Ajker Patrika

চুক্তির ২৬ বছরেও শান্তি অধরা পার্বত্য চট্টগ্রামে, ছড়াছড়ি শুধু অবকাঠামোর

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ৪০
চুক্তির ২৬ বছরেও শান্তি অধরা পার্বত্য চট্টগ্রামে, ছড়াছড়ি শুধু অবকাঠামোর

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। তখন পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যকার ভূমির বিরোধ। গত ২৬ বছরেও এর সমাধান করতে পারেনি ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন।  

এই সময়ের মধ্যে পাহাড়ের যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও স্থানীয়দের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত হয়নি। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এসব কারণে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

চুক্তির শর্তের মধ্যে ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা; পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণ করা; জেলা পরিষদ গঠন এবং আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এসব গঠিত হলেও ২৬ বছরে জেলা বা আঞ্চলিক পরিষদে কোনো নির্বাচন হয়নি।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পূর্তিতে পাহাড়ের মানুষকে এখনো চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাতে হচ্ছে। দীর্ঘ এই সময়ে চুক্তির অনেকগুলো দিক বাস্তবায়িত হলেও বাস্তবায়িত হয়নি বেশ কিছু মৌলিক বিষয়। এর মধ্যে জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন না দেওয়া, অকার্যকর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গঠন করা হয়নি মিশ্র পুলিশসহ একাধিক মৌলিক বিষয়। এগুলো না হওয়ায় পাহাড়ি-বাঙালি সবাই চুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত।

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, চুক্তির ফলে গঠিত জেলা পরিষদের কাঠামো যথাযথ হয়নি। এখানে পাহাড়িদের একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পাহাড়ি হবে ঠিক আছে। যদি ভাইস চেয়ারম্যান বাঙালি রাখা হতো, তাহলে পরিষদের ভারসাম্য যথাযথ হতো। তাই জেলা পরিষদের কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার।

পাহাড়ের মানুষের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকারাঙামাটি জজকোর্টের আইনজীবী হারুনর রশীদ বলেন, চুক্তির ২৬ বছর ধরে জেলা পরিষদগুলো নির্বাচনবিহীন। হচ্ছে না আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনও। এখানে পাহাড়ি কিংবা বাঙালি সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ বা অংশীদারত্ব নেই। আমরা সেখানে জনপ্রতিনিধিও হতে পারছি না, ভোটও দিতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ে হতাশা-বঞ্চনার শেষ হবে না।

রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজীব চাকমা বলেন, চুক্তির পর পাহাড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ঠিক, কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, বরং দেশে অন্যান্য অঞ্চলে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা পার্বত্য এলাকায় হয়নি। চুক্তির মূল বিষয় ভূমি, পুলিশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বেসামরিকীকরণ—এগুলো হয়নি। ফলে এখানে সমস্যা জিইয়ে রয়েছে। তাতে সমস্যা দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। চুক্তি যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, তত মঙ্গল। 

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করতে করতে হয়রান হয়ে পড়েছি। আমাদের যেন আর বলতে না হয়। সরকারের কাছে দাবি রাখব, এই এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক।’

সরকারি দলের নেতারাও স্বীকার করছেন, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা দরকার। চুক্তির অনেকগুলো বিষয় বাস্তবায়িত হলেও মূল বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে শক্তিশালী হতে পারছে না পার্বত্য চুক্তির ফলে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। 

রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, চুক্তির মূল বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি এটি একেবারে সঠিক। এখানে নির্বাচন না হওয়ার কারণে চুক্তির ফলে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো জবাবদিহি নেই। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না। মিশ্র পুলিশ গঠনের কাজটি হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নটা দরকার। 

পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের ২৬ বছরে এই এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও প্রতিষ্ঠা হয়নি স্থায়ী শান্তি। চুক্তিকে পুঁজি করে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত