বিশ্ব ইজতেমায় সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ১৬
Thumbnail image
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দাওয়াত ও তাবলিগের উলামাকেরাম ও সাধারণ সাথীবৃন্দ’ কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তাবলিগের সাদপন্থী দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ সাথিবৃন্দ। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ সাথিবৃন্দ’ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, ‘দাওয়াতে তাবলিগ বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ সংগঠন। এই দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ-কোটি মানুষ ইসলামের পথে এসেছেন এবং হেদায়েত লাভ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এই দাওয়াতি সংগঠনের বাৎসরিক সম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমা প্রায় ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত “জুবায়েরপন্থী” তাবলিগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।’

তিনি বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের আয়োজিত প্রোগ্রাম থেকে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অথচ আমরা ৩ নভেম্বর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। তবে জুবায়েরপন্থীদের উসকানিতে কতিপয় অদূরদর্শী আলেম আপসমূলক সমাধানে না এসে তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমার ইস্যুতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন এবং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করছি। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে সাতটি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব দিচ্ছি।’

শর্তগুলোর বিষয়ে মুফতি আজিম উদ্দিন জানান, দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানি ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমগণ বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন; সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন; গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন এবং এটি রেকর্ড ও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে; সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন; বিতর্কটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে অনুষ্ঠিত হবে এবং বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু পূর্বের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থীরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা সাত বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ করে নিয়েছে। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। পূর্বের সরকারের সঙ্গে বসার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি না থাকলেও এই বৈষম্যবিরোধী সরকারের সঙ্গে বসতে আপত্তি কেন?’

পরে মুফতি আজিম উদ্দিন ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ৭ বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাযের অনুসারী মূলধারার তাবলিগি সাথিদের বুঝিয়ে দেওয়া; কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথিদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া; ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে মূলধারার দুজন সাথিকে হত্যা ও পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউ মার্কেটে ৩ জন সাথিকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথিকে মারাত্মক আহত করার দায়ে জুবায়েরপন্থীদের নামে দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং সারা বাংলাদেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয় এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামিয়া কাসিফুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, শাইখুল হাদিস মুফতি শফিউল্লাহ, মাওলানা আরিফুর রহমান আরিফ, মুফতি মোয়াজবিন নুর প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত