অভিযানে যাচ্ছি, দোয়া করো, রাতে মাকে ফোনে জানিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট তানজিম

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০: ১৬
Thumbnail image

‘আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বলল, ‘‘মা, আমি অভিযানে যাচ্ছি, দোয়া করো। শেষ করে তারপর কল দিবনি’’, ছেলে আর কল দিল না। আমার ছেলে ছিল আত্মা। আমার হৃদয়। আমার কলিজা। তারে সবাই ভালো মানুষ হিসেবে চিনত। মৃত্যুও তারে চিনা নিল। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ 

বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ারের মা নাজমা আক্তার খান। 

আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন নিহত হন। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকার গ্রামে। 

নিহত সেনা কর্মকর্তার মা ও স্বজনেরা জানান, পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন। 

নির্জনের বড় বোন তাসনুভা সরোয়ার সূচি বলেন, ‘গতকাল রাতে নির্জন আমাকে কল দিয়ে বলল, ‘‘আপু, অক্টোবরের ১ তারিখে আমার জন্মদিন, সেদিন আমি ছুটিতে আসব। তখন আমাকে কী উপহার দিবা?’’ আমি জানতাম যে নির্জন অনেক পশুপাখি পছন্দ করত, তাই আমি নির্জনকে বলেছিলাম, জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করব। সেই পাখি আর গিফট করা হলো না।’

এ সময় সূচি বলেন, ‘আমার ভাই ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেত। সে জন্য সে ভালোভাবে কাজ শুরু করেছিল। আমরা আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল ফোন করে আমাকে বলল, ‘‘আপু, আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে, আমি মাংস পিঠা খাব।’’ আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না আমার ভাইটাকে। আমার ভাই বলল, ‘‘আপু, আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি, দোয়া করো।”’ 

নির্জনের বাবা ছারোয়ার জাহান বলেন, ‘সকালে কল আসে, নির্জন মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কী থেকে কী হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিল আমার ছেলে। সে-ও এখন হারিয়ে গেল।’

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের মরদেহ আজ মঙ্গলবার বিকেলে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইলে আনা হয়। টাঙ্গাইল সদর থেকে ফ্রিজিং কারে তাঁর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গেলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পরে বাদ আসর বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।

ঘাটাইল সেনানিবাসের ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান, যমুনা ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মামুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক লোক জানাজায় অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত