Ajker Patrika

চমেক হাসপাতাল: বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেন দিতে অবহেলা, নবজাতকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বকশিশ না পেয়ে নার্স ও আয়ার অবহেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত আট দিনের এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নবজাতক মারা যায়।

এই ঘটনায় ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা আয়াদের তাৎক্ষণিক সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মারা যাওয়া নবজাতক কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুল বুনিয়া এলাকার বেলাল উদ্দিনের সন্তান। ৭ মার্চ চকরিয়া উপজেলার বেসরকারি জমজম হাসপাতালে তাঁর জন্ম হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৯ মার্চ তাঁকে চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

নবজাতকের খালা মোসাম্মৎ শামীমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ ছিল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেনে পানি শেষ হওয়ায় বাচ্চাটি এমন করছিল বলে মনে হওয়ায় আমি তখন দ্রুত ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা নার্সদের জানাই। তাঁদের অক্সিজেনে পানি সরবরাহের কথা বলি। তখন নার্সরা আমাকে বলেছিল এটা আমাদের কাজ না—এ সময় তিনি মাসিকে (আয়া) দেখিয়ে দেন। প্রথমে আমি এক মাসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত বলে চলে যায়। আরেক মাসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ২০০ টাকা বকশিশ চান। অনেকক্ষণ বকশিশের টাকা না পেয়ে বাচ্চাটিকে ওইভাবে ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরে বকশিশের টাকা দিলে অক্সিজেনে পানি দেওয়া হয়।’

শামীমা আরও বলেন, ‘শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বাচ্চা ঠিক ছিল। ৭টার পর ওয়ার্ডের নার্স ও আয়ারা এসে রোগীর সবাইকে বাইরে বের করে দেন। তখন আমি বাচ্চাটার অক্সিজেনে পানি শেষ বলে নতুন করে পানি দেওয়ার কথা বলি। আয়াকে জানালে তিনি বকশিশ চান। তখন বকশিশ দিতে পারিনি। ওই সময় ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন নিরাপত্তাকর্মী এসে রোগীর স্বজনদের সবাইকে জোর করে বাইরে বের করে দেন। দুই ঘণ্টা পর ৯টা ৫০ মিনিটে আমাদের ওয়ার্ডে ঢুকতে দেওয়া হয়। ওয়ার্ডে ঢুকে আমি বাচ্চাকে দেখতে না পেয়ে নার্সদের জিজ্ঞাসা করি। পরে তাঁরা বাচ্চাকে মৃত অবস্থায় আমার হাতে তুলে দেয়।’

স্বজনেরা জানান, বাচ্চার মা এমনিতে অসুস্থ। বাচ্চা মারা যাওয়ার কথা শুনে সে আরও অসুস্থ হয়ে গেছে।

শিশুটির বাবা বেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিবার অক্সিজেন লাগানোর জন্য ২০০ টাকা করে চাওয়া হয়। আজ টাকা না দেওয়ায় আমার সন্তানের জীবন চলে গেল। আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে চলি। প্রতিবার ২০০ টাকা করে কই পাব? টাকা না পেলে ওদেরকে ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে গেলেও রোগীর কাছে আসে না।’

নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামীমা জাহানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ওই নবজাতক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এখানে ভর্তির পর থেকেই তাঁকে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছিল। শনিবার ওই নবজাতক মারা যাওয়ার আগে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল বলে জানতে পেরেছি।’

অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘বাচ্চাটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অক্সিজেনে পানি শেষ বলে তাঁরা যে অভিযোগ করেছে তা প্রাথমিকভাবে সত্য নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সাধারণত সংকটাপন্ন রোগীকে সব সময়ই অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।’

তবে পরিচালক বলেন, ‘এরপরও ঘটনাটি তদন্তের জন্য বিভাগীয় প্রধানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া দায়িত্বে থাকা আয়াদের অপসারণ করা হয়েছে। এরা আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ওয়ার্ডে কাজ করতেন।’

একাধিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে বকশিশ ছাড়া কোনো সেবা না পাওয়াসহ নানা হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া এই ওয়ার্ডের রোগীদের জন্য বরাদ্দ ওষুধ চুরিসহ দালালদের দৌরাত্ম্য অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত