Ajker Patrika

কৃষি ও প্রকৃতির সঙ্গে মতিন সৈকতের তিন দশক

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৩৪
কৃষি ও প্রকৃতির সঙ্গে মতিন সৈকতের তিন দশক

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুরের বাসিন্দা মতিন সৈকত পাখি, বন্য প্রাণী, খাল-নদী, জলাশয়, পরিবেশ সুরক্ষা, বিষমুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, সমাজ উন্নয়নে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ব্যবহার ও সম্প্রসারণের জন্য দুইবার পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরিবেশ পদক। কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে তাঁকে এআইপি (এগ্রিকালচার ইম্পর্ট্যান্ট পারসন) আখ্যা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

প্লাবনভূমিতে মৎস্য চাষে দাউদকান্দি মডেল ও নিরাপদ খাদ্য উপজেলা দাউদকান্দি মডেলের অন্যতম উদ্যোক্তা মতিন সৈকত। আর্থসামাজিক উন্নয়নে শুকনো মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ঠিক রেখে বর্ষা মৌসুমে একই জমিতে সমাজভিত্তিক প্লাবনভূমিতে ২৫০ বিঘায় আপুসি মৎস্য চাষ প্রকল্প, ৪০০ বিঘা জমিতে আপুবি এবং ১০০ বিঘা জমিতে বিসমিল্লাহ মৎস্য চাষ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

বোরো ধান উৎপাদনে মৌসুমব্যাপী সারা দেশে সেচের পানির জন্য কৃষককে বিঘাপ্রতি ১-২ হাজার টাকা সেচের পানির মূল্য পরিশোধ করতে হয়। মতিন সৈকত ৩০ বছর ধরে মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে বোরো ধান রোপণ থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত মৌসুমব্যাপী বিঘাপ্রতি সেচ সুবিধা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য মতিন সৈকত টামটা-বিটমান খাল, সুন্দলপুর খালসহ কুমিল্লার কালাডুমুর নদীর ১১ কিলোমিটার খননের আন্দোলনকারী। দাউদকান্দির অন্যতম নদী খিরাই পুনঃখননে কাজ করছেন।

বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, কীটনাশক বর্জন, ফসলি জমিতে পার্চিং, সেক্স ফেরোমন ট্যাপ স্থাপন, জৈব পদ্ধতিতে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন, রাসায়নিক সার নিরুৎসাহিতকরণ, জৈব সার, খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, সবুজ সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম পদ্ধতির অনুসরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।

শিশুদের সঙ্গে মতিন সৈকতের আনন্দঘন মুহূর্তমতিন সৈকত বন্য প্রাণী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত। তিনি ২ হাজারের বেশি পাখি, ছয়টি বিরল প্রজাতির বনবিড়ালের ছানা, দুটি বেজি, ১০টি গুইসাপ ও ছয়টি শিয়াল উদ্ধার ও অবমুক্ত করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ উৎসব, বিজ্ঞান উৎসব, পাখি মেলা, পরিবেশবিষয়ক সেমিনার, আলোচনা সভা, হাট সভা, কৃষকদের সঙ্গে খেতে খামারে বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণে নিরলস কাজ করে চলেছেন।

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের ফলে বোরো ধানে রাসায়নিক সারের ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক ধানের জমিতে পার্চিং করার ফলে পাখি বসে পোকামাকড় খাওয়ার কারণে বিষ বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কুমড়া, বাঙ্গি জাতীয় ফসলে সেক্স ফেরোমন ট্যাপ ব্যবহারের ফলে পেস্টিসাইড লাগে না।

যেকোনো ফসলে বা মাছে যাতে ফরমালিন, কারবাইড, বিষাক্ত রং ব্যবহার করা না হয়, সে জন্য এলাকায় মাইকিংসহ নানাভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছেন মতিন সৈকত। বিষ, ফরমালিন, কারবাইড বর্জনে কৃষক, উৎপাদক, ভোক্তা সকলের সচেতনতার জন্য মানববন্ধন, সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি, বিজ্ঞাপন দেওয়াসহ নানারকম কর্মসূচি পালন করেছেন। কম সেচ দিয়ে পানির অপচয় রোধে বোরো ধানে এডব্লিউডি (অলটারনেট ওয়েটার অ্যান্ড ড্রাই) ব্যবহারে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছেন।

শহর-নগর-মহাসড়কের ময়লা-আবর্জনাকে সিটিজেন ফার্টিলাইজার বা নাগরিক সারে রূপান্তরিত করার জন্য আন্দোলন করছেন মতিন সৈকত। দাউদকান্দি উপজেলার ১৫৪টি আইপিএম-আইসিএম ক্লাবকে সংগঠিত করে দাউদকান্দি উপজেলাকে দেশের বৃহত্তম আইপিএম উপজেলায় পরিণত করেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতার জন্য স্কুলের আঙিনাসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করা, গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যায় উৎসাহী করে চলেছেন।

শিশুদের মাছ ধরার কৌশল শেখাতে ব্যস্ত মতিন সৈকতপরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ অবদানের জন্য ছয়বার সরকারিভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন মতিন সৈকত। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর সৃজনশীলতা বিস্তৃত। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। আদমপুর আদর্শ কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্সের (সিসিডিএ) নির্বাহী পরিষদের সদস্য। এসডিএ কুমিল্লার সাবেক চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় পাট চাষি সমিতি কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি, জাতীয় আবহাওয়া কমিটি কুমিল্লার সদস্য, কালাডুমুর নদী পুনঃখননের আহ্বায়ক। তীরচর সিনিয়র মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য, পুটিয়া-আদমপুর সিসিডিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি। ১৫৪টি আইপিএম-আইসিএম ক্লাবের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত দাউদকান্দি উপজেলা কেন্দ্রীয় আইপিএম-আইসিএম ক্লাবের সভাপতি তিনি। উপজেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটি এবং জেলা খাসজমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স সিসিডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুস সামাদ বলেন, ‘মতিন সৈকত তিন দশকের বেশি সময় ধরে কৃষি পরিবেশ সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি খাল-নদী পুনঃখনন আন্দোলন, বিষমুক্ত ফসল নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। মতিন সৈকতের ব্যাপারে শুনেছি, তিনি তিন দশক ধরে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত