রেমাক্রির ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতে নদী, ঝিরি ও কুয়ার পানিই ভরসা

মংবোওয়াংচিং মারমা, থানচি (বান্দরবান) 
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৫: ০৭

বান্দরবানে থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির জন্য এখন পর্যন্ত গভীর নূলকূপ কিংবা কোনো ধরনের অবকাঠামো স্থাপিত হয়নি। এখানকার অধিবাসীদের ভরসা নদী, ঝিরি, ঝরনা ও কুয়ার জল। 

বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য এই এলাকার অধিবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে সাঙ্গু নদী, আশপাশের শাখা ঝিরি ও ঝরনার ধারে কুয়া করে পানি সংগ্রহ করেন। প্রাকৃতিক উৎসের ওপর পানির জন্য সম্পূর্ণ নির্ভরশীল তাঁরা। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এসব উৎসেও পানি পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা সূত্রে জানা যায়, গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৯ জন প্রাণ হারান এই ইউনিয়নে। এ ছাড়া প্রতি বছর শিশু, বৃদ্ধসহ এখানকার শত শত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা জানান।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সাঙ্গু নদীর দুই তীরে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য মাটি খুঁড়ে অসংখ্য কুয়া তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের অনেক ঝিরি, ঝরনায় গিয়ে দেখা গেছে এগুলোর অধিকাংশের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। রেমাক্রি ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের য়ংনং ম্রো পাড়া, ঙারেসা পাড়া, ছোট মোদক সাখয়উ পাড়া, আন্ধারমানিক, জাপরাং পাড়া, বাচিংঅং পাড়া, অংহ্লা খুমি পাড়া, খ্যাইসাপ্রু পাড়া, আদা পাড়া, মংম্যা পাড়াসহ অনেক পাড়ায় এমন কুয়ার দেখা মেলে। 

কুয়া থেকে সংগ্রহ করা পানি পান করছে এক শিশু৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাংচং ম্রো এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রাইয়তি ত্রিপুরা বলেন, ‘৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি গ্রামে বিশুদ্ধ পানি বড় সমস্যা। কিছু কিছু গ্রামে জিএফএস পাইপলাইন থাকলেও নষ্ট হয়ে গেছে। পানি পাওয়া যায় না। গত দুই-তিন বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন মারা গেছে। বর্তমানে কুয়া খুঁড়ে পানি খাচ্ছি।’ 

ছোট মোদক সাখয়উ পাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মং এথোয়াই মারমা বলেন, ‘জিএফএস পাইপ নষ্ট অনেক দিন। নদীর পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা হলে খায়তেছি।’ 

এদিকে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলিয়ান পাড়া, ক্যবু পাড়া, রুইয়া পাড়া, যোশিরাম পাড়াসহ ১২-১৩টি গ্রামেও একই দশা। 

দলিয়ান পাড়ার প্রধান লালরিং বম কারবারি বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের জন্য কয়েকটি গভীর নলকূপ দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে অনেক বলেছি। অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে হলেও একটি স্থাপনা করার অনুরোধ করেছি।’

রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বা বাজারে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জিএফএস পাইপলাইন স্থাপন করে কোনো রকমে পানি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পানির বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প বা অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। আমি উপজেলা পরিষদে সমন্বয় সভায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি পরীক্ষামূলক হলেও কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে। আমরা জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব। কিন্তু এখনো  বরাদ্দের অপেক্ষায় আছি।’ 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা সজাগ রয়েছেন ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকাগুলির বিষয়ে। প্রয়োজন হলেই ওষুধ, স্যালাইন নিয়ে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু ওই অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা সমাধানে আমাদের স্বল্প পরিসরের সেবা কোনো কাজেই আসছে না। ওই এলাকার প্রকৃতি দূষিত হয়ে অধিবাসীদের জীবন-জীবিকার ওপর নিতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ কারণে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’ 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের থানচি উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী শুভংকর মণ্ডল বলেন, এই অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় ওই অঞ্চলে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য অবকাঠামো তৈরি বা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তবে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে ও সমন্বয় হলে সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত