Ajker Patrika

একই ফিলিং স্টেশনে ফের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ২, তদন্তে কমিটি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
বুধবার ভোর ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীনলীফ ফিলিং স্টেশনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
বুধবার ভোর ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীনলীফ ফিলিং স্টেশনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের একটি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে গিয়ে বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও একজনে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার আকতার হোসেন।

আজ বুধবার ভোর ৪টার দিকে শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীনলীফ ফিলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই মাস আগেও এই স্টেশনে অন্য একটি বাসে একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনজনের প্রাণহানি ঘটে, আহত হন ২০ জন।

নিহতেরা হলেন—পৌরসভার সাহাপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (২২) ও রামগতির চরসীতা এলাকার সাহাবুদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন (৩৯)। গুরুতর আহত অবস্থায় এখনো দুজন নোয়াখালী ও একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে আল মদিনা পরিবহন নামে একটি বাস গ্রীনলীফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে যায়। এ সময় বাসে গ্যাস দেওয়ার সময় হঠাৎ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। পরে চারদিকে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে গেলে স্টেশনে থাকা সিএনজি চালকেরা ছোটাছুটি করে। এ সময় পাম্পের পাশে থাকা রংমিস্ত্রি আবুল কালাম ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে নোয়াখালী নেওয়ার পথে মারা যান বাসচালক রুবেল হোসেন। আবুল হোসেন, নাইম উদ্দিন ও হোসেন আহমেদ নামে তিনজন গুরুতর আহত হয়।

এ দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে আহত ও নিহত দুজনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় বাসিন্দা নিশান ও সিএনজি চালক সেলিম উদ্দিন বলেন, ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করার কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সিলিন্ডারের মান যাচাই-বাছাই না করে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। কোনো নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না।

একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্কিত পরিবহন চালকসহ এলাকাবাসী। দুই মাসের ব্যবধানে একই স্টেশনে বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না প্রশাসন ও গ্যাস পাম্প কর্তৃপক্ষ। তাই তদন্ত করে পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিক্ষুব্ধ চালকেরা।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগের ঘটনার তদন্ত মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডারের সত্যতা মিলছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। দুই মাসের ব্যবধানে একই স্টেশনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি সড়কে যেন কোনো ধরনের ফিটনেসবিহীন পরিবহন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে না পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ওই কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আহত ও নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।’

এর আগে লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডারের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে একজন মারা যায়। তিনজন আহত হয়। তবে বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটনাস্থলে একজন মারা যান। আহতদের মধ্যে দুজনের পা ও একজনের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাতে এই গ্যাস পাম্পে মেঘনা পরিবহন নামে একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সদর উপজেলার চরমনসার বটু মিয়ার ছেলে সুমন হোসেন, বাঞ্ছানগর এলাকার সুজা মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া ও হৃদয় হোসেনসহ তিনজন মারা যায়। এ সময় আহত হয় ২০ জন। এই নিয়ে গত দুই মাসে এই গ্যাস পাম্পে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত