ঘরে ফিরছেন নাবিকেরা, বরণে নানান প্রস্তুতি স্বজনদের

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১৪ মে ২০২৪, ১৫: ২১
Thumbnail image

দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে নিজ পরিবারে ফিরছেন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে এমভি জাহান মণি-৩ নামের একটি লাইটার জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর নাবিকদের বরণ করে নেবেন স্বজনেরা। এ ছাড়া নাবিকদের সংবর্ধনা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাবিকেরা স্বজনদের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন। 

এদিকে নাবিকদের পরিবারেও শুরু হয়েছে স্বজনদের ঘরে ফেরার উৎসব। নানা আয়োজনে নাবিকদের বরণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন সবাই অধীর আগ্রহে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ। 

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বন্দর এলাকার বাসিন্দা জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন শিমুল মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা জাহাজ থেকে নেমে লাইটার জাহাজে উঠেছি। বিকেলের দিকে বন্দরে পৌঁছাব। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মিস করছি ঘরে রেখে আসা আমার ছোট্ট দুই কন্যাকে।’ 

মৃত্যুর দুয়ার থেকে সন্তান ফিরছেন—এই আনন্দে মাতোয়ারা শিমুলের মা শাকেরা বেগম। স্বামীহারা এই নারী অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলেকে বুকে নেওয়ার জন্য। স্ত্রী ফারজানা আকতার স্বামীর জন্য রেঁধেছেন পছন্দের সব খাবার। তাঁদের মতোই নিজ দেশের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দিত সারা দেশের মানুষ। 

শামসুদ্দিন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা বলেন, ‘তাঁর বাড়ি ফেরার কথা শুনে সবাই খুবই আনন্দিত। ঈদের আনন্দ এখন বাড়িতে। সাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশার দীর্ঘদিনের কঠিন মুহূর্তের পর তিনি আমাদের মাঝে ফিরবেন, এটা ভাবতেও খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে। 

এমভি মণিতে নাবিক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন শিমুলঅন্যরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জাহাজের আরেক নাবিক সাজ্জাদের পরিবার। নিকটাত্মীয় নূপুরের সঙ্গে আক্দ অনুষ্ঠান করেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে উঠেছিলেন নাবিক সাজ্জাদ। কথা ছিল দুবাই থেকে জাহাজে ফেরার পর হবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ায় সব ছক এলোমেলো হয়ে যায় সাজ্জাদ ও নুপুরের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটতে থাকে তাঁদের দিন। সব উৎকণ্ঠার অবসান হচ্ছে। সাজ্জাদ ঘরে ফিরলেই বাজবে সানাই। এরই মধ্যে বিয়ের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রেখেছেন দুই পরিবারের স্বজনেরা। পছন্দ করে রেখেছেন বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্লাবও। এখন দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেই শুভ অনুষ্ঠানটা শেষ করতে চান তাঁরা। 

সাজ্জাদের মা শামসাদ বেগম বলেন, ‘অনেক দিন পর আমার ছেলে আমাদের বুকে ফিরবে, আল্লাহ কাছে লাখো শোকরিয়া। আমার আর কিছু দরকার নাই। বাড়ি ফিরলেই জমকালো আয়োজনে ছেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলব।’ 

সাজ্জাদ হোসেনের বড় ভাই মোশাররফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের বন্দরে যেতে বলেছে। সব অফিশিয়াল কার্যক্রম শেষে ঘরে আসব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে ঘরে ঈদের আনন্দ বইছে। মা সাজ্জাদের পছন্দের সব খাবার নিজের হাতে রান্না করছেন। আমাদের আত্মীয়স্বজন বাড়িতে এসেছে। সবাই অপেক্ষা করছে সাজ্জাদকে দেখার জন্য। এলাকার মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ 

কর্ণফুলীর বড় উঠান ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ড নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘তিনি গরুর মাংস খুব পছন্দ করেন। পছন্দ করেন আমার হাতে বানানো কেকও। এ দুই খাবারের অনেক রকম মেন্যু থাকবে মঙ্গলবার রাতে। রান্না করব বিভিন্ন পদের সেমাই। এবারের ঈদে সেমাইও রান্না করিনি আমরা। ও এলেই ঈদের আনন্দ করব। করব কেনাকাটাও। ফুল দিয়ে বরণ করব ওকে। শুনব দুঃসহ সেই সব দিনের কথা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত