Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: হত্যা মামলার আসামি প্রতারক সিকদার লিটন গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতারক সিকদার লিটন। ছবি: সংগৃহীত
প্রতারক সিকদার লিটন। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে একাধিক মামলার আসামি সিকদার লিটন (৪৩) নামের এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আলফাডাঙ্গা থানার পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শৈলেন চাকমা।

গ্রেপ্তার সিকদার লিটন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। তিনি ঢাকার কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাসহ তাঁর নামে দুটি মামলা রয়েছে ঢাকার ভাটারা ও মোহাম্মদপুর থানায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিকদার লিটনের নামে আলফাডাঙ্গা থানায় চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ ১০ থেকে ১৩টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আজ দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর থেকে তাঁকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে কুড়িল জোয়ার সাহারা কেন্দ্রীয় মসজিদের গলির মুখে পাকা রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মামলা করেন। আদালতের আদেশে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানার পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। ওই মামলায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় ২৭ নম্বর আসামি লিটন।

এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানায় মোছা. নাদিরা নামের এক নারী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট দুপুরে মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের কাছে রাস্তার ওপর জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় এ মামলা হয়। মামলায় লিটনকে মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার ১১ নম্বর আসামি তিনি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থানায় এ মামলা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিকদার লিটন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। মামলা বাণিজ্যে পারদর্শী লিটনের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর বিকাশ হিসাব নম্বরে তিন মাসে সাড়ে ২২ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।

প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় লিটনকে ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তৎকালীন ফরিদপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক দেবাশীষ কর্মকার জানিয়েছিলেন, ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনা জেলায় চাঁদাবাজি, প্রতারণা, প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ লিটনের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় চার বছর কারাগারে ছিলেন লিটন। এর আগেও বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে ছিলেন এই প্রতারক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার মামলা বাণিজ্যসহ নানা প্রতারণা শুরু করেন। লিটনের প্রতারণার শিকার ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ একটি পরিবারও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের খুরকি গ্রামের আব্দুল সোবহানের ছেলে জাবেদ গুলিবিদ্ধ হন। পরে ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ বিষয়ে জাবেদের পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। অথচ লিটন নিজেকে জাবেদের খালাতো ভাই দাবি করে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলার আবেদন করেন। এমন ঘটনা জানাজানি হলে নিহত জাবেদের ভাই মাইনুদ্দিন মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডিতে মাইনুদ্দিন উল্লেখ করেন, সিকদার লিটন নামের ব্যক্তির সঙ্গে নিহত জাবেদের পরিবারের কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি তাঁকে কোথাও কোনো মামলার আবেদন করার অনুমতি, সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়নি।

লিটনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, তাঁকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে থানাহাজতে রয়েছেন, আগামীকাল তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত