বিক্রি নেই মৃৎশিল্পের দুর্দিনে দোকানিরা

প্রতিনিধি, রামগড় (খাগড়াছড়ি)
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ০০

করোনা মহামারির প্রভাবে খাগড়াছড়ির রামগড়ে মৃৎশিল্পের দোকানে বিক্রি কম। এতে দোকানিরা দুর্দিন পার করছেন। অনেকে দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছে।

দোকানিরা বলেন, মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে এসেছে। ব্যস্ততা তেমন নেই। মৃৎশিল্পের ব্যবসা একপ্রকার উৎসব কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কিন্তু করোনায় সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। সরকারি কোনো প্রণোদনাও পাননি।

রামগড় বাজারের মধ্য গলিতে কয়েক বছর আগেও মৃৎশিল্পের ১০-১২টি দোকান ছিল। এখন সেখানে আছে মাত্র দুটি দোকান। দোকানগুলোর ভেতর বেশির ভাগ অংশই ফাঁকা। দোকানগুলোর ছোট একটু অংশে হাঁড়ি, পাতিল, খোলা ও মাটির ব্যাংক রাখা হয়েছে। নেই মাটির তৈরি আধুনিক কোনো শিল্পকর্ম।

মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন। তাঁর বাবাও এই ব্যবসা করতেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। দোকানে বিক্রি নেই বললেই চলে। প্রতি মাসে ১২০০ টাকা দোকান ভাড়া দিতেই কষ্ট হয়। সংসারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন। তিনি বলেন, এমন দুর্দিন আর আসেনি। এখন দৈনিক ৫০-৬০ টাকার বিক্রি হয় না। সংসারের খরচ জোগাতে তাঁকে ভাড়ায় রিকশা চালাতে হয়। এই করোনা মহামারিতেও বাজার পরিচালনা কমিটি কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ত্রাণ পাননি।

আরেক ব্যবসায়ী মনা বড়ুয়া জানান, ‘এক সময় আমাদের এই গলিতে ১০-১২টি দোকানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হতো। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। প্লাস্টিক ও মেলামাইনের পণ্যের সহজলভ্যতা এবং টেকসই হওয়ায় মৃৎশিল্পের ওপর মানুষের আকর্ষণ কমে যায়। বর্তমানে খোলা, মাটির ব্যাংক ও দইয়ের পাত্র বিক্রি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছি।’ তিনি আরও বলেন, পাশের জেলা ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকা থেকে তাঁরা মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে আনেন। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এবং পয়লা বৈশাখে তাঁদের বিক্রি কিছুটা জমজমাট থাকে। করোনায় বিক্রি একদম না থাকায় দোকানে কোনো নতুন পণ্য তুলতে পারছেন না। এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছেন।

রামগড় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাশেম খাঁ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার থেকে অনুদান না দিলে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা বলেন, মৃৎশিল্প ব্যবসায়ীদের দুর্দশার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অনুদানের জন্য আবেদন করলে তিনি তাঁদের পাশে থাকবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত