‘আমরা তো এতিম হয়ে গেলাম’ বললেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘আমরা তো এতিম হয়ে গেলাম। এই যে মানুষটি সারা জীবন স্বাস্থ্য খাতে, সমাজ সচেতনতায়, রাজনৈতিক সচেতনতায়, নিরীহ মানুষের সহায়তায় সারা জীবন বিসর্জন করে গেলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা সেবা নিতে যাননি। ওনার মত নিঃস্বার্থ লোক, হাজার গরিব দুঃখীর জনপ্রিয় মানুষ, আর হয় না। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জানাজায় অংশ নিয়ে এভাবেই বলছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু তাহের। 

আজ শুক্রবার সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বেলা ৩টায় দাফন করা হয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ। এর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ মাঠে বেলা আড়াইটার সময় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ডা. জাফরুল্লাহর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষক তানিয়া আহমেদ তন্নী। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি এখন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার আদর্শকে তার দিকনির্দেশনাকে আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। যখন শিক্ষার্থী ছিলাম তখনো দেখেছি, আবার শিক্ষক হওয়ার পরেও দেখেছি। আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু থেকে গেছে তাঁর আদর্শ তার চিন্তাধারা, তাঁর সব কিছুই। আমি যা ধারণ করেছি, যা শিখেছি, আমি যাতে আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেই জিনিসগুলো দিয়ে যেতে পারি। আজ তাঁর বিদায় দিনে আমি সেটাই আশা করছি, সেটাই আমার ইচ্ছা সেটাই আমার চাওয়া।’  

হুইলচেয়ারে করে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার অনিল ভৌমিক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মত প্রতিবন্ধী একজন মানুষকে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই পদে বসিয়েছেন। আমি সাধারণ কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম প্রায় ৩৭ বছর আগে। আমার কাছে তিনি ভগবানের মত। তিনি একজন মানুষরূপী দেবতা।’

সাভারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পর মানুষে ঢল। ছবি: আজকের পত্রিকাগণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মানব সম্পদ বিভাগের মানব সম্পদ উন্নয়ন সহকারী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি যে নেই তা শুনতেই আমার মনে হয়েছে আমার মাথার ওপর আকাশ নেই। আমার পায়ের নিচে মাটি সড়ে গিয়েছে।’

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান ডা. শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যে পড়াশোনা করে ডাক্তাররা যা শিখে তা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে সম্ভব না। স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলনসহ সকল বিষয় আমরা পড়াশোনার মধ্যে শিখেছি এবং ছাত্রদেরও শিখাই। ডা. জাফরুল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে লাভের চিন্তা না করে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে হয়। তিনি আমাদের বলেছেন, আগে ভালো মানুষ হতে হবে পরে ডাক্তার। এভাবে তো কেউ শেখান না। আমরা চেষ্টা করব এই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে। এমন শিক্ষক, এমন ব্যক্তি আর পাওয়া যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত