Ajker Patrika

এক দশক ধরে স্বেচ্ছায় কবরস্থান পরিষ্কার করেন ইউসুফ তালুকদার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬: ৪৮
এক দশক ধরে স্বেচ্ছায় কবরস্থান পরিষ্কার করেন ইউসুফ তালুকদার

৯৮ বছর বয়সী মো. ইউসুফ তালুকদার। সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়কের পাশে রোদের মধ্যে মাথায় গামছা পেঁচিয়ে বসে আপন মনে কবরস্থান পরিষ্কার করছেন। তবে নিজ বাড়ি কিংবা আত্মীয়ের কবর নয়, পাশের পাথালিয়া গ্রামের মিজি বাড়ির কবর। বিগত এক দশক তিনি শুধু কবরস্থানই নয়, এলাকার সড়কের পাশে থাকা অপ্রয়োজনীয় গাছ ও আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ করে আসছেন। কিন্তু তিনি এই কাজের বিনিময় কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। 

ইউসুফ তালুকদার চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের কল্যান্দি গ্রামের তালুকদার বাড়ির মৃত ওসমান গণি তালুকদারের ছেলে। 

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে তাঁর এই ব্যতিক্রম কাজ দেখে খানিকটা থমকে যাই। দেখি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে তিনি পরিষ্কার করার কাজটি শেষ করলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে হাজির হলেন গ্রামের নিখিল চন্দ্র দে। তিনি কবর থেকে পরিষ্কার করা ঘাসগুলো একসঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। 

নিখিল চন্দ্র দে বললেন, ‘আমি নিজেও একজন কৃষক। আমার দুটি গবাদিপশু আছে। যে কারণে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ঘাসগুলো নিয়ে যাচ্ছি। আমার জানা মতে, তিনি কল্যান্দি ও পাথালিয়া গ্রামের কবর গত এক দশক নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করে আসছেন।’ 

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কল্যান্দি গ্রামের প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশে যাওয়ার আগ থেকেই ইউসুফ চাচাকে এই কাজ করতে দেখেছি। তিনি এলাকার প্রায় বাড়ির কবর বছরে একাধিকবার পরিষ্কার করে দেন। তিনি আমাদের এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। খুবই নিরিবিলি মানুষ। কারে সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে নেই। নিজ উদ্যোগে এই ধরনের কাজ করা বর্তমান সময়ে খুবই কম পাওয়া যায়। দেখা হলে আমাদের খুবই স্নেহ করেন।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ইউসুফ তালুকদার। দুই ছেলে ও দুই কন্যার জনক। স্ত্রী ৯ বছর আগে মারা গেছেন। একসময় তিনি পাশের সফরমালী বাজারে ধান ও চালের ব্যবসা করতেন। সন্তানেরা বড় হওয়ার পর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ২০০২ সালে হজ করেছেন। এখন কল্যান্দি গ্রামের ফজর আলী মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি সময় বাড়িতে থেকেই ইবাদত করেন।

ইউসুফ তালুকদার বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে কানে খুব কম শোনেন। নিকটে গিয়ে জানতে চাওয়া হলো কেন এই কবর পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কবরস্থানের নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা আসতে চায় না। যে কারণে ময়লা-আবর্জনা হয়ে থাকে। এলাকার যারা মার গেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই আমার পরিচিত এবং একসঙ্গে চলাফেরা ছিল। নিজ গন্তব্য একই স্থানে, এটি মনে করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে চলে আসি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত