Ajker Patrika

সন্তানের শোকে বেনু বেগমের অশ্রু ফুরিয়ে গেছে 

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০: ১৯
সন্তানের শোকে বেনু বেগমের অশ্রু ফুরিয়ে গেছে 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ষাটোর্ধ্ব বেনু বেগম পুত্রশোকে এখন পাগলপ্রায়। চোখের জল, বুকফাটা কান্না—সবই যেন ফুরিয়ে গেছে তাঁর। একমাত্র সম্বল ছেলে পলাশের ছবি বুকে চেপে মাঝে মাঝেই ডুকরে উঠছেন। বিলাপ করে বলছেন, আমার অসুখের খবর হুইনা বাড়ি আবার নইছাল। পোলা আইলো। লাশ অইয়া। মিরপুরে গন্ডগোলে কেরাযে আমার পোলাডারে গুলি কইরা মারলো, আল্লায় জানে। 

পলাশের পুরো নাম ফিরোজ তালুকদার পলাশ। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ঘাটান্দি গ্রামে তাঁর বাড়ি। ৩৮ বছর বয়সী পলাশ ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। স্ত্রী রেশমা আর একমাত্র মেয়ে রাইকাকে (৬) নিয়ে সাত বছর ধরে তিনি মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। ১৯ জুলাই মিরপুরেই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

পাঁচ মাস আগে পলাশের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছোহরাব হোসেন তালুকদার মারা যান। এরপর থেকে প্রত্যেক শুক্রবার বাড়ি এসে মাকে দেখে যেতেন পলাশ। 

বিলাপ করে পলাশের মা বেনু বেগম বলেন, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে আমার সাথে পলাশের মোবাইলে কথা হয়। শরীরের দুর্বলতার কথা শুনে আমাকে দুইটা ডিম সিদ্ধ করে খেতে বলে। আধঘণ্টা পরে আবার ফোন করে খবর নেয়, ডিম খেয়েছি কি না। আর বলে, মা, আমি আজই আসতাছি।’ 

এই কথাগুলোই ছিল মায়ের সঙ্গে পলাশের শেষ কথা। সেদিন দুপুরের পরে মিরপুরের একটি হাসপাতাল থেকে বেনু বেগমকে ফোন করেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে পলাশ হাসপাতালে আছেন। পরে পুত্রবধূ রেশমার মোবাইলে যোগাযোগ করলে জানা যায়, পলাশ ততক্ষণে মারা গেছেন। 

ডুকরে উঠে বেনু বেগম বলতে থাকেন, ‘আমার পোলা আমার কাছে আইলো লাশ অইয়া। আর কোনো দিন আমার খোঁজ নিবো না। আর কেউ আমার পোলারে আইনা দিবার পাবো না। যে পোলায় আমারে মাটি দিবো। হেই পোলারেই মাটি দিয়াইলাম।’

পলাশের দাদা জসিম উদ্দিন তালুকদার জানান, ভূঞাপুর পৌরসভার ওয়ার্ড বিএনপির নেতা হিসেবেও পরিচিতি ছিল পলাশের। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। ছোট ভাই টুটুল প্রাইভেট কার চালক। তাঁদের বাবা ছোহরাব আলী তালুকদার মারা যাওয়ার পর মা বেনু বেগম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল ছেলে পলাশও। 

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ১৯ জুলাই গভীর রাতে পোস্টমর্টেম ছাড়াই একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পলাশের লাশ নিয়ে আসি। তাঁর বুকে গুলি লেগেছিল। ২০ জুলাই সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত