Ajker Patrika

পুলিশ বন্ধুর সহায়তায় স্ত্রীকে খুন, পরে পালিয়ে যান দুবাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
পুলিশ বন্ধুর সহায়তায় স্ত্রীকে খুন, পরে পালিয়ে যান দুবাই

চট্টগ্রামে দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে গিয়ে খুনের পর তাঁর মরদেহ একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় ফেলে রেখে বিদেশে পালিয়েছেন যান স্বামী। এর আগে নিহত গৃহবধূর স্বামী তাঁর পুলিশ বন্ধুসহ চারজন একসঙ্গে এই খুনের ঘটনা ঘটান।

আজ শনিবার সকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন।

গত ৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের আনোয়ারার বৈরাগ এলাকার চায়না ইকোনমিক জোন অফিসের পূর্ব পার্শ্বে একটি পাহাড় ঘেরা পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ড থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। পরে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় আমেনা বেগম নামের ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই।

এই ঘটনায় করা মামলার তদন্তভার নেয় পিবিআই। ঘটনার পর খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়—নগরের ডবলমুরিং থানার সুলতান আহমেদের ছেলে জাহেদ নাবিদ (৩০), মো. সোহেল (৩৫) ও আনোয়ারার বৈরাগ এলাকার ইরফান হোসেনকে (২৯)।

এদের মধ্যে ইরফান রাঙামাটি পার্বত্য জেলার গুলশাখালী পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। ২১ অক্টোবরের পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস।

পুলিশ জানায়, গৃহবধূ আমেনা বেগম কুমিল্লার মুরাদনগর এলাকার কামাল উদ্দিনের মেয়ে। কয়েক বছর আগে ইয়াছিন আরাফাত নামের এক দুবাই প্রবাসী যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার বলুয়ার দিঘীর পাড় আবুল কালাম সওদাগরের কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিছুদিন আগে ইয়াছিন দেশে আসেন। স্ত্রী আমেনাকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন তিনি। পরে সেটি আমেনা জানতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বলেন, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ঘটনার কিছুদিন আগে আমেনার অগোচরে ইয়াছিন আরাফাত আরেক নারীকে বিয়ে করেন। বিষয়টি জেনে যান আমেনা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এ কারণে ভিকটিমের স্বামী ইয়াছিন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাহেদ নাবিদ ও ইরফানের সঙ্গে আমেনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।

গ্রেপ্তার জাহেদ নাবিদ ও ইরফান হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার জাহেদ নাবিদ ও ইরফান হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইয়াসিনরা সোহেলের প্রাইভেটকার ভাড়া করে। এরপর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমেনাকে প্রাইভেটকারে তুলে ইরফানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ওই পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ডে নিয়ে গিয়ে আমেনাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ সেখানে ফেলে রেখে চলে আসে তাঁরা। খুনের ঘটনার পর আমেনার স্বামী ইয়াছিন বিদেশে চলে যায়।

শাহাদাত হোসেন বলেন, পিবিআই ১৮ অক্টোবর প্রথমে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত প্রাইভেটকার চালক সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরদিন জাহেদ নাবিদ ও ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা তিনজনই আমেনা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

নিহত আমেনার বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে আনোয়ারায় নিয়ে যায় তার স্বামী। সেখানেই আমার মেয়েকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্বামী বন্ধুদের সহায়তায় খুন করেছে। তাঁকে বিদেশ থেকে ধরে এনে ফাঁসির দাবি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত