Ajker Patrika

করোনা রোগীর পাশে নোয়াখালী পুলিশের অক্সিজেন ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৬ মে ২০২১, ১০: ৩৭
করোনা রোগীর পাশে নোয়াখালী পুলিশের অক্সিজেন ব্যাংক

নোয়াখালী:  সময়টা ২০২০ সালের জুন, দেশে তখন মহামারি আকার ধারণ করে করোনাভাইরাস । সারাদেশের ন্যায় নোয়াখালীতেও করোনায় রোগী  বাড়তে শুরু করে। অনেক  করোনা রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। অক্সিজেন ও শ্বাসকষ্টে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। তখন নোয়াখালীবাসীর কথা চিন্তা করে এগিয়ে আসেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। তারই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ২৮ জুন নোয়াখালী পুলিশ হাসপাতালে উদ্বোধন করেন অক্সিজেন ব্যাংকের। ১০টি হাইফ্লো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে শুরু হওয়া এ মানবসেবা কার্যক্রমে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে আরও ৪৫টি সিলিন্ডার। যা থেকে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার রোগীরা অক্সিজেন সেবা নিচ্ছেন। সেবার মান বাড়াতে ব্যাংকে সিলিন্ডারের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

জানা গেছে, গত ২৮জুন নোয়াখালী পুলিশ হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্বোধন করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। তখন ১০টি হাইফ্লো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে শুরু হয় বিনামূল্যে করোনা রোগীদের মাঝে অক্সিজেন সেবার কার্যক্রম। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ৫৫টি হাইফ্লো সিলিন্ডার রয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মানবিক এ ব্যাংক থেকে সেবা নিয়েছেন ২৩৫জন রোগী। এ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন ১৫জন সেচ্ছাসেবী। যারা মোবাইলে কল পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যান করোনা রোগীর বাড়িতে। 

অক্সিজেন সুবিধা পেয়েছে এমন একজন রাকিব হোসেন। তিনি জানান, আমার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিছুদিন আগে আমার মামা প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পর তারা জানান উনাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া লাগবে। কিন্তু সে মুহূর্তে কোথায় অক্সিজেন পাবো তা আমাদের জানা ছিলো না। পরবর্তীতে পরিচিত একজনের মাধ্যমে নোয়াখালী পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের নাম্বার পেলাম। উনাদের সাথে যোগাযোগ করার সাথে সাথে একটি ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে চলে আসতে বলেন তাঁরা। পরদিন সকালে এসে আমি একটি সিলিন্ডার নিয়ে যায়। কয়েকদিন ব্যবহারের পর আমার মামা কিছুটা সুস্থ হলেও চিকিৎসক অক্সিজেন চালিয়ে যেতে বলেন। প্রথম সিলিন্ডারটি শেষ হওয়ার পর ওটা জমা দিয়ে আমি আরও একটি সিলিন্ডার নিয়ে যায়। বর্তমানে আমার মামা আগের চেয়ে ভালো আছেন।

রাসেল চৌধুরী নামের নোয়াখালী সদরের এক বাসিন্দা জানান, আমার একজন আত্মীয়ের করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে উনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। যেদিন তাঁর অবস্থার অবনতি হয় সেদিন রাত ২টার সময় পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের হেল্প লাইনে কল দেই। ওই রাতেই উনারা আমাদের আসতে বলেন।  পরে বিনামূল্যে  ছাড়া আমরা অক্সিজেন নিয়ে যাই। আমি বর্তমানে এ অক্সিজেন ব্যাংকে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি। পুলিশের এ মানবসেবায় নিজেকে যুক্ত করতে পারায় আমি গর্ববোধ করছি।

অক্সিজেন ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক ও ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক এস এম কামরুল হাসান জানান, হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে মৃত্যু পথযাত্রী করোনা রোগীরা যখন দিশেহারা হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরেন। তাদের শারীরিক অবস্থা ও শ্বাসকষ্টের কথা বিবেচনা করে আমাদের এ অক্সিজেন সেবা। রোগী বা তার স্বজনদের একটি মোবাইল কলে আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছি। প্রথম দিকে আমাদের এ সেবা নোয়াখালী জেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমান পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লার লোকজনও আমাদের থেকে সেবা নিচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, গত বছরের ২৬জুন আমি কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে সুধারাম মডেল থানার সামনে একটি সিএনজিতে একজন করোনায় আক্রান্ত রোগীকে দেখতে পাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি অক্সিজেন না পেয়ে শ্বাসকষ্টে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনি। চোখের সামনে এমন মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে সহ্য করতে না পেরে আমি পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেই।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগে  মৃত্যুবরণের বিষয়টি আমাদের কষ্ট দিচ্ছে। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে ও মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন ব্যাংক চালু করি। অক্সিজেনের অভাবে যেন কোনো রোগী আর মৃত্যুবরণ না করে সে লক্ষ্যে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ ব্যাংকটি আরও সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত