আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও কারাগারে থাকা আসামির আপিল শুনানি হয়নি। তবে দ্রুত শুনানি শুরুর আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় বিচারিক ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। ওই রায়ে ১৯ জনকে ফাঁসি, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগারে থাকা আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য বিচারিক ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টে নথি পাঠান। কিন্তু প্রায় তিন বছরে শুনানি শুরু হয়নি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ হচ্ছিল। সমাবেশের প্রায় শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান ২৪ জন। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী আরও দুটি মামলা করেছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই বিদেশি শক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এরপর এই মামলার তদন্তে জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে নতুন নাটক সাজান তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু গণমাধ্যমে এই আষাঢ়ে গল্প ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে তখনকার চারদলীয় জোট সরকার। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
ওই বছরই জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। এরপর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করে। আদালত মঞ্জুর করলে তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির নেতা তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
২১ আগস্টের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাই জনস্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হবে, এটাই আশা করেছিল সবাই। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা ইতিমধ্যে দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হয়েছে হাইকোর্টে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে সময় লাগছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি একটি বড় মামলা এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই পেপারবুক যাচাই-বাছাই শেষ হলে চূড়ান্ত করে শুনানির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঘটনার ১৪ বছর পর নৃশংস গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা-কর্মীদের ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এই রায় দেন।
হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক দুই আইজি মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ায় দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় দুই বছর করে এবং কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় দণ্ডবিধির ২১৭ ধারায় আবার দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আবার অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক (খালেদা জিয়ার ভাগনে), লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মাওলানা তাজউদ্দীনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় এঁদের প্রত্যেককে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খানকেও অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার দায়ে দুই বছর এবং অপরাধীকে রক্ষার ব্যবস্থা করায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে এই দুজনকে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার প্রথম দিকের (বিএনপি আমলে) তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক আইজিপি খোদা বখ্শ চৌধুরী, সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে দণ্ডবিধির ২১৮ ধারায় (অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর অপরাধ) দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় (কারও মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে বাধ্য করা) তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলায় তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ আসামি পলাতক ছিলেন রায়ের সময়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামি মো. ইকবাল গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন পলাতক রয়েছেন ১৭ আসামি। তাঁরা আপিল করার সুযোগ পাননি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন মো. হানিফ ও মাওলানা তাজউদ্দীন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, রাতুল বাবু, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক। এ ছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, এ টি এম আমিন, সাবেক ডিআইজি খান হাসান সাঈদ, সাবেক এসপি মো. ওবায়দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকি ৩২ আসামি কারাগারে ছিলেন। এঁদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ৩১ জনের পক্ষে করা আপিল ও ১৯ জনের ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে।
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন) এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুস সালাম, তাজউদ্দীন (উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিনেতা ইউসুফ ভাট ওরফে আবদুল মাজেদ ভাট (পাকিস্তানি), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার নেতা আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জি এম, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি (মুফতি হান্নানের ভাই), আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের (তাজউদ্দীনের ভায়রা), হুসাইন আহম্মেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। উভয় মামলাতেই এই ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, হুজি নেতা শাহাদত উল্লাহ জুয়েল, আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর হুমায়রা ওরফে পীর সাহেব, সাব্বির আহমেদ ওরফে হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার), মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, মো. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু ওরফে রাতুল (পিন্টুর ভাই)। দুই মামলাতেই এই ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও কারাগারে থাকা আসামির আপিল শুনানি হয়নি। তবে দ্রুত শুনানি শুরুর আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় বিচারিক ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। ওই রায়ে ১৯ জনকে ফাঁসি, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগারে থাকা আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য বিচারিক ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টে নথি পাঠান। কিন্তু প্রায় তিন বছরে শুনানি শুরু হয়নি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ হচ্ছিল। সমাবেশের প্রায় শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান ২৪ জন। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী আরও দুটি মামলা করেছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই বিদেশি শক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এরপর এই মামলার তদন্তে জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে নতুন নাটক সাজান তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু গণমাধ্যমে এই আষাঢ়ে গল্প ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে তখনকার চারদলীয় জোট সরকার। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
ওই বছরই জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। এরপর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করে। আদালত মঞ্জুর করলে তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির নেতা তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
২১ আগস্টের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাই জনস্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হবে, এটাই আশা করেছিল সবাই। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা ইতিমধ্যে দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হয়েছে হাইকোর্টে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে সময় লাগছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি একটি বড় মামলা এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই পেপারবুক যাচাই-বাছাই শেষ হলে চূড়ান্ত করে শুনানির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঘটনার ১৪ বছর পর নৃশংস গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা-কর্মীদের ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এই রায় দেন।
হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক দুই আইজি মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ায় দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় দুই বছর করে এবং কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় দণ্ডবিধির ২১৭ ধারায় আবার দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আবার অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক (খালেদা জিয়ার ভাগনে), লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মাওলানা তাজউদ্দীনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় এঁদের প্রত্যেককে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খানকেও অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়ার দায়ে দুই বছর এবং অপরাধীকে রক্ষার ব্যবস্থা করায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে এই দুজনকে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার প্রথম দিকের (বিএনপি আমলে) তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক আইজিপি খোদা বখ্শ চৌধুরী, সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে দণ্ডবিধির ২১৮ ধারায় (অপরাধীকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর অপরাধ) দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় (কারও মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে বাধ্য করা) তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলায় তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ আসামি পলাতক ছিলেন রায়ের সময়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আসামি মো. ইকবাল গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন পলাতক রয়েছেন ১৭ আসামি। তাঁরা আপিল করার সুযোগ পাননি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন মো. হানিফ ও মাওলানা তাজউদ্দীন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, রাতুল বাবু, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক। এ ছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, এ টি এম আমিন, সাবেক ডিআইজি খান হাসান সাঈদ, সাবেক এসপি মো. ওবায়দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকি ৩২ আসামি কারাগারে ছিলেন। এঁদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ৩১ জনের পক্ষে করা আপিল ও ১৯ জনের ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে।
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন) এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুস সালাম, তাজউদ্দীন (উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিনেতা ইউসুফ ভাট ওরফে আবদুল মাজেদ ভাট (পাকিস্তানি), কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার নেতা আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জি এম, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি (মুফতি হান্নানের ভাই), আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের (তাজউদ্দীনের ভায়রা), হুসাইন আহম্মেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। উভয় মামলাতেই এই ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, হুজি নেতা শাহাদত উল্লাহ জুয়েল, আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর হুমায়রা ওরফে পীর সাহেব, সাব্বির আহমেদ ওরফে হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার), মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, মো. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু ওরফে রাতুল (পিন্টুর ভাই)। দুই মামলাতেই এই ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রীপদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন , দীর্ঘদিন সংখ্যালঘুদের ‘ইন্ডিয়ার দালাল’ ও ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আর জ্বালানো যাবে না।
১৪ মিনিট আগেবাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং চোরাচালান বন্ধে বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে টহল শুরু করেছে বিজিবি। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে চোরাচালানের জোন বলে খ্যাত সীমান্ত সড়কের ৪২ নম্বর পিলার থেকে ৫৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত আট কিলোমিটার এলাকায় টহল দিচ্ছেন বিজিবির
৩৮ মিনিট আগেবাগেরহাটের কচুয়ায় ‘চলো পাল্টাই’ সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা বিনা লাভের বাজার চালু করেছে। খোলা বাজারের চেয়ে ১০-২০ টাকা কমে আলু, পেঁয়াজ, ডালসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
১ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
১ ঘণ্টা আগে