে। প্রথমে ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক) ট্রেন চালানো হবে। যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। এই রেলপথের বাকি অন্য কাজ প্রায় এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আজিজুল হক বলেন পণ্যের দাম অনেকটাই পরিবহন খরচের ওপর নির্ভর করে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের দামও বাড়ে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে ট্রেনে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম হবে। এতে করে আমদানি করা পণ্য দেশের বাজারে কম দামে সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কান্ট্রি হেড (বাংলাদেশ) শরৎ শর্মা বলেন, করোনার কারণে আমাদের দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। প্রকল্পের কাজের মালামালও ভারত থেকে আনা যায়নি। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মালামাল আনার অনুমতি পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এখন আমাদের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রথমে ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক) ট্রেন চালানো হবে। যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। এ কাজগুলো শেষ হলে প্রস্তাব যাবে। 

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগ। এই রেলপথ দিয়ে আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। পাশাপাশি রেলপথটি দিয়ে প্রথমে শুধু দুই দেশে পণ্য পরিবহন হবে। 

গত ২৬ মে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের জানান চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধন হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছু সময় দেরি হলেও এখন দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। এ সময় সচিব আরও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। 

গত ১৭ মে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের রেলপথ মন্ত্রী আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণকাজ শেষ হবে। সেপ্টেম্বরের পরে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। তাই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন।’

আখাউড়া-আগরতলা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলপথ উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ভারতের এই অঞ্চলে ৭টি প্রদেশ রয়েছে। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করলে তাদের অনেক পথ কমে আসে।’ বারবার প্রকল্পের সময় বাড়ানো নিয়ে রেলপথ মন্ত্রী আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পেই একটি ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ত্রুটির দায় সময়কাল) থাকে। ডিফেক্ট লায়াবিলিটিসহ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য নির্ধারিত রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের দ্বার যেমন উন্মোচিত হবে তেমনি আগরতলার সঙ্গে কমবে কলকাতার দূরত্ব। বর্তমানে রেলপথে আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার, যা পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩৮ ঘণ্টার মতো। তবে আখাউড়া হয়ে কলকাতা যেতে আগরতলাবাসীকে পাড়ি দিতে হবে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার রেলপথ। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর রেলযোগাযোগ স্থাপন করবে এই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত